কলেজ সার্ভিস কমিশনের সেটে উত্তীর্ণ হয়ে এক আরবির ছাত্র স্বপ্ন দেখছেন কলেজে অধ্যাপক হওয়ার। অনেকে মনে করতে পারেন, এ আর এমন কী, ফি বছরই তো কতজন এমন পাশ করেন। কিন্তু যিনি আরবি ভাষার অধ্যাপক হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তাঁর নামটা তাপস সাহা।
মালদার মালাহার গ্রামের বাসিন্দা তাপসের এখনও ঘুম ভাঙে আজানের সুরে, মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনিতে। মাত্র বছর দুয়েক হলো আরবি ভাষায় সেট পরীক্ষা চালু হয়েছে। এরই মধ্যে তাপস আরবিতে সেট পরীক্ষায় ৬৬.৩৩ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করে অনেকের নজর কেড়েছেন তিনি।
তথাকথিত হিন্দু বাড়ির ছেলে হয়ে আরবি নিয়ে তাপসের পড়াশোনার লড়াইটা ছিল বেশ চ্যালেঞ্জিং। সেই চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে এখন তিনি নিজেই অধ্যাপনার দৌড়ে সামিল হয়েছেন। তবে তাপসই প্রথম নন, এর আগের বছর সেট পরীক্ষায় পাশ করেছিলেন বুল্টি সরকার নামে মালদারই এক বাসিন্দা।
তিনি এখন কর্নাটকের কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে PHD করছেন। মালাহার গ্রামের দরিদ্র কাঠের মিস্ত্রির ছেলে তাপস ছেলেবেলা থেকেই মেধাবী। তাঁর কথায়, “মসজিদের আজানের সুর, কোরান পাঠের ভাষা আমাকে ছেলেবেলা থেকে খুব টানত। সেখান থেকেই আমার আরবি শেখার শুরু।”
প্রথম প্রথম তিনিও ভাবতেন আরবি বুঝি একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের ভাষা। কিন্তু ভাষার যে কোনও ধর্ম হয় না সেটা পড়তে পড়তে বুঝেছেন তিনি। এলাকার হাইমাদ্রাসা থেকে ৮৬ শতাংশ নম্বর পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। স্কুলের গণ্ডি পেরনোর আগেই আরবির সঙ্গে তাই তাঁর পরিচয়।
এরপর ভর্তি হন কলকাতার মৌলানা আজাদ কলেজে। স্নাতকোত্তর পাশ করেন গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এখন তিনি একটি মিশনে পড়ান। বাবাকে কাঠের কাজে সাহায্য করেন। কিন্তু স্বপ্ন কলেজে পড়ানোর। নাকি তাঁর চেয়েও বেশি কিছুর?
তাপস বলেন, “আমি কেবল নিজের কথাই চিন্তা করছি না। সারা দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে হিন্দু-মুসলমানের ঐক্য সাধনে আমি কাজ করতে চাই।” তিনি বাকিদেরও বোঝাতে চান ভাষার কোনও ধর্ম, কোনও জাত হয় না। আরবি ৬টি আন্তর্জাতিক ভাষার মধ্যে অন্যতম। তাই আরবি নিয়েই তিনি গবেষণা করতে চান। আর বলেন, “আগামীতে মানুষের ভুল ধারণাগুলি নির্মূল করার চেষ্টা করব।”