২০১৮ সালে ঠিক আজকের দিনেই মেদিনীপুর থেকে মাত্র ২৬ কিলোমিটারের মধ্যে বাগঘরার জঙ্গলে মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল বাঘের। জঙ্গলে শিকার করতে ঢুকে শিকারীরাই হত্যা করেছিল বাঘটিকে। প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে মেদিনীপুর ডিভিশনের অন্তর্গত জঙ্গলে বাঘটি ছিল। ২০১৮ সালের ২ মার্চ বন দফতরের ক্যামেরায় প্রথম রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের অস্তিত্ব প্রমাণ হয়। এরই মধ্যে জঙ্গলে ঢুকে বাঘের হানায় জখম হয়েছেন বেশ কয়েকজন। বাঘের উপর নজরদারি চালাতে গিয়ে বন দফতরের গাড়িতে দমবন্ধ হয়ে মৃত্যুও হয় দুই কর্মীর। এর বেশ কয়েক সপ্তাহ পর মেদিনীপুর সদর ব্লকের বাগঘরায় হাতের নাঙালে পেয়েও ফসকে যায় বাঘ। বাঘ মৃত্যুর কারণ নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। এক্ষেত্রে বন দফতরের গাফিলতি, উদাসীনতা নিয়ে বার বার সরব হয়েছে পশু প্রেমীদের বিভিন্ন সংগঠন।
Sundarban Tourism: বেড়েছে বাঘের সংখ্য়া, ‘রয়্যাল’ দর্শনে সুন্দরবনমুখী পর্যটকরা
বাঘ মৃত্যুর পর গুড়গুড়িপাল থানায় অভিযোগও দায়ের হয়। কিন্তু, সে ঘটনাতেও কেউ গ্রেফতার হয়নি আজ পর্যন্ত।
বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রসঙ্গত, ওই দিন জঙ্গলে শিকার উৎসব ছিল। সকালেই দু’জনকে শিকারীকে জখম করে বাঘটি। তারপরেই বাঘের মৃতদেহ পাওয়া যায়। জেলা পুলিসের এক কর্তার দাবি, উপযুক্ত তথ্য প্রমানের অভাবে কাউকে গ্রেফতারও করা যায়নি। যদিও পঞ্চায়েত ভোটের ঠিক আগে এই ঘটনা নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলেই অভিযোগ ওঠে বার বার। এক্ষেত্রে শাসকদলকেই দোষে বিরোধীরা।
প্রায় সাড়ে ছ’ফুট লম্বা বাঘের মাথার খুলি ভেঙে টুকরো টুকরো হয়েছিল। তাতেই মৃত্যু হয় তার। বাঘ মৃত্যুর পরেও শিকারের চিত্র বদলায়নি জেলায়। যদিও গ্রামের একটা বড় অংশ বাঘ মৃত্যুকে ভালো চোখে নেয়নি। বিমল মাহাত, শিবু সোরেন বলেন, ‘আমাদের সমাজের সঙ্গে শিকারের একটা যোগাযোগ রয়েছে। বহু দিন ধরেই এই প্রথা চলে আসছে। তবে এটা ঠিক, জঙ্গলের বাইরে এসে বাঘটা কোনও দিন কাউক আক্রমন করেনি। বাঘটাকে মেরে ফেলা ঠিক হয়নি।’
সেই সময় মেদিনীপুরের ডিএফও ছিলেন রবীন্দ্রনাথ সাহা। বর্তমানে তিনি কনজারভেটর অফ ফরেস্ট (পার্কস ও গার্ডেন)। এই সময় ডিজিটালের পক্ষ থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আফসোস তো থাকবেই। আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়েছিল যাতে এরকম ঘটনা না ঘটে, সবাই চেষ্টা করেছিল। বাঘটাকে বাঁচিয়ে অন্যত্র সরানোর চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তা হওয়ার আগেই সব শেষ। ক্যারিয়ারের শেষদিন পর্যন্ত মনে থেকে যাবে এই ঘটনা।’
সবমহল কিন্তু একবাক্যে স্বীকার করছে, বন দফতরের চেষ্টার ত্রুুটি ছিল না। কিন্তু, এরপরেও যদি শাল মহুলের জঙ্গলে এ ভাবে বাঘ দেখা যায়, তা বাঁচানো যাবে তো? সে প্রশ্ন থেকেই যায়।
