সপ্তাহ দুয়েক আগেও শহরের বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে কোভিড রোগীর সংখ্যা ছিল প্রায় শূন্য। এখন সে সব হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডে ক্রমেই বাড়ছে রোগী। গত দু’সপ্তাহের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, দৈনিক আক্রান্ত, অ্যাক্টিভ রোগী, হাসপাতালে ভর্তি রোগী-সব সংখ্যাই এই ক’দিনে চার গুণ বেড়েছে। গত ১৩ এপ্রিল এই তিনটি সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৬৬, ৪০৩ ও ২১।
আর বুধবার স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্য বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ২৮৬ জন করোনা পজ়িটিভ হয়েছেন। বর্তমানে অ্যাক্টিভ রোগী ১৮০০ ছুঁইছুঁই এবং হাসপাতালে ভর্তি ৮৭ জন। এ দিন নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের মধ্যে ১০ জনের অক্সিজেন চলছে। তাঁদের কো-মর্বিডিটিও রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, যে সব রাজ্যে আগে করোনার প্রকোপ দেখা দিয়েছিল, সেখানে এখন ধীরে ধীরে কমছে। বাংলায় যেহেতু দেরিতে শুরু হয়েছে প্রকোপ, তাই হয়তো এখন কিছুটা বাড়বে, তার পর কমবে। আগের মতোই সবাইকে, বিশেষত বয়স্ক ও কো-মর্বিডদের সাবধানতা মানার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আইডি হাসপাতালের তথ্যও বলছে, গুরুতর অসুস্থ হয়ে প্রাণসংশয় হচ্ছে মূলত প্রবীণদেরই।
শহরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের কর্তারা জানাচ্ছেন, তাঁদের হাসপাতালে অন্য নানা চিকিৎসার জন্য আসা রোগীদের মধ্যে সামান্যতম উপসর্গ দেখলেই কিংবা বিগত কয়েক দিনের মধ্যে উপসর্গের ইতিহাস আছে জানা গেলেই করোনা পরীক্ষা হচ্ছে। কোভিড ধরাও পড়ছে অনেকের। হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যাও বাড়ছে।
পিয়ারলেস হাসপাতালের সিইও সুদীপ্ত মিত্র বলেন, ‘সপ্তাহ দুয়েক আগেও হাসপাতালে করোনা রোগী ছিল না। কিন্তু গত ১০ দিনে সাত জন ভর্তি হয়েছেন করোনা নিয়ে। এখন পাঁচ জন ভর্তি।’ আমরি হাসপাতাল গোষ্ঠীর সিইও রূপক বরুয়া জানাচ্ছেন, আউটডোরে তেমন নেই। কিন্তু ইন্ডোরে দু’রকম কোভিড রোগী দেখা যাচ্ছে।
এক, যাঁরা জ্বর নিয়ে আসছেন এবং টেস্টে করোনা ধরা পড়ছে। আর দুই, যাঁরা অন্য রোগের চিকিৎসার জন্য আসছেন, কিন্তু ভর্তির সময়ে দেখা যাচ্ছে তাঁরা করোনা আক্রান্ত। এই মুহূর্তে আমরি গোষ্ঠীর তিনটি হাসপাতাল মিলিয়ে ১৯ জন করোনা রোগী ভর্তি আছেন। দিন পনেরো আগেও সংখ্যাটা ছিল ১-২।
মণিপাল হাসপাতালের অধিকর্তা অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলছেন, ‘করোনা রোগী বাড়ছে। সপ্তাহ দুয়েক আগে এক জনও রোগী ছিল না। এখন কোভিড নিয়ে ছ’জন ভর্তি।’ মেডিকা সুপার-স্পেশালিটি হাসপাতালের সহ-প্রতিষ্ঠাতা তথা জয়েন্ট ম্যানেজিং ডিরেক্টর অয়নাভ দেবগুপ্ত অবশ্য জানাচ্ছেন, তাঁদের হাসপাতালে কমেছে করোনা রোগী। এই মুহূর্তে চার জন ভর্তি। তাঁর বক্তব্য, ‘এই দফায় রোগীদের অবস্থা তেমন গুরুতর হচ্ছে না। তিন-চার দিনেই ছুটি পেয়ে যাচ্ছেন।’
তা সত্ত্বেও মেডিকায় ১০টি কোভিড বেড রাখা থাকছে। উডল্যান্ডস হাসপাতালের সিইও তথা ম্যানেজিং ডিরেক্টর রূপালি বসু জানাচ্ছেন, বর্তমানে তাঁদের হাসপাতালে এক জনই করোনা নিয়ে চিকিৎসাধীন। তিনি বলেন, ‘ইদানীং সপ্তাহে ৩০টি আরটি-পিসিআর টেস্ট হচ্ছে। তাতে পজ়িটিভিটি রেট ২৬% থেকে কমে ১৫% হয়েছে গত এক সপ্তাহে।’