জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: বেলজিয়াম (Belgium), স্পেন (Spain), পর্তুগালকে (Portugal) হারানো হয়ে গিয়েছে। গ্রুপ পর্বে এই দলটার কাছে আটকে গিয়েছিল গতবারের রানার্স ক্রোয়েশিয়া (Croatia)। স্বভাবতই ফ্রান্সের (Frane) বিরুদ্ধে চলতি বিশ্বকাপের (FIFA World Cup 2022) দ্বিতীয় সেমি ফাইনালে নামার আগে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী মরক্কো (Morocco)। সেটা উত্তর আফ্রিকার এই দলের কোচের কথায় ও বডি ল্যাঙ্গুয়েজে একেবারে স্পষ্ট। দিদিয়ের দেশঁ (Didier Deschamps) দলের বিরুদ্ধে নামার আগে সাংবাদিক বৈঠকে এসে একেবারে গরমাগরম বক্তব্য রেখে বাজার গরম করে দিলেন ওয়ালিদ রেগরাগুইয় (Walid Regragui)।
মরক্কো এবার একাধিক বড় দলকে উড়িয়ে দিলেও, তাদের আল্ট্রা ডিফেন্সিভ ফুটবলের জন্য প্রবলভাবে সমালোচিত হচ্ছে। তাই পর্তুগালকে ১-০ গোলে হারিয়ে আফ্রিকার প্রথম দল হিসেবে শেষ চারে এলেও, তাদের শুনতে হচ্ছে কটাক্ষ। তাই ফের একবার তাঁর দলের ফুটবল স্টাইল নিয়ে নেতিবাচক প্রশ্ন করা হলে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন ফ্রান্সে জন্ম নেওয়া মরোক্কান কোচ।
তিনি বলেন, ‘আমরা যেমন ফুটবল জানি সেটাই খেলছি। একটা কথা বলুন তো, বল পজেশন বেশি থাকলে কি সত্যি কোন দলের জয়ের স্বপ্ন পূরণ হতে পারে! মানে বলতে চাইছি ৭০ শতাংশ বল পজেশন কি দুই গোলে এগিয়ে থাকার সমান? তাই যদি হয়ে থাকে তাহলে আমি ব্যক্তিগতভাবে ফিফা-র সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনোকে বলে আসব, যে দল ৬০ শতাংশের বেশি বল পজেশন রাখবে সেই দলকে এক পয়েন্ট দিয়ে দেওয়া হোক!’
এরপর তিনি ফের যোগ করেন, ‘আমরা এখানে জিততে এসেছি। তাই বল পজেশন কত থাকল সেটা নিয়ে মাথা ঘামাতে একদম রাজি নই। বল পজেশন দিয়ে নিয়ে কি ধুয়ে জল খাব! আমাদের কাছে জয় শেষ কথা। সেটা ৩০ শতাংশ বল পজেশন থাকলেও আপত্তি নেই। এক গোলে জয় থেকে যেমন তিন পয়েন্ট পাওয়া যায়, তেমনই পাঁচ গোলে জিতলেও সেই তিন পয়েন্টই আসবে। তাই নিজেদের ফুটবল স্টাইলের উপর ভরসা রেখে আরও ম্যাচ জেতার ব্যাপারে চিন্তা করা উচিত।’
ব্রিটিশ ও ইউরোপিয়ান সংবাদমাধ্যমকেও ঝেড়ে কাপড় পরিয়ে দিয়েছেন তিনি। লুইস এনরিকের স্পেনকে ছিটকে দেওয়া ওয়ালিদ রেগরাগুই এবার তিকিতাকা-র বিরুদ্ধে সরব হলেন। সটান বলে দেন, ‘স্প্যানিশরা তো খুব তিকিতাকা নিয়ে কথা বলে। তিকিতাকা খেলার মতো দক্ষ ফুটবলার থাকলে আমার কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু তিকিতাকা-র সদ্ব্যবহার না করতে পারলে কেমন অবস্থা হয় সেটা তো গত ম্যাচেই আপনারা দেখেছেন। আমরা দারুণ ফুটবল খেলছি। তবে এরপরেও ইউরোপিয়ান ঘরানা আমাদের মেনে নিতে পারছে না। একটা কথা স্পষ্ট বলে দেওয়া দরকার, আমরা কিন্তু মোটেই ইউরোপিয়ানদের জন্য ফুটবল খেলছি না। আমরা আফ্রিকার উন্নতির জন্য নিজেদের উজাড় করে দিতে এসেছি। আর সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’
এবার সামনে ফ্রান্স। ওয়ালিদ রেগরাগুইয়ের সামনে তাঁর আদর্শ দিদিয়ের দেশঁ। তাই ৫৪ বছরের ফরাসি কোচের সঙ্গে তাঁর দলকেও গুরুত্ব দিচ্ছেন ৪৭ বছরের ওয়ালিদ। ফের বললেন, ‘ফ্রান্স বনাম ইংল্যান্ড ম্যাচটার কথা ধরুন। ইংল্যান্ডের বল পজেশন বেশি থাকলেও জিতেছে কিন্তু ফ্রান্স। আর জেতাই আসল কথা। ফ্রান্স সেই ম্যাচ জিতেছে কারণ ওরা বিশ্বের সেরা দল। আমার মতে দেশঁ এই মুহূর্তে সেরা কোচ। তবে আমার মনে হয় এই ম্যাচে ফ্রান্স আমাদের বাড়তি সম্মান দেখাবে না। তেমনটা করলে কিন্তু ক্ষতি ওদের। কারণ আমরা জয় ছাড়া আর কিছুই ভাবছি না। বিশ্বকাপ জেতাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।’
ফুটবল দুনিয়াকে একের পর এক আগুনে পারফরম্যান্সে চমকে দিলেও, দলের কোচ ও ফুটবলারদের অনেক কটাক্ষ হজম করতে হয়েছে। ব্রিটিশ মিডিয়া তো শুরু থেকে এই দলটার পিছনে পড়ে ছিলই, সঙ্গে নেতিবাচক সংবাদ প্রচার করার জন্য হাত ধুয়ে নেমে পড়েছিল মরক্কোরই একাধিক সংবাদমাধ্যম। তাই এবার সেমি ফাইনালে নামার আগে কটাক্ষের জবাব দিলেন মরোক্কান ফুটবলে বিপ্লব ঘটিয়ে দেওয়া ওয়ালিদ। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে মাঠে কেমন তাঁর দল পারফর্ম করে সেটাই দেখার।