সঞ্জয় দে, দুর্গাপুর
সপরিবার অমিতের মৃত্যুর পরে কুরুড়িয়াডাঙালে তাঁর বিপুল সম্পত্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। দুর্গাপুর পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে কুরুড়িয়াডাঙাল। এক সময় সেখানকার সিংহভাগ জমিরই মালিক ছিলেন অমিতের বাবা-ঠাকুর্দা। পরবর্তী সময়ে সেই জমি বিক্রির ব্যবসায় নামে মণ্ডল পরিবার। উত্তরাধিকার সূত্রে জমি ও ব্যবসা, দুইয়েরই মালিকানা বর্তায় অমিতের কাঁধে। ফলে স্ত্রী, দুই সন্তান সহ তাঁর মৃত্যুতে ওই বিশাল সম্পত্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে চলছে কাঁটাছেঁড়া।

Durgapur Incident: ফ্যামিলি গ্রুপে মেসেজে ছেড়ে আত্মঘাতী ৪, দুর্গাপুরের পরিবারের রহস্যমৃত্যুতে নিয়োগ দুর্নীতি যোগ?
অমিতের রহস্যমৃত্যুতে সন্দেহভাজনের তালিকায় নাম রয়েছে তাঁর মা বুলারানি মণ্ডল সমেত মামার বাড়ির দিকের ২০ জন আত্মীয়ের। গ্রেপ্তার করা হয়েছে বুলারানি, মামাতো ভাই প্রশান্ত নায়েক ও মামাতো বৌদি শিলা নায়েককে। অন্যতম অভিযুক্ত মামাতো ভাই সুশান্ত নায়েক ওরফে নান্টু সহ বাকিরা পলাতক। অমিতের বাড়ি সিল করে দিয়েছে পুলিশ।

Calcutta High Court: দুর্গাপুরে একই পরিবারের ৪ জনের মৃত্যুতে নিয়োগ দুর্নীতির ছায়া! CBI তদন্তের আর্জি হাইকোর্টে
কিন্তু তাঁর বাড়ি ও বিশাল সম্পত্তির প্রতি কোনও আগ্রহ নেই অমিতের জেঠা, কাকা ও শ্বশুরবাড়ির কারও। অমিতের বাবার দিকের আত্মীয়রা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, সমস্ত সম্পত্তি সরকার অধিগ্রহণ করে কোনও আশ্রম বা সেবামূলক প্রতিষ্ঠানকে দান করে দিক। কোনও ভাবে যেন ওই সম্পত্তি অমিতের মামার বাড়ির লোকেদের হাতে না যায়। একই বক্তব্য অমিতের শাশুড়ি নমিতা পালেরও। তিনি বলেন, ‘যে সম্পত্তির জন্য আমার মেয়ে, জামাই, নাতি, নাতনির মর্মান্তিক মৃত্যু হলো, সেই সম্পত্তি যেন অমিতের মা, বোন বা মামার বাড়ির লোকেরা না পায়। সরকার ওই সম্পত্তি নিয়ে কোনও আশ্রমকে দিয়ে দিক।’

Durgapur Incident: একই পরিবারের ৪ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় নিয়োগ দুর্নীতি যোগের অভিযোগ, গ্রেফতার ৩
এক সময় প্রায় গোটা কুরুড়িয়াডাঙালের মালিক ছিলেন অমিতের ঠাকুর্দা হরিপদ মণ্ডল, বাবা নরেশ মণ্ডল ও তাঁর ভাইয়েরা। এমনকী এই অঞ্চলের জমির খাজনা তাঁরা জমা করতেন রানিগঞ্জের রাজবাড়িতে। জঙ্গলাকীর্ণ এই এলাকার উন্নয়নও হয় মণ্ডল পরিবারের হাত ধরে। পরে সেখানে জমি বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন নরেশ। জমির সঙ্গে সেই ব্যবসাও পৈতৃক সূত্রে পান অমিত। তাঁর নিজের বোন বর্ষা বিয়ের পরে থাকেন বেঙ্গালুরুতে।

কিন্তু বিপুল সম্পত্তিই কাঁটা হয়ে ওঠে অমিতের। নিজের মা বুলারানি, বোন বর্ষা ও মামার বাড়ির আত্মীয়রা সেই সম্পত্তি ও ব্যবসা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য উঠে-পড়ে লাগে বলে সুইসাইড নোটে লিখে যান অমিত। নোটে তিনি লেখেন, সম্পত্তি হাতানোর জন্য তাঁর উপর মানসিক নির্যাতন চালাচ্ছিলেন তাঁর মা, বোন ও মামাতো ভাই-বৌদিরা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পারিবারিক হিংসা থেকে মুক্তি পেতে বছর দশেক আগে কুরুড়িয়াডাঙালের মিলনপল্লিতে নিজের বাড়ি তৈরি করেন অমিত।

Anupam Dutta Murder Case : রেকি করেছিল খুনি, সাক্ষ্য দিলেন মীনাক্ষী
ভেবেছিলেন, স্ত্রী রূপাকে নিয়ে নিরুপদ্রব জীবন কাটাবেন তিনি। কিন্তু সেই বাড়িতেও চলে আসেন বুলারানি। নিয়মিত যাতায়াত শুরু হয় বোন ও মামার বাড়ির আত্মীয়দের। এরই মধ্যে দুই সন্তানের জন্ম দেন রূপা। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতির বদল ঘটেনি। উল্টে মানসিক নির্যাতন আরও চেপে বসতে থাকে অমিতের উপর। গত রবিবার ভোরে বাড়ির দোতলা থেকে দুই সন্তান, স্ত্রী সহ অমিতের দেহ উদ্ধার হয়।

Shantanu Banerjee : ‘শান্তনু নির্দোষ… এত সম্পত্তির কথা জানতাম না’, মুখ খুললেন স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা
দু’টি সুইসাইড নোটের আর একটিতে অমিত লেখেন, তাঁর মামাতো ভাই নান্টু প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। টাকার বিনিময়ে বহু অযোগ্য লোকের চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন তিনি। এমনকী ভয় দেখিয়ে বহু লোকের জমি দখল করে বিক্রির কারবারেও নান্টু জড়িত বলে নোটে অভিযোগ জানিয়ে গিয়েছেন অমিত। সিঁদুলি স্কুলের শিক্ষক নান্টু ঘটনার পর থেকে স্ত্রী, সন্তানকে নিয়ে এলাকাছাড়া। তাঁর মোবাইল বন্ধ। এদিকে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অমিতের বাবার দিকে আত্মীয় ও এলাকার বাসিন্দারা অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবিতে মোমবাতি মিছিল করেন।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *