Jiban Krishna Saha : পুকুর ছেঁচে একটি ফোন ও শোল মাছ – jiban krishna saha mobile was found after 37 hours in pond


এই সময়, কলকাতা ও বহরমপুর:সমুদ্র মন্থনে উঠেছিল অমৃত। আর ৩৭ ঘণ্টা পুকুর ছেঁচে উঠল জীবনকৃষ্ণ সাহার একটি মোবাইল। স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণের বাড়িতে শুক্রবার দুপুরে হানা দিয়েছিল সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা দুয়ারের কড়া নাড়তেই তাঁদের লুকিয়ে জীবনকৃষ্ণ দু’টি মোবাইল তাঁর বাড়ির সামনের পুকুরে ছুড়ে ফেলে দেন বলে অভিযোগ।

তারপর থেকে লাগাতার চলছিল পুকুর ছেঁচার কাজ। জল তুলে, পাঁক সরিয়ে হাতড়ে বেড়ালেও শনিবার রাত পর্যন্ত মেলেনি একটিও মোবাইলের খোঁজ। তখন থেকে কার্যত সিবিআইয়ের নজরবন্দি ছিলেন বিধায়কও। তারমধ্যে কয়েক দফায় তদন্তকারীদের সামনে অনেকটা ঘটনার পুনর্নির্মাণের ঢঙে জীবনকৃষ্ণকে কখনও বাড়ির ছাদে নিয়ে গিয়ে, কখনও বা পাঁচিলের ধারে দাঁড় করিয়ে দেখাতে হয়েছে–কোথায়, কীভাবে, হাত কতখানি উঁচু করে মোবাইল দু’টি ছুড়ে ফেলেছিলেন তিনি।

CBI Recruitment Scam: জীবনের পুকুরে এবার জেসিবি, মোবাইল খুঁজতে মরিয়া সিবিআই
শেষমেশ রবিবার সকাল সকাল ৭টা ২৫ মিনিট নাগাদ জীবনকৃষ্ণকে আবার বাড়ির ছাদে নিয়ে যান গোয়েন্দারা। ঘটনার পুনর্নির্মাণ করানোর জন্য বিধায়কের হাতে একটি ইটের টুকরো দিয়ে সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা তাঁকে পুকুরে ছুড়তে বলেন। যে জায়গায় ইটটি পড়ে, তা চিহ্নিত করে যাঁরা পুকুর ছেঁচার কাজ করছিলেন, সেই শ্রমিকদের মোবাইলের খোঁজ করতে বলা হয়।

ওই নির্দিষ্ট জায়গাতেই মোবাইলের খোঁজ করতে গিয়ে সকাল ৭টা ৩৮ মিনিট নাগাদ একটি মোবাইলের খোঁজ পান তাঁরা। এই মোবাইলটি জীবনকৃষ্ণ নিজেই ব্যবহার করতেন, নাকি সেটি তাঁর কোনও আত্মীয়ের মোবাইল, যা তিনিও ব্যবহার করতেন–সে সব তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন। পাশাপাশি এই মোবাইলটি এতটা লম্বা সময় পাঁকে-জলে ডুবে থাকায় তা থেকে প্রয়োজনীয় ডেটা উদ্ধারের জন্য হায়দরাবাদে সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।

তবে দ্বিতীয় মোবাইলটির খোঁজ রবিবার সন্ধে পর্যন্ত মেলেনি। মোবাইলের বদলে ঘোলা জল থেকে ওঠে শুধু শোল মাছ! এই মোবাইলটির খোঁজে এদিন সকালে তৃণমূলের স্থানীয় অঞ্চল সভাপতি সাধন প্রামাণিকের সাহায্য চায় সিবিআই। তাঁর তত্ত্বাবধানে সাত-আটজন বাড়তি শ্রমিক নামিয়ে জল ও পাঁকের মধ্যে তল্লাশি চালানো হয়।

Jiban Krishna Saha: জীবনকৃষ্ণ সাহার মোবাইলের সন্ধানে এবার পাঁকে তৃণমূলের বুথ সভাপতি!
নামাতে হয় মাটি কাটার জন্য ব্যবহৃত এক্সক্যাভেটর।শুক্রবার সন্ধেয় যখন থেকে পুকুর ছেঁচার কাজ শুরু হয়, তখন থেকেই লোকজন ভিড় করতে শুরু করেছিলেন। এদিন সকাল থেকে সেই ভিড় আরও বেড়েছে। তদন্তকারীরা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের নির্দেশ দেন, যাতে কোনওভাবেই এই ভিড় পুকুরে হামলে না-পড়ে।

তবে বাড়তি শ্রমিক নামিয়েও দ্বিতীয় মোবাইলটির খোঁজ মেলেনি। বড়ঞার সাবলদহ অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি সাধন প্রামাণিক বলেন,”সিবিআই আধিকারিকরা আমাকে সাহায্য করার জন্য বলেছিলেন। সেই কারণে শ্রমিককে পুকুরে নামানো হয়েছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত এদিন আমরাও মোবাইলটি খুঁজে পাইনি।”

এর আগে এদিন সকাল সওয়া ৯টা নাগাদ জীবনকৃষ্ণকে নিয়ে সিবিআই আধিকারিকরা পুকুর পাড়ে চলে আসেন। দ্বিতীয় মোবাইলটি কোথায় থাকতে পারে, তা দেখানোর জন্য তাঁকে বলা হয়। দুপুর দুটো নাগাদ পুকুরে তল্লাশি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর সিবিআই আধিকারিকরা নিজেদের মধ্যে একপ্রস্ত আলোচনা করেন।

ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই পুকুরে নামানো হয় এক্সক্যাভেটর। জল থেকে মাটি সরিয়ে সেখানে মোবাইল আটকে আছে কি না, তার খোঁজ চলতে থাকে।এর পাশাপাশি জীবনকৃষ্ণকে জিজ্ঞাসাবাদও চলছে। সিবিআই সূত্রে খবর, প্রথম দিকে জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে বিধায়ক সহযোগিতা করছিলেন না।

Jiban Krishna Saha CBI: সিঁদুর কৌটোয় পেন ড্রাইভ, নিয়োগ দুর্নীতির খোঁজে পুকুর ছেঁচে উদ্ধার জীবন কৃষ্ণের আরও এক মোবাইল
যদিও তিনি পরে গোয়েন্দাদের সহযোগিতা করছেন বলেই সূত্রের দাবি। শুক্রবার দুপুর থেকে রবিবার রাত পর্যন্ত প্রায় ৫৬ ঘণ্টা গোয়েন্দাদের নজরবন্দি রয়েছেন তিনি। সিবিআই সূত্রে খবর, জীবনকৃষ্ণের বাড়ির সামনে বাগান থেকে যে ৬টি ব্যাগ পাওয়া গিয়েছে, তাতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার নিয়োগ সংক্রান্ত নথিপত্র মিলেছে।

সেগুলিও পরীক্ষা করে প্রাথমিকভাবে তদন্তকারীদের অনুমান, পাঁচটি জেলার চাকরিপ্রার্থীদের নথি রয়েছে ওই ব্যাগে। তাতে চাকরি প্রাপকদের জন্য কী রেট ঠিক করা হয়েছে, তারও নথি রয়েছে বলে সূত্রের খবর। তা ছাড়া বহু জেলায় জীবনকৃষ্ণ ও তাঁর আত্মীয়-পরিচিতদের জমি এবং সম্পত্তি সংক্রান্ত কিছু হিসেবও পেয়েছেন গোয়েন্দারা।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *