এমন নজিরবিহীন পরিস্থিতিতে সুরাহা পেতে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা থানার বুনিয়াবসন গ্রামের বাইশ জন বাসিন্দা। মঙ্গলবার হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, দু’সপ্তাহের মধ্যে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শককে ওই স্কুলের জন্য শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে।
বুনিয়াবসন গ্রামটি মূলত আদিবাসী জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত। গ্রামে প্রায় এক হাজার পরিবারের বাস। আদিবাসী জনসমাজের প্রয়োজনীয়তা ও স্থানীয় মানুষের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই গ্রামবাসীদের আবেদনের ভিত্তিতে একটি জুনিয়র হাইস্কুলের অনুমোদন দেয় রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর। তবে ২০১৪ সালে স্কুল চালুর অনুমতি দেওয়া হলেও সেখানে স্থায়ী শিক্ষক পদে এত দিনেও কাউকে নিয়োগ করেনি সরকার।
গ্রামের বাসিন্দারা স্কুল পরিচালনার জন্য একটি কমিটি গঠন করেছিলেন। সেই কমিটি ২০১৭ সালে স্বপনকুমার দাস নামে একজনকে অতিথি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করে। শিবরাত্রির সলতের মতো এ তদিন তিনিই পড়াচ্ছিলেন। কিন্তু এ বছরের ৩১ মার্চ তাঁরও মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।
একজনও শিক্ষক না-থাকলে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা চলবে কী ভাবে? তাই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন গ্রামবাসীরা। অন্যতম মামলাকারী উত্তমকুমার মণ্ডলের তরফে আইনজীবী আদালতে জানান, চলতি বছরের ৩১ মার্চের পর থেকে অতিথি শিক্ষক স্বপনকুমার দাস স্কুলে আসছেন না। ওই স্কুলে এখন কোনও শিক্ষক নেই। সামনে পরীক্ষা। ফলে বিপাকে ছাত্রছাত্রীরা।
রাজ্যের আইনজীবীর উদ্দেশে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম প্রশ্ন করেন, ‘এটা কী করে সম্ভব? শিক্ষক ছাড়া ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাদান চলবে কী ভাবে?’ সরকারি কৌঁসুলি জানান, শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্ব স্কুল সার্ভিস কমিশনের। যেহেতু আদালতে মামলার প্রেক্ষিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত আছে, তাই এখনই সম্ভব হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির নির্দেশ, জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শককে ছাত্রছাত্রীদের কথা ভেবে দু’সপ্তাহের মধ্যে সাময়িক ভাবে অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে এসএসসির তরফে উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের টেটের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। পরীক্ষা হয় পরের বছর। ২০১৬ সালে ফল প্রকাশের পর ১৪৩৩৯টি পদে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। কিন্তু দু’দফায় ইন্টারভিউ হলেও প্যানেল অধরা। হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে বর্তমানে নিয়োগ প্যানেলের বিষয়টি বিচারাধীন রয়েছে।