হাতে পাওয়ার স্টিয়ারিং। পরনে পাঞ্চি শাড়ি। গলায় দলীয় উত্তরীয়। নিজেই স্করপিও ড্রাইভ করে দিনভর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে প্রচারে ছুটে বেড়াচ্ছেন ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদের ৯ নম্বর আসনের তৃণমূল প্রার্থী। চিন্ময়ী মারান্ডি অবশ্য শুধু প্রার্থীই নন, সাঁওতালি ভাষার কবিও। বছর ৪২-এর চিন্ময়ীর বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে জেলায়। সাঁওতালি, বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি, ওডিয়া বলতে পারেন অনর্গল। আর সেটাই তাঁর পাবলিক রিলেশনের অন্যতম হাতিয়ার। সেই সঙ্গে যেখানেই যাচ্ছেন, সবুজ রঙের স্করপিও-র চালকের আসনে খোদ প্রার্থীকে বসে থাকতে দেখে হাঁ করে তাকিয়ে থাকছেন গ্রামগঞ্জের মানুষগুলো।
ঝাড়গ্রাম শহরের উপকণ্ঠে রাধানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের কন্যাডুবার বাসিন্দা চিন্ময়ী। গ্র্যাজুয়েশন করেছেন। সাঁওতালি ভাষায় কবিতা লিখে সুনামও অর্জন করেছেন। ২০০৯ থেকে দিল্লির সাহিত্য অ্যাকাডেমির পাশাপাশি একাধিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত তিনি। বর্তমান রাষ্ট্রপতিকে ‘মাসি’ বলে সম্বোধন করেন এই প্রার্থী। পরিবারের একজন আবার বিজেপির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। চিন্ময়ী বলেন,’আমার খুড়শ্বশুর ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বাবুলাল মারান্ডি। আর রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু আমার মায়ের খুব ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। আমি তাঁকে মাসি বলে ডাকি।’
কিন্তু তাঁরা দু’জনেই তো বিজেপির নেতানেত্রী। আপনি তাহলে তৃণমূলে কেন?
চিন্ময়ী বলেন,’দেখুন রাজনীতিটা ব্যক্তিগত ব্যাপার।’
স্বামী কৃষ্ণচন্দ্র বর্তমানের পুরুলিয়ার বান্দোয়ানে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার। ১৯৯৮-এ তাঁর প্রথম পোস্টিং ছিল কলকাতায়। সেই সময় সাঁতরাগাছির বাড়িতে থাকতেন তাঁরা। সেই বাড়িতে বসেই কাছের একটি সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতা শুনেছিলেন চিন্ময়ী। তাঁর দাবি, ‘সেই প্রথম দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে আগ্রহী হই। কিন্তু ছেলেরা তখন ছোট ছিল বলে রাজনীতিতে আসার সুযোগ ছিল না। গতবার এলাকার সাধারণ মানুষ ও তৃণমূল নেতারা এসে আমাকে ঝাড়গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির ভোটে দাঁড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তখনই রাজনীতিতে হাতেখড়ি। এবারে দল আমাকে আরও গুরুদায়িত্ব দিয়ে জেলা পরিষদের আসনে প্রার্থী করেছে। ছেলেরা এখন বড় হয়ে যাওয়ায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে বেশি করে সময় দিতে পারছি।’
তিনি বলছেন, ‘গত পাঁচ বছরে এলাকায় রাস্তাঘাট, পানীয় জলের সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হয়েছি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঝাড়গ্রাম জেলার জন্য যে উন্নয়ন করেছেন, তা অভূতপূর্ব। আমি সেই উন্নয়নের কথাই প্রচার করছি। সাপধরা, রাধানগর, বাঁধগোড়া অঞ্চলে গিয়ে মানুষের যে সাড়া পেয়েছি, তাতে আমি জিতব এটা নিশ্চিত!’