কলকাতা সংলগ্ন এলাকা থেকে আত্মীয়-স্বজনরা এসেছিলেন ঝাড়গ্রামের জোয়ালভাঙা গ্রামের বাসিন্দা তপন সিংহের ছেলের বিয়ে উপলক্ষে। প্ল্যান ছিল দু’তিন দিন এখানে থাকার। কিন্তু হাতির ভয়ে দিনের আলো ফুটতেই পাততাড়ি গোটাতে দেখা গেল তাঁদের। তপন সিংহের ছেলে পেশায় ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি তন্ময় সিংহের বিয়ে হয় গত শুক্রবার। কনের বাড়ি বাঁশতলা থেকে প্রায় ৮ কিমি দূরে জয়পুর গ্রামে।
শনিবার গ্রামেই ছিল বৌভাতের অনুষ্ঠান। বরের বাবা তপন বলেন, ‘৫০০ জনকে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল বৌভাতে। কিন্তু হাতির ভয়ে কেউই প্রায় আসেনি। বাইরে থেকে আসা অল্প কয়েক জন আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ও ৬৫ জন কনেযাত্রী মিলে মোট ২৭০ জন খেয়েছেন।’ ফলে খাবার বেঁচে গিয়েছে প্রচুর। বিলি-বাটোয়ারা করেও ডেকচি-ডেকচি খাবার নষ্ট হতে দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন গৃহকর্তা।
গত কয়েক দিন ধরেই জোয়ালভাঙা সংলগ্ন আশেপাশের গ্রামগুলিতে সন্ধ্যা নামলেই তাণ্ডব চালাচ্ছে বুনো হাতির দল। শনিবারও গ্রামের একাধিক বাড়িতে ভাঙচুর চালায় হাতির পাল। বাঁশতলা থেকে জঙ্গল রাস্তা দিয়ে জোয়ালভাঙা গ্রামের দূরত্ব মাত্র তিন কিমি। বরের খুড়তুতো দাদা বরুণ সিংহ বলেন, ‘কনেযাত্রীদের আসার কথা ছিল রাত ন’টায়। কিন্তু হাতির ভয়ে ওদেরকে ১৫ কিমি ঘুরপথে গ্রামে যখন নিয়ে আসি, তখন রাত একটা।’
মধ্যরাতে এসে পৌঁছে সবেমাত্র প্যান্ডেলে খেতে বসেছেন কনেযাত্রীরা। তখনই হানা দেয় ৮টি বুনো হাতির দল। প্রাণভয়ে খাবার ছেড়ে দে ছুট কনেযাত্রীরা। বরের মা ববিতা সিংহ বলেন, ‘একেবারে প্যান্ডেলের সামনে হাতি চলে আসায় হুড়োহুড়ি লেগে যায়। কনেযাত্রীরা তখন খেতে বসেছিলেন। অর্ধেক খেয়েই আতঙ্কে তাঁরা উঠে পড়েন।’
বর তন্ময় নববধূ মাম্পি বলেন, ‘হাতির জন্য পুরো অনুষ্ঠানটাই মাটি হয়ে গেল! ভয়ে আমন্ত্রিতরা তেমন কেউ আসেননি। যাঁরা এসেছিলেন, হাতির হামলার পর সবাই মিলে একসঙ্গে সারারাত জেগে কাটিয়েছি।’ ভাটপাড়া থেকে দুই ছেলে, বৌমা, মেয়ে-জামাই ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে এসেছিলেন আত্মীয় মহেশ সিংহ। এদিন সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ গ্রাম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় মহেশ বললেন, ‘বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠানে এসেছিলাম চার-পাঁচদিন এখানে থাকব বলে। কিন্তু ঘরের মধ্যে যে ভাবে হাতির দল ঢুকে যাচ্ছে, তা জীবনে প্রথম দেখলাম। ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে ভয়ে আর থাকতে না পেরে ভাটপাড়ায় ফিরে যাচ্ছি!’
আমন্ত্রিতরা না আসায় প্রচুর খাবারও নষ্ট হয়েছে। চল্লিশ কিলো মাংস, কুড়ি কিলো চালের ভাত, পটলের তরকারি দুই ডেকচি, ১৫ কিলো মাছ ভাজা, এক ঝুড়ি শাক ভাজা, চাটনি দেখিয়ে বরের বাবা তপন সিংহ বলেন, ‘গরমে সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে। যেগুলো ভালো ছিল, এ দিন সকালে তা বিলিয়ে দিয়েছি গ্রামের মানুষজনকে।’ ঝাড়গ্রামের ডিএফও পঙ্কজ সূর্যবংশী বলেন, ‘কিছু বাড়ি ভাঙচুর করেছে হাতিতে।’