বিশ্ববিদ্যালয়ের বেদবিদ্যা ভবনের কর্মী নিমাই কর্মকারের অভিযোগ, গত বুধবার ক্যাম্পাসে তাঁকে জাতিবিদ্বেষী মন্তব্য করা হয়, টাকা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এমন মারধর করা হয় যে তিনি আরজি কর হাসপাতালের ট্রমা কেয়ারে চার দিন ধরে চিকিৎসাধীন। কাঠগড়ায় তাঁরই দুই সহকর্মী। এই ঘটনায় সিঁথি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন নিমাইয়ের স্ত্রী।
বড় ছেলে অভিরূপ কর্মকারের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়কে বিষয়টি জানানোর জন্য গত শুক্রবার মাকে নিয়ে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি ক্যাম্পাসে গিয়ে রেজিস্ট্রারের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। অভিরূপের কথায়, ‘বাবা গত এপ্রিল-মে মাস থেকে ওঁকে নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ জানিয়ে আসছেন বাবা। ব্যবস্থা নেননি। মা যখন বারবার বাবার সঙ্গে ঘটে চলা ঘটনার কথা বলতে যাচ্ছিলেন, উনি থামিয়ে দিয়েছেন।’ যাবতীয় তথ্য-সহ অভিযোগপত্র জমা করতে গেলেও সুবীর তা নিতে চাননি বলে অভিরূপের অভিযোগ।
তাঁর কথায়, ‘বাবা এতগুলো বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করছেন। সহানুভূতির তো লেশমাত্র দেখলাম না রেজিস্ট্রারের কথায়। উল্টে তিনি আমাদের প্রত্যাখ্যান করলেন। বললেন জোড়াসাঁকোতে এলে হবে না, আমাদের বিটি রোডে যেতে হবে। বাবা হাসপাতালে প্রায় অচৈতন্য অবস্থায় শুয়ে আছেন। একটা অভিযোগ জানাতে আমাদের জোড়াসাঁকো থেকে বিটি রোড যেতে হবে! এটুকু সহানুভূতি কি কর্মী হিসেবে বাবার প্রাপ্য ছিল না?’
শেষে অভিরূপ ও তাঁর মা ভারপ্রাপ্ত ভিসি শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে সব জানান। ভিসির উদ্যোগেই রেজিস্ট্রার অভিযোগপত্র নেন বলে নিমাইয়ের পরিবারের দাবি। যদিও এ সব নিয়ে কথা বলতে চেয়ে রেজিস্ট্রারকে ফোন এবং হোয়াটসঅ্যাপ করা হলেও তিনি জবাব দেননি। তবে ভিসি জানিয়েছেন, এই ঘটনায় তিনি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
সমাজকর্মী থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকেই জানাচ্ছেন, সুবীরের মতো এমন সহানুভূতিহীন গা-ছাড়া মনোভাবের জন্যই ক্যাম্পাসের ভিতরে বাড়ছে হিংসা এবং জাতিবিদ্বেষ। এর আগে ২০১৯ সালে ক্যাম্পাসের মধ্যে এক অধ্যাপিকাকে এ ভাবে আক্রমণের পর বিভিন্ন কমিটি ও স্কুল থেকে শিক্ষকরা প্রতিবাদে পদত্যাগ করেন। সমস্যা মেটাতে ক্যাম্পাসে পৌঁছন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। গত বছর আদিবাসী দম্পতিকে জাত তুলে হেনস্থায় অভিযুক্ত সাত কর্মীকে সাসপেন্ড করেন তৎকালীন ভিসি সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী।
এরই মধ্যে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক পড়ুয়া বলেন, ‘আমাকেও দিনের পর দিন ক্যাম্পাসে জাত তুলে গালাগালি করা হয়েছে। আমি রেজিস্ট্রারের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম কিন্তু করতে পারিনি।’ প্রতিষ্ঠানে এসটি-এসসি সেলের কাজ প্রায় বন্ধ বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর। সেলের সেক্রেটারি আশিস দাসের বক্তব্য, ‘আমাদের কাছে এ সংক্রান্ত অভিযোগ অনেকদিন হলো পাঠানো বন্ধ করা হয়েছে।’ শিক্ষক সমিতি আরবুটা-র তরফে দেবব্রত দাসের বক্তব্য, ‘গত ক’বছরে একাধিক অভিযোগ এসেছে। এসসি-এসটি সেলকে সক্রিয় করা দরকার। অভিযোগ সত্যি হলে নিয়ম মেনে কঠোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা দরকার।’