প্রতিমা এবং থিমের প্রদর্শনীর পাশাপাশি নাচে-গানে বাংলার শিল্পসত্তাকে হাজার হাজার দর্শকের সামনে তুলে ধরেন পুজোর উদ্যোক্তারা। যা দেখে মুগ্ধ হন বিদেশি অতিথিরাও। পূর্ব নির্ধারিত সময়সূচি মেনে শুক্রবার বিকেল চারটে নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী রেড রোডের অনুষ্ঠান মঞ্চে পৌঁছন। এক মাসেরও বেশি সময় পরে তিনি কোনও প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন।
পায়ের চোট পুরোপুরি না সারলেও গাড়ি থেকে নেমে বেশ খানিকটা পথ হেঁটে মঞ্চে আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আসার সময় দর্শকদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছাও জানান তিনি। মূল অনুষ্ঠান মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও এদিন হাজির ছিলেন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়রা।
মঞ্চ আলো করে বসেছিলেন প্রসেনজিৎ, দেব, ঋতুপর্ণা, জুন মালিয়া, সায়ন্তিকা, রনিতা সহ টলিউডের তারকারা। গতবার রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে রেড রোড কার্নিভালের অনুষ্ঠান মঞ্চে দেখা গেলেও এবার সিভি আনন্দ বোসকে দেখা যায়নি। রাজভবন সূত্রে দাবি করা হয়েছে, এই অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য রাজ্যপাল কোনও আমন্ত্রণ পত্র হাতে পাননি। তাই তাঁর যাওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না।
এদিন, মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চে ওঠার পরে ডোনা গাঙ্গুলির নৃত্যানুষ্ঠান দিয়ে পুজো কার্নিভালের সূচনা হয়। এরপর শুরু হয় শোভাযাত্রা ও প্রদর্শনী। শ্রীভূমি ক্লাবের শোভাযাত্রায় পা মেলান দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু। রাজ্যের আর এক মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যও অনুষ্ঠানে অংশ নেন। শোভাযাত্রা চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রীকে মাঝে মধ্যেই উঠে দাঁড়িয়ে শিল্পী এবং কলাকুশলীদের অভিবাদন জানাতে দেখা গিয়েছে। কখনও তিনি টলিউডের তারকাদের সঙ্গে নিয়ে গানের তালে অংশ নিয়েছেন।
এমনকী, হাততালি দিয়ে উৎসাহ জুগিয়েছেন। ছোট্ট শিশুকে মঞ্চে তুলে নিয়ে ছবি তুলেছেন। এ বছর নিউ আলিপুর সুরুচি সংঘের পুজোর থিম সং লিখে তাতে সুর দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। সুরুচি সংঘের তরফে মুখ্যমন্ত্রীর লেখা গানের সঙ্গে এদিন গীতি আলেখ্য পরিবেশন করা হয়। তাতে অংশ নেন এগারোটি দেশের মোট ২৫ জন শিল্পী। অনুষ্ঠান পরিবেশনা দেখার পরে মুখ্যমন্ত্রী নিজেও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
সেই সময়ে দাঁড়িয়ে গানের তালে মুখ্যমন্ত্রীকে লিপ দিতেও দেখা যায়। একই ভাবে রামমোহন সম্মিলনীর ভাটিয়ালি গানের সঙ্গে নৌকার দাঁড় টেনে এবং চক্রবেড়িয়া সর্বজনীনের নাচের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সকলের নজর কাড়েন মুখ্যমন্ত্রী। এদিনের অনুষ্ঠানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জাপান, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান সহ বিভিন্ন দেশের কনসুলেটের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
এ ছাড়াও বহু বিদেশি পর্যটক পুজো কার্নিভাল দেখতে এসেছিলেন। তাঁদেরই একজন গ্যাব্রিয়েল বেনেট। শুধুমাত্র কলকাতার দুর্গা পুজো দেখার জন্য তিনি লন্ডন থেকে এখানে এসেছেন। রেড রোড কার্নিভাল দেখার পরে রীতিমতো আপ্লুত বেনেট ‘এই সময়’-কে বলেন, ইউনেস্কোর সাইটে কলকাতার দুর্গাপুজোর কথা জেনেছিলাম। কিন্তু পুজো কার্নিভাল সম্পর্কে আমার কোনও আইডিয়া ছিল না। কালারফুল অনুষ্ঠান দেখলাম।’
বিকেলে কার্নিভাল অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার বেশ খানিকক্ষণ বাদে কন্যাকে সঙ্গে নিয়ে হাজির হন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী রুজিরা। মূল মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর আসনের ঠিক পিছনে ঠাকুমার কোলে বসে মোবাইলে ছবি তুলতে দেখা গিয়েছে তাকেও।