এই সময়, দুর্গাপুর: সাত বছরের শিশুকন্যার উপর যৌন নির্যাতনের প্রতিবাদ করা তো দূর, উলটে ধৃতের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি তোলা হল! সেই দাবিতে শিশুটির পরিবারের লোকেদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগও উঠেছিল পশ্চিম বর্ধমান জেলা বাউড়ি সমাজের সদস্যদের বিরুদ্ধে। নিজেরা সালিশি করে বিষয়টি মিটিয়ে নেবেন জানিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন বাউড়ি সমাজের নেতারা।

কিন্তু পুলিশ তাঁদের গুরুত্ব না দিয়ে ফিরিয়ে দেয়। পুলিশ কেন তাঁদের ফিরিয়ে দিয়েছে, তার প্রতিবাদে রবিবার সকালে দুর্গাপুরের অমরাবতী এলাকায় পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বাউড়ি সমাজের লোকজন। এই ঘটনায় ধুন্ধুমার বেধে যায় এলাকায়। প্রথমে অবরোধকারীদের রাস্তা থেকে উঠে যাওয়ার আবেদন জানায় পুলিশ। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি।

নিজেদের দাবিতে অনড় থাকেন বাউড়ি সমাজের প্রতিনিধিরা। এর পর পুলিশ কমব্যাট ফোর্স সঙ্গে নিয়ে বিক্ষোভকারীদের তাড়া করে সরিয়ে দেয়। গ্রেফতার করা হয় বাউড়ি সমাজের ১৩ জনকে। এমন ঘটনায় বিস্মিত পুলিশও। এসিপি তথাগত পান্ডে বলেন, ‘একটি সাত বছরের বাচ্চা মেয়ের ওপর যৌন নির্যাতন হয়েছে। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অভিযুক্ত বাউড়ি সমাজের বলে তার হয়ে ওকালতি করতে এসেছে লোকজন। বাউড়ি সামাজের নেতারা ওই শিশুটির বাড়িতে গিয়ে মামলা প্রত্যাহারের হুমকি দিচ্ছে। এর প্রতিবাদ করা হলে রাস্তা অবরোধ করছে। তাতে নাকাল হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এটা মেনে নেওয়া যায় না। ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করা হবে।’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২০ অক্টোবর নিউ টাউনশিপ থানা এলাকায় বছর সাতেকের একটি শিশুকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। তদন্তে নেমে পুলিশ প্রসেনজিৎ বাউড়ি নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে। পকসো আইনে মামলা রুজুর পর জেল হেফাজত হয় অভিযুক্তর। এর পরই ২৪ অক্টোবর রাতে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বাউড়ি সামাজের জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ বাউড়ি অনুগামীদের নিয়ে শিশুটির বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেন বলে অভিযোগ।

কিন্তু সেই হুমকিতে দমে না গিয়ে শিশুটির পরিবার বিশ্বজিৎ ও তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে নিউ টাউনশিপ থানায় অভিযোগ জানায়। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য থানায় গেলে বিশ্বজিৎকে পুলিশ বার করে দেয়। এদিন সকালে জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন জুটিয়ে অমরাবতী মোড়ে জড়ো হন বাউড়ি সমাজের নেতারা। র‍্যালি করে নিউ টাউনশিপ থানা ঘেরাওয়ের পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। র‍্যালি করতে পুলিশ নিষেধ করলে বাউড়ি সমাজের লোকজন রাস্তায় বসে পড়েন।

‘গডম্যানে’র নিদান: দুষ্টু ছেলেকে হাঁটু পর্যন্ত পুঁতে রাখলেন খোদ বাবা-মা
খবর পেয়ে নিউ টাউনশিপ, দুর্গাপুর ও কোক-ওভেন থানা থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী ও কমব্যাট ফোর্স ঘটনাস্থলে আসে। অবরোধকারীদের রাস্তা থেকে সরাতে লাঠি নিয়ে তাড়া করে পুলিশ। লাঠির ঘা থেকে বাঁচতে দৌড়তে থাকে প্রতিবাদকারীরা। ধাওয়া করে ১৩ জনকে ধরে ফেলে পুলিশ। গ্রেফতার হওয়া এক যুবক বলেন, ‘আমরা গৌড়বাজার থেকে এসেছি। বিক্ষোভের কথা বলে আমাদের আসতে বলেছিলেন জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ বাউড়ি।’

ফরিদপুর ব্লক বাউড়ি সমাজের সভাপতি অধীর বাউড়ি বলেন, ‘ওই শিশুটির বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ভুল। আমাদের জেলা সভাপতিকে পুলিশ অপমান করেছে। এর প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলাম আমরা। আমাদের লোকেদের ওপর পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে। পুলিশের লাঠির আঘাতে ২০ জন আহত হয়েছে।’ পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, তাড়া করা হলেও লাঠি চালানো হয়নি।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *