অপরিণত মনের নির্যাতিতা কিশোরীকে স্কুলে ফিরিয়ে সেরা ‘শিশু-বান্ধব’ সুদীপ – gopivallabhpur ic police try to child friendly victim girl back to school life


অন্বেষা বন্দ্যোপাধ্যায়

২০২৩-এর ৩ জুন। ঝাড়গ্রামের পকসো আদালত এক কিশোরীর গণধর্ষণে অভিযুক্ত চার জনকেই দোষী সাব্যস্ত করেছিল। সে দিন নির্যাতিতা ও তার পরিবার ছাড়াও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল ঝাড়গ্রাম পুলিশ। তবে গোপীবল্লভপুর থানার আইসি সুদীপ বন্দ্যেপাধ্যায়ের মনে হয়েছিল, ন্যায়বিচার ও আর্থিক ক্ষতিপূরণ — সবই হল। কিন্তু পুনর্বাসন? টাকা প্রয়োজন, কিন্তু সেটা দিয়ে তো সব হবে না।

তাই মেয়েটি যাতে স্কুলে ফের যেতে পারে ও তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে, মামলা চলাকালীনই সেই চেষ্টা চালাচ্ছিলেন তিনি। কোর্টের বাইরের সেই লড়াইটা ছিল সম্ভবত আরও কঠিন। কারণ ১৫ বছরের ওই কিশোরী মানসিক ভাবে পরিণত নয়। রয়েছে কিছু শারীরিক সমস্যাও। তাই অনেক দেরিতে বুঝতে পারা, বহু সময়ই হাঁ করে তাকিয়ে থাকা, নিজেকে পুরোপুরি প্রকাশ করতে না পারা — এ সবই ছিল অন্তরায়।

কিন্তু সেই বাধা পেরিয়ে তিনি ওই পঞ্চদশীকে ফের স্কুলে ভর্তি করান। পাশাপাশি সিডব্লিউসি-র নির্দেশে চলছে ওর ট্রমা কাউন্সেলিংও। সুদীপের কথায়, ‘আমরাও নিয়মিত ওর বাড়ি যাই। ওর সঙ্গে কথা বলি। ও খুব ধীরে ধীরে নিজের জীবনে ফিরছে।’

১০০ দিনের কাজের জবকার্ডের ছবি নির্যাতিতাকে দেখিয়ে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে এফআইআর করা থেকে শুরু করে এক বছরের কম সময়ে মামলার নিষ্পত্তি — প্রতি ক্ষেত্রেই সুদীপের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য (খবরটি ‘এই সময়’ প্রকাশিত হয়েছিল)। তারই স্বীকৃতি হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের পক্ষ থেকে এই বছরের ‘পুলিশ ব্রেভারি অ্যাওয়ার্ড ফর দ্য বেস্ট চাইল্ড ফ্রেন্ডলি পুলিশ পার্সোনেল।’

এই মামলা কতটা কঠিন ছিল? ‘এই সময়’কে সুদীপ বলেন, ‘আসলে ওর বোঝার ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে। যে কারণে বারবার গণধর্ষিতা হওয়া বা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়া কোনওটাই ও বোঝেনি। ওর মা মেয়ের শারীরিক পরিবর্তন দেখে পুলিশকে জানান। মেয়েটি বুঝত না ট্রায়াল প্রসিডিংসও। ফলে ওকে উইটনেস বক্সে দাঁড় করিয়ে সাক্ষ্য দেওয়ানো বেশ কঠিন ছিল। কিন্তু বহু চেষ্টায় ও পেরেছিল।’

তিনি কেন মেয়েটির পুনর্বাসনে উদ্যোগী হলেন? তাঁর ব্যাখ্যা, ওর এমনিতেই কিছু সমস্যা রয়েছে। ওর মা-বাবাকেও কাজের জন্য বেরোতে হয়। তাই ও যাতে ফের কোনও বিপদে না পড়ে তাই ওকে দেখা আমাদের সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। তাই সব রকম চেষ্টা করা হচ্ছে।

তবে স্কুলে ফের ভর্তি করেও খুব একটা নিশ্চিন্তে নেই সুদীপ। কারণ ওই কিশোরীর ক্লাস করতে ভালো লাগছে না। স্কুলের প্রধান শিক্ষক থেকে অন্য টিচাররা ও পুলিশের একাধিক কর্মী যথাসম্ভব সাহায্য করছেন ওকে। এই ইনস্পেক্টরের কথায়, ‘এসপি স্যরের (অরিজিৎ সিনহা) উদ্যোগে জেলার অনেক জায়গায় দিশা কোচিং সেন্টার শুরু হয়েছে।

‘তোকে বাঁচাতে পারিনি মেয়ে…’, আবেগঘন চিঠির ১০০ দিন পর দোষী সাব্যস্ত শিশুকন্যা ধর্ষণে অভিযুক্ত
মূলত তা স্কুল আওয়ার্সের বাইরে বাচ্চাদের পড়া দেখিয়ে দেওয়ার জন্য। ওর পক্ষে সেখানে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই পুলিশকর্মীরা ওকে বাড়ি গিয়েই পড়াশোনায় সাহায্য করেন।’

এ ভাবেই সুদীপ মেয়েটিকে দিশা দেখাতে চাইছেন। তবে একা কৃতিত্ব নিতে রাজি নন। বললেন, ‘এই মামলার শুরু থেকে এসপি স্যর শেষ পর্যন্ত গাইড করে গেছেন। তা ছাড়া কিছু হতো না।’ আর ‘শিশু-বান্ধব’ স্বীকৃতি নিয়ে সংক্ষিপ্ত জবাব, ‘এতে আত্মবিশ্বাস বাড়বে। পরবর্তী তদন্তগুলোতে অনুপ্রেরণা দেবে। এত দিন যেমন সব কিছু আন্তরিকতা দিয়ে করে এসেছি, সেটাই আমি করে যাব।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *