দশ দিন পর বাগে এল সুন্দর, ঠাঁই আইসোলেশন ওয়ার্ডে – after ten days the forest workers managed to catch sundar the elephant


এই সময়, আলিপুরদুয়ার: দশ দিন ধরে বনকর্মীদের নাকানি চুবানি খাওয়ানোর পরে বাগে এল সুন্দর। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন বনকর্তারা। বুনো হাতিরা যে কোনও সময়ে তাকে হত্যা করতে পারে এই আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন ছিলেন তাঁরা। তাই যে কোনও মূল্যে পাকড়াও করতে কখনও ড্রোন উড়িয়ে, আবার কখনও ১৬টি কুনকি হাতি নিয়ে জলদাপাড়ায় তাঁকে খুঁজতে শুরু করেন বনকর্মীরা। হাতের কাছে পেয়েও বার বার সুন্দরকে ধরতে ব্যর্থ হচ্ছিলেন তাঁরা।

২৪ নভেম্বর বিকেলে স্নান করানোর সময়ে পাতাওয়ালাকে বোকা বানিয়ে জঙ্গলের গভীরে পালিয়ে গিয়েছিল মস্তিতে থাকা জলদাপাড়ার কুনকি হাতি সুন্দর। পরের দিন সকালে কুঞ্জনগর বিটে দেখতে পেয়ে তাকে ধরতে যান মাহুত দীপক কার্জি। তাঁকে পিষে মেরে জঙ্গলে বেপাত্তা হয় সুন্দর।
সোমবার সন্ধ্যায় জলদাপাড়া পূর্ব রেঞ্জের হস্তিশালার খুব কাছাকাছি তাকে দেখার পর ফের পাকড়াও করতে নতুন করে ঘুঁটি সাজানো শুরু হয়। সে যাতে দ্রুত অবস্থান বদল করতে না পারে, প্রচুর গুড়, চাল-ডালের দানার পুরিয়া ও বিট লবন তার কাছে ছুড়ে দেওয়া হয়।

খাবারের লোভেই খানিকটা আকৃষ্ট হয়ে পড়ে সুন্দর। মঙ্গলবার ভোরে নেওয়া হয় চূড়ান্ত প্রস্তুতি। সে যখন চিলাপাতার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে সেই সময়ে আটটি কুনকি হাতির পিঠে চড়ে বনকর্মীরা তার পিছু নেন। সাড়ে ছ’টা নাগাদ প্রথমবার ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়া হয়। তাতে খানিকটা কাবু হয় সুন্দর। তারপরেও সে ছুটতে থাকে। বনকর্মীরাও তার পিছু নেন। সাড়ে ন’টা নাগাদ দ্বিতীয়বার ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়া হয়। এরপরেই কার্যত আত্মসমর্পণ করে সুন্দর। পায়ে লোহার বেড়ি পরিয়ে আনা হয় হস্তিশালার আইসোলেশন ওয়ার্ডে।

আপাতত টানা একমাস বন্দি-জীবন। জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের সহকারি বন্যপ্রাণী সংরক্ষক নভোজিৎ দে বলেন, ‘ওর আচরণের উপরে কড়া নজর রাখা হবে। তারপর চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো হবে।’ সুন্দরের জন্য এত পরিশ্রম না করে তাকে জঙ্গলে ছেড়ে রাখলে কী ক্ষতি হতো? বনকর্তারা জানিয়েছেন, জলদাপাড়ার পিলখানায় জন্মের পর গত ২২ বছর ধরে সে মানুষের সংস্পর্শে রয়েছে। বনের পরিবেশ সুন্দরের জন্যে একেবারেই নিরাপদ নয়।

আজন্ম তোলা খাবার খেতে অভ্যস্ত সুন্দর জঙ্গলে ঠিক মতো খেতেও পারছিল না। হচ্ছিল না নিয়মিত স্নান ও শরীরের পরিচর্যা। সেই কারণেই তাকে যে কোনও মূল্যে পাকড়াও করতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল বনদপ্তর। হস্তী বিশেষজ্ঞ পার্বতী বরুয়া বলেন, ‘সুন্দরের মধ্যে মস্তির লক্ষণ এখনও স্পষ্ট রয়েছে। সঙ্গে মাহুতকে খুন করার অপরাধবোধ তার মধ্যে কাজ করছে। মানসিক ভাবেই এখন ঠিক নেই সুন্দর। ট্রমা থেকে বেরিয়ে ওর স্বাভাবিক জীবনে ফেরাটা সময় সাপেক্ষ।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *