Calcutta University : শুধুমাত্র পরীক্ষা গ্রহণের জন্যেই স্থাপিত হয়েছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রতিষ্ঠা দিবসে জানুন ইতিহাস – calcutta university was established only for examination know the history


গৌতম বসুমল্লিক

ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের মাঝামাঝি সময় থেকেই কোম্পানির শাসকেরা এ দেশে ইংরেজি শিক্ষার প্রচলনের জন্য উদ্যোগী হয়। সেই সময়ে মূলত বেসরকারি উদ্যোগে বেশ কিছু ইংরেজি পড়ানোর ইস্কুল এবং তার পর বেশ কিছু কলেজও খোলা হল এ দেশের ছাত্রদের শিক্ষার জন্য। কিন্তু সমস্যা হল, একক কোনও নিয়ন্ত্রক সংস্থা না থাকায়, সেই সব ইস্কুল-কলেজের পাঠক্রমে কোনও সমতা থাকছিল না।

সেই অব্যবস্থা দূর করতে সিপাই বিদ্রোহের আগে, ১৮৫৪-এ কোম্পানির শিক্ষা বিষয়ক কমিটি দেশের শিক্ষিত অভিজাত সম্প্রদায়ের মানুষদের নিয়ে এক কমিটি তৈরি করল। ১৮৫৬-র ডিসেম্বরে কমিটি রিপোর্ট পেশ করল। সেই রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে ১৮৫৭-র ২৪ জানুয়ারি এশিয়ার প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হল কলকাতায়। নাম হল— ‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালকাটা’।

প্রথম আচার্য বা চ্যান্সেলর হলেন তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড ক্যানিং এবং উপাচার্য বা ভাইস চ্যান্সেলর হলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জোমস উইলিয়ম কোলভিল। ওই একই বছরে ১৮ জুলাই তৎকালীন বোম্বাইতে এবং ৫ সেপ্টেম্বর তৎকালীন মাদ্রাজে আরও দুটো বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়।

সদ্য প্রতিষ্ঠিত ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে অবশ্য তখন কোনও পাঠদানের ব্যবস্থা ছিল না। প্রেসিডেন্সি কলেজই ছিল উচ্চতর পড়াশোনা ও গবেষণা করার প্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয় শুধু নির্দিষ্ট পাঠক্রমের ভিত্তিতে এন্ট্রান্স পরীক্ষা গ্রহণ করত। প্রতিষ্ঠার বছরেই অর্থাৎ, ১৮৫৭-র মার্চে ক‌লকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম প্রবেশিকা বা এন্ট্রান্স পরীক্ষা নেওয়া হল। সে বছর প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ২৩ জন প্রবেশিকা পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হয়। ১৮৫৮-এ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম স্নাতক স্তরের বিএ পরীক্ষা গ্রহণ করে।

প্রেসিডেন্সি কলেজের সাধারণ বিভাগ থেকে চার জন এবং আইন বিভাগ থেকে দু’জন বিএ পরীক্ষা দিলেন। প্রথম অবস্থায় সকলেই অনুত্তীর্ণ কিন্তু সমস্ত প্রাপ্ত নম্বর পুনরায় বিচার করে প্রেসিডেন্সি কলেজের সাধারণ বিভাগের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র যদুনাথ বসু এবং আইন বিভাগের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে কিছু নম্বর বাড়িয়ে বা গ্রেস দিয়ে যুগ্ম ভাবে বিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হিসেবে ঘোষণা করা হল।

অনেক পরে ১৮৮৩তে বেথুন কলেজের দুই ছাত্রী কাদম্বিনী বসু ও চন্দ্রমুখী বসু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যুগ্ম ভাবে প্রথম মহিলা স্নাতক হিসেবে বিএ উত্তীর্ণ হন। বোম্বাই ও মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় উভয়েই ছিল প্রাদেশিক, নিজের নিজের প্রদেশের বাইরে তাদের কোনও ক্ষমতা ছিল না, পক্ষান্তরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিধি বিস্তৃত ছিল গোটা ভারত জুড়ে তো বটেই, আফগানিস্থান, সিংহল, ব্রহ্মদেশের ছাত্ররাও ছিল এর আওতাভুক্ত।

গোড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ ছিল শুধু পঠন-পাঠনের রূপরেখা তৈরি এবং পরীক্ষা গ্রহণ। তাই প্রথম দিকে কোনও নিজস্ব ভবনের প্রয়োজনীয়তাও অনুভূত হয়নি। কিন্তু সমস্যা দেখা দিল সেই পরীক্ষা গ্রহণকে কেন্দ্র করেই। প্রথম বছরে পরীক্ষার্থী ছিল ২৪৪ জন কিন্তু সেই সংখ্যাটাই বাড়তে বাড়তে এমন জায়গায় পৌঁছল যে শুধু পরীক্ষার্থীদের বসার জন্যই একটা বড়ো ভবন তৈরির কথা ভাবা আরম্ভ হল। স্থির হল, হেয়ার সাহেবের স্কুল, হিন্দু স্কুল, প্রেসিডেন্সি কলেজ, সংস্কৃত কলেজ যেখানে রয়েছে সেই কলেজ স্ট্রিট অঞ্চলেই তৈরি হোক বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভবন।

বোসের কেসের খরচ কোথা থেকে? দেখবে তদন্ত কমিটি
জমি নেওয়া হল সেখানেই, হেয়ার স্কুলের ঠিক পাশে। কাজ আরম্ভ হল ১৮৬৪তে, শেষ হল ১৮৭২-এ, তৎকালীন উপাচার্য এফ সি বেইলির আমলে। বেঙ্গল গভর্নমেন্টের ‘পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট’ বা পি ডবলিউ ডি-র উদ্যোগে নির্মিত হল বিখ্যাত ‘সেনেট হল’। সে যুগেই খরচ হয়েছিল চার লক্ষ চৌত্রিশ হাজার ছ’শো সাতানব্বই টাকা। ধ্রুপদী গ্রিক স্থাপত্বের বৈশিষ্ট্য মেনে ৬০ ফুট উঁচু ও ২০০ ফুট লম্বা অংশ জুড়ে আয়োনিয়ান শৈলীর থাম দিয়ে তৈরি সেনেট হলের ভিতরে বসানো হল বিভিন্ন কৃতবিদ্য ব্যক্তির মূর্তি।

উপাচার্য এফ সি বেইলির আমলে সেনেট হল-এর দ্বারোদ্ঘাটন হয়েছিল মূলত পরীক্ষা গ্রহণ, সেনেট সভার মিটিং বা অধিবেশন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের জন্য। ১৮৭২ থেকে ১৯৬২। দীর্ঘ নব্বই বছর মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকার পর উপাচার্য সুরজিৎচন্দ্র লাহিড়ী এবং উপাচার্য বিধুভূষণ মালিকের সময়কালে ঐতিহ্যবাহী ‘সেনেট হল’ ভেঙে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হল স্থানাভাবের অজুহাতে। তার জায়গায় তৈরি হল পায়রার খুপরির মতো ঘরওয়ালা শতবার্ষিকী ভবন। সেই সঙ্গেই হয়ত অস্তমিত হয়ে গিয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীত গৌরব।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *