রনি চৌধুরী, জলপাইগুড়িআকাশপথে দূরত্ব প্রায় বারোশো কিলোমিটার! বাগডোগরা থেকে বিমান ধরে দিল্লি পৌঁছেও প্রেমিকের সঙ্গে দেখা হল না নাবালিকার। আপাতত তার ঠিকানা জলপাইগুড়ির আবাসিক হোম। পুলিশি জেরায় সে যা জানিয়েছে, তাতে চক্ষু চড়কগাছ পুলিশের। অবাক মা-বাবাও। ধূপগুড়ির বারোঘড়িয়া থেকে বেরিয়ে যে মেয়ে পাশের গ্রাম মাগুরমারি, দুরামারি ভালো করে কখনও ঘুরে দেখেনি, সেই মেয়ে কিনা পৌঁছে গিয়েছে দিল্লি?

কোন যাদুবলে এমনটা করল তাঁদের সতেরো বছরের মেয়েটা? কার মদতে? গোটা ঘটনায় ‘প্রেমের গল্প’ থাকলেও নেপথ্যে নারী পাচারের ছক উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশও। ধূপগুড়ি থানার আইসি অনিন্দ্য ভট্টাচার্য বলেন, ‘মেয়েটি ট্রমার মধ্যে রয়েছে। দু’ তিন দিন পরে একটু স্বাভাবিক হলে ফের তার সঙ্গে কথা বলা হবে।’

জানা গিয়েছে, মাস দু’য়েক আগে ধূপগুড়ির বারোঘড়িয়া গ্রামের এক ছাত্রীর সঙ্গে ভিডিয়ো গেমের সূত্রে সম্পর্ক তৈরি হয় হরিয়ানার এক যুবকের। মেয়েটির দাবি, মাঝে সম্পর্ক কেটে গেলেও প্রেমের মাসে সেই সম্পর্ক আবার জোড়া লাগে। আজ বুধবার প্রপোজ-ডেতে একে অপরের সামনে দাঁড়িয়ে প্রেম নিবেদনের পরিকল্পনা করে তারা। কিন্তু দিল্লি পৌঁছবে কী করে?

গাড়িভাড়ার টাকাই বা কে দেবে? তাকে পরামর্শ দেয় প্রেমিক যুবক। নাবালিকা তার মায়ের অ্যাকাউন্ট থেকে ১৫ হাজার টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে। এরপর গুগল-পের মাধ্যমে ওই টাকা পাঠিয়ে দেয় যুবককে। সেই টাকা দিয়ে কাটা হয় প্লেনের টিকিট। প্রেমিক যুবক ওই টিকিট কেটে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দেয় নাবালিকাকে।

পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে গভীর রাতে ফোনে ওই যুবকের সঙ্গে পালানোর ‘রণকৌশল’ ঠিক করে নাবালিকা। ওই যুবকের পরামর্শে তৈরি হয় ছক। শনিবার টিউটরের কাছে পড়তে যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ধূপগুড়ি স্ট্যান্ড থেকে ট্যাক্সি ভাড়া করে পৌঁছে যায় বাগডোগরা বিমানবন্দরে। এরপর দিল্লিগামী বিমানে চেপে বসে সে।

মেয়েটির দাবি, ছেলেটির সঙ্গে দেখা করা এবং দু’দন্ড বসে কথা বলে প্রেম নিবেদন করার জন্যই তার এতদূর পথ পাড়ি দেওয়া। কিন্তু তা আর হলো কই? সকালে পড়তে যাওয়া মেয়ে দুপুরেও বাড়ি ফিরে না আসায় টনক নড়ে পরিবারের। এ দিক ওদিকে খুঁজে তাকে না পেয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয় পরিবার। মেয়েটির মোবাইল ফোন ট্র্যাক করতেই বসে অবাক হয় পুলিশও।

সকালে যে মেয়ের লোকেশন ছিল ধূপগুড়ি, সন্ধ্যায় সেই মেয়ে মাঝ আকাশে! কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছে যাবে দিল্লি। গোটা চিত্রনাট্যের পিছনে পাচার চক্রের হাত থাকার আশঙ্কায় দ্রুত দিল্লি এয়ারপোর্ট অথরিটি এবং দিল্লি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ধূপগুড়ি থানার আধিকারিক। দিল্লি পুলিশের সাহায্য নিয়ে ওই ছাত্রীকে আটক করা হয় এয়ারপোর্টে।

ATM Fraud : এটিএমে আঠা লাগিয়ে টাকা হাতানোর ছক?

তবে তার অপেক্ষায় থাক সেই যুবকের হদিশ মেলেনি। তাকে উদ্ধার করে ধূপগুড়ি নিয়ে আসে পুলিশ। রবিবার জলপাইগুড়ির একটি আবাসিক হোমে রাখা হয় তাকে। তবে ওই যুবকের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, ছেলেটির প্ররোচনায় পা দিয়ে এমন দুঃসাহসিক কাণ্ড করেছিল প্রত্যন্ত গ্রামের সহজ সরল মেয়েটি।

প্রথমে মায়ের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরানো। এরপর টাকা ছেলেটির অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে কাওকে কিছু না জানিয়ে দিল্লিগামী বিমানে উঠে বসা, সবকিছুর পিছনে মাস্টারমাইন্ড দিল্লিতে বসে থাকা ওই যুবক। বিমান থেকে নামার পরে প্রেমিক না প্রতারকের মুখোমুখি হতো মেয়েটি, সংশয়ে পুলিশও।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *