অ্যাজেন্ডায় নেই না-মানুষরা, ভোট টু নোটার দাবি পশুপ্রেমীদের – state animal lovers demand for vote to nota nota political party


মাঝরাস্তায় নয়, একেবারে ধার ঘেঁষেই শুয়ে ছিল ওরা চারজন। আর ওঠেনি। ভোরে পাড়ার মোড়ে চায়ের দোকানটা খুলতে এসে মর্মান্তিক দৃশ্যটা দেখেন দোকানদার। রাতে কোনও এক সময়ে একটা গাড়ি পিষে দিয়ে গিয়েছে। ঘটনাস্থল দমদম। খুনিরা ধরা পড়েনি। নিহতরা অবশ্য মানুষ নয়, কুকুর।শেষ রাতে কাতর কান্না শুনে কিছুটা বিরক্ত হয়েই দরজা খুলেছিলেন পাড়ার লোকজন। বাইরে এসে যা দেখলেন, তাতে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন সকলে। কড়া কোনও অ্যাসিডের প্রভাবে ওর শরীরের অনেকটা জায়গার চামড়া গলে মাংস বেরিয়ে পড়েছে। থানায় খবর দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু কোনও অপরাধীই ধরা পড়েনি। এবারও আক্রান্ত মানুষ নয়, কুকুর। ঘটনাস্থল যাদবপুর।

বৃদ্ধ মা-বাবাকে বাহুল্য মনে করে বাড়ি থেকে বার করে দেওয়ার নজির নেহাত কম নেই। কিন্তু এমন ঘটনা আদালতের দরজা পর্যন্ত যাওয়ার পর অভিযুক্ত ছেলে বা মেয়ে পার পেয়ে গিয়েছেন, এমনও খুব একটা হয় না। ব্যতিক্রম ‘ওরা’ — না-মানুষরা। দশাসই যে জার্মান শেফার্ডের হুঙ্কারে একটা সময়ে বাড়ি তো দূরস্থান পাড়ায় ঢোকার আগে দু’বার ভাবত চোরেরা, বুড়ো হয়ে যাওয়ার পরে সেই জার্মান শেফার্ডকে অবলীলায় বাড়ি থেকে রাস্তায় বের করে দিয়েছেন তার প্রাক্তন প্রভু।

না খেতে পাওয়া হাড় জিরজিরে কুকুরটার দিকে এখন তাকানো যায় না। একদা প্রিয় পোষ্যর সঙ্গে এমন আচরণও এই শহরে নতুন নয়।
না-মানুষদের সঙ্গে দিনের পর দিন এমন ঘটনা ঘটে চলে, কিন্তু কোনও প্রতিবাদ হয় না। ওদের অবস্থার উন্নতির জন্য গলা ফাটাতেও শোনা যায় না কোনও রাজনৈতিক দলকে।

যাঁরা কিছু পাওয়ার আশা না করে নিয়মিত এলাকার না-মানুষদের খাবার দেন বা সেবা-শুশ্রূষা করেন, তাঁরাও যে খুব নিশ্চিন্তে থাকেন তা নয়। পথের পশুদের খাবার দেওয়া নিয়ে তাঁদের কম হেনস্থা হতে হয় না। তবু ক’জন রাজনৈতিক নেতা তাঁদের পক্ষে দাঁড়ান? পশুপ্রেমীদের মতে, এমন হয় না। তার কারণ, না-মানুষরা ভোট দেয় না। সুতরাং ওদের কথা না ভাবলেও চলে।

না-মানুষরা ভোট দেয় না ঠিকই, কিন্তু ওদের ভালোবাসেন এমন মানুষের সংখ্যা নেহাৎ কম নয়। তাঁরা ভোটও দেন। এবারের ভোটে সেই পশুপ্রেমীদের উদ্দেশেই ডাক দিলেন পশু কল্যাণ ও পশু অধিকার রক্ষা নিয়ে কর্মরত সংস্থা ‘ইন্ডিয়া ইউনাইটস ফর অ্যানিম্যালসের’ সদস্যরা। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ওঁদের দাবি, যে দলের অ্যাজেন্ডায় কমিউনিটি অ্যানিমালরা জায়গা পায় না, সেই দলকে ভোট না দিয়ে নোটায় ভোট দিন। এ ভাবেই না-মানুষদের প্রতি দলমত-নির্বেশেষে উদাসীনতার প্রতিবাদ করা হোক।

‘ইন্ডিয়া ইউনাইটস ফর অ্যানিম্যালসের’ পশ্চিমবঙ্গ শাখার পক্ষ থেকে দোলা সরকার এবং সর্বাণী সেন বলছেন, ‘কমিউনিটি অ্যানিম্যাল অর্থাৎ গৃহপালিত না হয়েও কুকুর বা বিড়ালের মতো যে প্রাণীরা মানুষের সঙ্গেই বসবাস করে, তাদের অবস্থা আমাদের রাজ্যে অত্যন্ত খারাপ। এদের বেশির ভাগই খেতে পায় না। এদের চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থা নেই। অথচ সরকারি পশু হাসপাতালে এরা চিকিৎসা পাওয়ার অধিকারী। এদের অনেকেই নিদারুণ অত্যাচারের শিকার। অপরাধীরা খুব কম ক্ষেত্রেই সাজা পায়। কোনও রাজনৈতিক দলের অ্যাজেন্ডায় এই পশুরা জায়গা পায় না। এই অবস্থার প্রতিকার চেয়েই আমাদের এমন উদ্যোগ।’

কঠিন অপারেশনের পরে শেষমেশ পুরো সুস্থ পোগো

আর যাঁরা পুরোপুরি নিজের উদ্যোগে সাধ্যমতো ওদের খেতে দেওয়া বা চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করেন, বহু ক্ষেত্রে তাঁরাও নানা ভাবে হেনস্থার শিকার হন। তাঁদের প্রসঙ্গে পশু কল্যাণ ও পশুদের অধিকার রক্ষা নিয়ে কর্মরত সংস্থা পিপল ফর দ্য এথিক্যাল ট্রিটমেন্ট অফ অ্যানিম্যালসের (পেটা) পূর্বাঞ্চলীয় শাখার সদস্য বিয়াস মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘পাড়ার কুকুরকে খেতে দেওয়ার ‘অপরাধে’ ফিডারকে অসম্মানিত করার ঘটনা প্রতিদিন ঘটে। এর জন্য থানায় নিয়মিত অভিযোগও জমা পড়ে। বহু ক্ষেত্রে আমাদেরই আইনি সহায়তা দিতে হয়। ভেবে দেখুন, যিনি খেতে দিচ্ছেন, তাঁর ওপরই যদি এত রাগ, তবে যাদের খেতে দেওয়া হচ্ছে তারা কতটা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে!’

পশুপ্রেমীদের স্পষ্ট বার্তা, ‘আমরা ভোট বয়কট করার ডাক দিচ্ছি না। আমরা চাইছি রাজনৈতিক দলগুলোর অ্যাজেন্ডায় যেন না-মানুষদের নিয়ে নির্দিষ্ট কিছু পরিকল্পনা থাকে। না থাকলে আমরা ওঁদের ভোট দেব না। দেখাই যাক না নোটা কত ভোট কাটতে পারে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *