মানুষের রায়দানের বাকি আর তিনদিন! রাজার শহর কোচবিহার। সেই শহরকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় রাজ্যের সবথেকে উত্তরের লোকসভা কেন্দ্র কোচবিহার। একদিকে, পৃথক রাজ্য বা কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলের দাবিতে চাপা গুঞ্জন, অন্যদিকে, সীমান্তবর্তী জেলার সার্বিক উন্নয়ন, মোটের উপর দুই ইস্যুর উপর দাঁড়িয়ে গণদেবতার রায়দান। বাম শরিক ফরোয়ার্ড ব্লকের গড়ে আজ দুই প্রভাবশালী শক্তি তৃণমূল ও বিজেপি। লোকসভার লড়াইয়ে মুখোমুখি নিশীথ প্রামাণিক-জগদীশ বর্মা বসুনিয়া।বলা হয়, এই আসনে রাজবংশীদের ভোট যেদিকে ঢলবে, কোচবিহার তারই। সেই সম্প্রদায়কে কাছে টানতে তৎপরতা দেখিয়েছে যুযুধান দুই শিবিরই। একদিকে, রাজবংশী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি নিশীথ প্রামাণিককে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করে, গ্রেটার কোচবিহারের দাবি তোলা অনন্ত মহারাজকে রাজ্যসভায় পাঠিয়ে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে বিজেপি। অন্যদিকে, রাজবংশী সম্প্রদায়ের ভাষা থেকে সংস্কৃতির জন্য নানা উন্নয়নমূলক কাজের পরিসংখ্যান দিয়ে জনসমর্থনের আশায় রাজ্যের শাসক দল।

বিজেপির কাজের ফিরিস্তি কী?

গেরুয়া শিবিরের দাবি, গত পাঁচ বছরে নিউ কোচবিহার রেলস্টেশনে চলমান সিঁড়ি, আন্তর্জাতিক মানের স্পোর্টস হাব, কলকাতা-কোচবিহার বিমান যাত্রার সূচনা এরকম একাধিক উন্নয়নমূলক কাজ দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছেন নিশীথ প্রামাণিক। তিন বছরে মোট সাড়ে ১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয় কোচবিহারের সাংসদের জন্য ৷ এর মধ্যে তিনি খরচ করেছেন সাড়ে ৯ কোটি টাকা বলে দাবি করা হয়।

তৃণমূলের দাবি কী?

অন্যদিকে, তৃণমূলের তরফে দাবি করা হয়, শেষ পাঁচ বছর ‘ডুমুরের ফুল’ হয়ে উঠেছিলেন নিশীথ প্রামাণিক। নিজের সাংসদ এলাকায় দেখাই যায়নি তাঁকে, কাজ করা তো দূরের কথা। সাংসদ না থাকলেও এই লোকসভা এলাকায় রাজ্য সরকারের তরফে হাত খুলে কাজ হয়েছে। তৃণমূলের দাবি, পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ, কোচবিহারের নায়ক চিলা রায়ের ১৫ ফুটের মূর্তি নির্মাণ, একটি কলেজের পাশাপাশি একটি পলিটেকনিক কলেজ নির্মাণ, রাজবংশী সম্প্রদায়ের স্কুলকে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। এর সঙ্গে রাজ্য সরকারের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী সহ অন্যান্য প্রকল্পের সুবিধা তো রয়েছেই।

গত নির্বাচনের ফলাফল পর্যবেক্ষণ

প্রসঙ্গত, এই কেন্দ্র থেকে গতবার বিজেপির প্রার্থী হয়েছিলেন নিশীথ প্রামাণিক। মোদী ঝড়ে কোচবিহার কেন্দ্রে ৫৪ হাজার ব্যবধানে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূলের পরেশ চন্দ্র অধিকারীকে হারিয়েছিলেন তিনি। প্রায় ৪৭ শতাংশ ভোট একাই পান নিশীথ। গত বিধানসভা নির্বাচনেও এই কেন্দ্রের পাঁচটি বিধানসভা কেন্দ্র দখলে রাখতে সফল হয় বিজেপি। শুধুমাত্র সিতাই এবং দিনহাটা কেন্দ্র পায় তৃণমূল।

Cooch Behar Lok Sabha : মেগা মঞ্চ কোচবিহার, কেন এই আসন এত গুরুত্বপূর্ণ বিজেপি ও তৃণমূলের কাছে?

রাজবংশী ফ্যাক্টর

লোকসভা নির্বাচনের মুখেই বিজেপিকে নিয়ে ভিন্ন সুর শোনা গিয়েছিল গ্রেটার নেতা অনন্ত মহারাজকে। পাশাপাশি, কামতা রাজবংশী পরিষদ, নাগেসিয়া কিষান আদিবাসী সমাজ, দি গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের মতো স্থানীয় প্রভাবশালী সংগঠনগুলি বিজেপি থেকে দূরত্ব বাড়িয়েছে। শুধু তাই নয়, এবারের নির্বাচনে তৃণমূলকে সমর্থনের দাবি জানিয়েছে একাধিক সংগঠন। কোচবিহারে সভা করে রাজবংশীদের পাশে দাঁড়ানোর কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অন্যদিকে, প্রচারে গিয়ে আলাদা করে রাজবংশী সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তৃণমূল সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। ফলত, তাঁরা ইভিএমে কোন বোতাম টিপবেন, তার উপর ভাগ্য নির্ধারণ করছে প্রার্থীদের

Nisith Pramanik : পাখির ডাকে ঘুমোতে যান কনফিডেন্ট নিশীথ
লড়াই যে এবার টান-টান সে কথা স্বীকার করে নিচ্ছেন কোচবিহারবাসী। ৩ থেকে ৪ শতাংশ ভোট এদিক-ওদিক হলেই ফলাফল ঘুরে যেতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। আবার অনেকেরই দাবি, রাজবংশী সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সম্প্রদায় যেমন বিজেপির সঙ্গত্যাগ করেছে, তাতে এবার শিকে ছেড়া কঠিন নিশীথ প্রামাণিকের। আবার, অনেকেরই দাবি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর জয় শুধু সময়ের অপেক্ষা। তবে, ফলাফল কী হবে, তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *