কলকাতার বিভিন্ন বাজারে একটা লেবু পাঁচ টাকা তো বটেই, এমনকী সাত টাকাতেও বিক্রির নজির রয়েছে। হোলসেল মার্কেটে লেবু বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায় চারটে হিসেবে। এমনিতেই গরমে লেবুর চাহিদা বাড়ে। তবে এ বছর বৃষ্টির অভাবে লেবুর উৎপাদন একেবারে তলানিতে বলেই জানাচ্ছেন চাষিরা।
এই পরিস্থিতিতে মনে করা যায় মনোজ বসুর লেখা ‘জামাই’ গল্পের কথা। স্বামীর জন্য থালায় খিচুড়ি বাড়ার পর পাতিলেবুর কথা মনে হয়েছিল চঞ্চলার। পাতিলেবুর গাছটা পাঁচিলের প্রান্তে। তারপর? স্বামী বিনোদ কাঁপতে কাঁপতে দেখেছিল, চঞ্চলার হাত জানলার গরাদের মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে ক্রমশ লম্বা হতে হতে প্রায় পঞ্চাশ হাত বড় হয়ে ‘পটপট করে গোটা চারেক লেবু ছিঁড়ে’ ফের ছোট হয়ে নিজের আকারে ফিরে এল।
ভূতের অস্তিত্বে বিশ্বাস করুন বা না-ই করুন, চঞ্চলার মতো একটি প্রেতাত্মার সাহচর্য পাওয়ার সুযোগ থাকলে ছাড়বেন বলে মনে হয় না। সৌজন্যে অবশ্যই লেবুর দাম। পটাপট ক’টা যদি পাশের গাছ থেকে ছেঁড়া যায়, তো মন্দ কী! রাজ্য টাস্ক ফোর্সের সদস্য এবং চাষি ভাণ্ডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কমল দে বলছেন, ‘পাতিলেবু নামে এখন যে লেবু বিক্রি হয়, সেগুলো কিন্তু প্রকৃত পাতিলেবু নয়। সবই চিনা হাইব্রিড লেবু। এর চাষ হয় নদিয়ায়। এ বার এই লেবুর উৎপাদন ভীষণ ভাবে ব্যাহত হয়েছে।’
কমল জানান, বেশ কিছু দিন ধরে বৃষ্টির অভাব এবং ভয়াবহ তাপমাত্রার প্রভাবে লেবুগাছে ফুল ধরলেও তা গাছেই ঝলসে গিয়ে ঝরে যাচ্ছে। আর যেগুলো হচ্ছে, সেগুলোর আকার বিশেষ সুবিধের নয়। তা সত্ত্বেও যে দরে পাতিলেবুর জায়গা নেওয়া চিনা লেবুগুলি বিকোচ্ছে, তাতে বিস্মিত কমল।
কলকাতার বিভিন্ন বাজারে, বিশেষত দক্ষিণ কলকাতার বাজারগুলিতে দাম অত্যন্ত চড়া। কমলের কথায় বলেন, ‘এত বেশি দাম হওয়ার কিন্তু কোনও যুক্তি নেই। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী এমন করছেন। কিন্তু শহরের ৫৫৮টা বাজারে প্রতিদিন ঘুরে নজরদারি চালানো প্রায় অসম্ভব।’
দক্ষিণ ২৪ পরগনার লেবু চাষি তপন মণ্ডলের কথায়, ‘গন্ধরাজ লেবুর সুগন্ধও গরমের দিনে দ্রুত তরতাজা করে তুলতে পারে। কিন্তু এই লেবু একটু ‘সুখী’ প্রকৃতির, দামও কিছুটা বেশি। এখন একটা গন্ধরাজ লেবু ৯-১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’ চাষিরা জানাচ্ছেন ‘গোঁড়া লেবু’ নামে আরও এক প্রজাতির লেবু বাঙালির পাতে দেখা যায়। সেটাও অনেকটা পাতি লেবুর মতো দেখতে। কিন্তু এই প্রজাতির লেবু ভরা বর্ষায় বাজারে আসে।