এই সময়, সন্দেশখালি ও কলকাতা: মধ্য কলকাতার এক আর্মস ডিলারের কাছ থেকে রীতিমত ক্যাশমেমো নিয়ে কাতুর্জ কিনেছেন একদা সন্দেশখালির ‘বেতাজ বাদশা’ শেখ শাহজাহান! জেলবন্দি শাহজাহানের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় আবু তালেব মোল্লার বাড়ি থেকে শুক্রবার বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে সিবিআই। সেইসব অস্ত্র কোথা থেকে এলো, সেই প্রশ্নের তদন্তে নেমে শাহজাহান-যোগের হদিশ পেয়েছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।

শুক্রবার দিনভর এনএসজি-র (ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড) সাহায্য নিয়ে সড়বেরিয়া থেকে অস্ত্র-বোমা উদ্ধার করে সিবিআই। ঘটনাস্থলে শাহজাহানের পরিচয়পত্র এবং বেশ কয়েকটি রসিদ পাওয়া গিয়েছিল। সেই রসিদেই ক্রেতা হিসেবে শাহজাহানের নাম উল্লেখ রয়েছে। সিবিআই সূত্রে দাবি করা হয়েছে, বাজেয়াপ্ত করা রসিদের সূত্রে জানা গিয়েছে, উদ্ধার হওয়া কার্তুজগুলি মধ্য কলকাতার এক আর্মস ডিলারের থেকে কেনা হয়েছিল।

যদিও পুলিশের কোল্ট রিভলভার-সহ বিদেশি পিস্তলগুলি কোথা থেকে এনে আবু তালেবের বাড়িতে রাখা হয়েছিল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। সিবিআই সূত্রের বক্তব্য, ‘সম্ভবত কোনও এজেন্টের মাধ্যমে ‘ডার্ক ওয়েবে’ অর্ডার দিয়ে বাংলাদেশ থেকে অস্ত্রগুলি কেনা হয়েছিল। পরে তা জমা রাখা হয় আবু তালেবের বাড়িতে।’ যদিও এদিন আবু তালেবের স্ত্রী সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার যা বলার, সিবিআইকে বলেছি।’ এই অস্ত্র রহস্যের জট কাটাতেই শাহজাহানকে জেলে গিয়ে জেরা করতে চান কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।

সন্দেশখালি থেকে ইতিমধ্যে ৩টি বিদেশি রিভলভার, ১টি কোল্ট রিভলভার (সাধারণত যা পুলিশ ব্যবহার করে থাকে) এবং একটি বিদেশি পিস্তল পাওয়া গিয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে, উদ্ধার হওয়া কার্তুজ এবং পিস্তল-রিভলভারের দাম আনুমানিক ৫০ লক্ষ টাকা। ওই আগ্নেয়াস্ত্রগুলির মধ্যে কয়েকটি আবার ইউএসএস-তে তৈরি হয়। সেগুলি পেতে গেলে লাইসেন্স এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র থাকতে হয়, না হলে চোরাই পথে আর্মস ডিলারদের বিপুল টাকা দিয়ে আনতে হয়।

প্রশ্ন উঠছে, কোন পথে পুলিশের কোল্ট রিভলভার সহ অত বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র সন্দেশখালিতে আনা হলো? এদিন, অভিযুক্ত আবু তালেব মোল্লার খোঁজ করার পাশাপাশি জমি-ভেড়ি দখল নিয়ে যাঁদের অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের সঙ্গেও কথা বলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। সিবিআই আধিকারিকরা প্রথমে রাজবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন এলাকায় যান। সেখানে তুফান মৃধা নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। তাঁর পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরে তুফানের দোকানেও যান সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা।

তবে দোকান বন্ধ থাকায় তদন্তকারীরা সেখান থেকে চলে যান সন্দেশখালি আগরহাটি গ্রামের নির্মল পাত্র এবং গৌর পাত্রের বাড়িতে। নির্মল এবং গৌরের অভিযোগ, শাহজাহান বাহিনী জোর করে তাঁদের জমি দখল করেছে। সেই অভিযোগের তদন্তে নথিপত্র খতিয়ে দেখার পাশাপাশি দখল করা জমিতেও যান সিবিআই আধিকারিকরা। সেখানে ঠিক কতটা জমি জোর করে দখল করা হয়েছে, তাও খতিয়ে দেখেন তাঁরা।

Sandeshkhali Arms Recovery : সন্দেশখালিতে পুলিশের রিভলভার উদ্ধারে রহস্য

এদিকে, লোকসভা ভোটের মুখে সন্দেশখালিতে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে। বিরোধীদের প্রশ্ন, ‘এজন্যই কি গত ৫ জানুয়ারি ইডি-কে তল্লাশিতে বাধা দেওয়া হয়েছিল?’ যদিও এই অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা কেন্দ্রীয় এজেন্সির নাটক বলে মনে করছে শাসক দল তৃণমূল। ব্যারাকপুরের তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ভৌমিক বলেন, ‘শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করেছে রাজ্য পুলিশ। ইডি-সিবিআই গ্রেপ্তার করেনি। দল তাঁকে সাসপেন্ড করেছে। এ বিষয়ে দল কোনও দায়িত্ব নেবে না।’

যদিও এই ঘটনায় রাজ্য পুলিশের ব্যর্থতার কথা শোনা গিয়েছে দমদমের তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায়ের মুখে। এদিন পানিহাটির প্রচারে তিনি মন্তব্য করেন, ‘অস্ত্র যেই রাখুক না কেন, বেআইনি অস্ত্র ধরা তো পুলিশের কাজ। এটা পুলিশেরই অপদার্থতা।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *