এই সময়: বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ চারশো আসনের লক্ষ্যে জোরকদমে এগিয়ে চলছে বলে ‘দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দু’দফাতেই বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোট লড়াইয়ের ময়দান থেকে ছিটকে গিয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীর পর্যবেক্ষণ। যদিও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্থির বিশ্বাস, প্রথম দু’দফার নির্বাচনে জনতার ‘নেগেটিভ ভোটে’র মুখে পড়েছে বিজেপি।তৃণমূলনেত্রীর পর্যবেক্ষণ, এই দু’দফার নির্বাচনে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট শতাংশও কমে গিয়েছে এবং ২০০৪-এ অটলবিহারী বাজপেয়ীর ‘শাইনিং ইন্ডিয়া’র স্লোগান যেভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছিল, এবার মোদীর ‘বিকশিত ভারত’-এর ক্যাম্পেনও গেরুয়া শিবিরকে ক্ষমতায় ফেরাতে পারবে না। তাঁর মতে, সারা দেশেই ‘বিজেপি হটাও’–এর হাওয়া উঠে গিয়েছে।

মুর্শিদাবাদ লোকসভার ভগবানগোলায় তৃণমূলের নির্বাচনী সভায় প্রথম দু’পর্বের ভোটের প্যাটার্ন নিয়ে মমতা বলেন, ‘যে দু’টো ফেজ়ে ইলেকশন হয়ে গিয়েছে, সাধারণ মানুষ বিজেপিকে ভোট দেয়নি। সামনে যাঁকে পেয়েছে, তাঁকেই ভোট দিয়েছে। নেগেটিভ ভোট হয়েছে বিজেপির বিরুদ্ধে। দেশের জন্য, মানুষের জন্য, পজ়িটিভ ভোট হয়েছে। দু’দফাতে (বিজেপির) দফারফা হয়েছে। এখনও পাঁচটি দফা রয়েছে।’

মমতা যে ‘নেগেটিভ ভোটে’র কথা বলেছেন, তা আদতে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ‘রিজেকশন’-এর ভোট বলে তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করছেন। দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে সার্বিক ভাবে প্রদত্ত ভোটের হার কমেছে। মমতার কথায় ইঙ্গিত, ভোটের হার কমার অর্থ, বিজেপির ঝুলিতেও ভোট কম পড়েছে। তাঁর কথায়, ‘শুনুন, যতদিন যাচ্ছে বিজেপির বুক কাঁপছে। কেন কাঁপছে? যদি হেরে যায়, তা হলে কী হবে? তাই বিজেপি ভয়ে কাঁপছে। দু’টো পর্বের নির্বাচনে (ওদের) ভোট শতাংশ কমে গিয়েছে।’

মমতার কথায় স্পষ্ট, প্রথম দু’দফার ভোটের প্রবণতা দেখে ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি যদি ২০২৪-এও হয়, তাহলে তিনি বিন্দুমাত্র অবাক হবেন না। ভগবানগোলার পাশাপাশি জঙ্গিপুর লোকসভার খড়গ্রামে তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘মনে রাখবেন, ২০০৪ সালে অটলজি স্লোগান দিয়েছিলেন ইন্ডিয়া শাইনিং। অটলজি অনেক ভদ্র লোক ছিলেন। এঁদের মতো নন। তা সত্ত্বেও বিজেপিকে জেতাতে পারেননি। এবার এরা যা অত্যাচার করেছে, যত তাড়াতাড়ি যায়, বাঁচা যায়। আশা করছি, এবার যাবে। বলি না আমরা-বেশি বাড় বেড়ো না, ঝড়ে পড়ে যাবে। অতি দর্পে হতা লঙ্কা।’

যদিও তৃণমূলনেত্রীর বক্তব্য খণ্ডন করেছেন বঙ্গ বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য। তিনি এ দিন বলেন, ‘দেশের মানুষ নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে রয়েছেন। প্রথম দু’দফার ভোটে বাংলাতেই তৃণমূল হারছে। বাকি পাঁচ দফাতেও মাঠের লড়াইয়ে তৃণমূলকে বিজেপি হারিয়ে দেবে। তৃণমূল রাজ্যেই ডাবল ডিজিট পার করবে না।’ মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি মনে করছে, উত্তর ভারতের দুর্গরক্ষার করার সঙ্গে এবার দক্ষিণ ভারতেও গেরুয়া শিবির বিপুল সাফল্য পাবে। বিজেপির প্রভাব মূলত উত্তর ভারতে-এই মিথ আগামী ৪ জুন ভেঙে যাবে বলেও দাবি গেরুয়া শিবিরের।

‘খাওয়াবেন তো?’ প্রচারের মাঝেই হঠাৎ কেন এমন আবদার মমতার?

মমতার রাজনৈতিক বিশ্লেষণ যদিও অন্য কথা বলেছে। তৃণমূলনেত্রীর কথায়, ‘প্রচারবাবু বলেছিলেন, এবার চারশো পার! আমি বলেছিলাম, এবার পগারপার। দু’শো পার হবে না। এটা সত্যি হলে মুর্শিদাবাদের মানুষ আমাকে খাওয়াবেন তো? শুনুন, (বিজেপি) অত স্বস্তিতে নেই। হাওয়ায় কিন্তু রটে গিয়েছে, দিল্লি থেকে উত্তরপ্রদেশে, উত্তরপ্রদেশ থেকে মধ্যপ্রদেশে, মুম্বই থেকে বিহারে, রাজস্থানে, চেন্নাইয়ে, কেরালা থেকে বাংলায়-বিজেপি হটাও, দেশ বাঁচাও, ধর্ম বাঁচাও, জাত বাঁচাও।’

নরেন্দ্র মোদীর ‘চারশো পার’ স্লোগান আরও জোরদার হয়েছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের জনমত সমীক্ষায় এনডিএ এগিয়ে রয়েছে বলে উল্লেখ করায়। যদিও এই সমীক্ষার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে মমতা ইতিমধ্যে প্রশ্ন তুলেছেন। এ দিনও তিনি বলেন, ‘(বিজেপি) নিজেরা সার্ভে করছে, সেই সার্ভে টিভিকে দিয়ে দিচ্ছে। বলছে, তোমরা এটাই দেখাও যে, বিজেপি চারশো পার হবে। চারশো কেন বলছেন ভাই? ৫৪৩টি আসন যেখানে রয়েছে, ৫৪৪ পাবে বলুন। আর একমাস মাত্র বাকি। তারপর বাজবে ঢাক। সারা ভারত জুড়ে বিসর্জন চলবে বিজেপির।’

ভোট রাজনীতিতে মমতার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে। দেশজুড়ে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ রয়েছে। সেই সূত্রেই তাঁর কাছে গ্রাউন্ড লেভেল থেকে ফিডব্যাক আসছে বলে তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য। মমতার নিজের কথাতেও সেই আভাস রয়েছে। ভগবানগোলায় তৃণমূলনেত্রীর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, ‘শুনতে কি পাচ্ছেন, দেশ কী বলছে? দু’টো ফেজ়ের নির্বাচন হয়ে গেল। শুনতে কি পাচ্ছেন মানুষ কী রায় দিয়েছে? শুনতে কি পাচ্ছেন বিহার কী বলছে? রাজস্থান কী বলছে?’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *