প্রচারে তাদের দাবিদাওয়াও চলতি পথের বাইরে। যার প্রথমেই রয়েছে হাতি সমস্যার স্থায়ী সমাধান। আর কৃষিতে সেচের জোগান। দেওয়াল লিখনেও সবার প্রথমে রয়েছে হাতি সমস্যার কথা। প্রার্থী বছর ৫৫-র নরেন্দ্রনাথ রায় সোনামুখী থানার পাঁচালের করশুলি গ্রামের বাসিন্দা। চারদিকে ঘন জঙ্গল, তার মাঝে বিঘেখানেক জমি রয়েছে। আগে চাষ করতেন কিন্তু খরচে পোষাতে না পেরে একটা মুদি দোকান করেছেন। তেল-নুন বিক্রি করেন। চাষ বন্ধ করলেন কেন?
নরেন্দ্রনাথ জানান হাতির উপদ্রবের কথা। এর সঙ্গে রয়েছে বুনো শুয়োরের উৎপাত। উত্তর বাঁকুড়ার এই সব এলাকায় রাজ চালায় দলমার হাতিরা। তাদের দৌরাত্ম্যে বাড়ি-ঘর, জমি জিরেত টিকিয়ে রাখাই দায়। ধান, আলু, সব্জি সব তাদের পেটে চলে যায়। ছাড় পায় না মানুষও। হাতির হানায় এই সব এলাকায় প্রাণহানি নতুন কিছু নয়। এর সঙ্গে রয়েছে বুনো শুয়োরের তাণ্ডব।
বলেন, ‘আমরা কেউ বন্যপ্রাণের বিরুদ্ধে নই। কিন্তু, তাদের জন্য আমাদের জীবন আজ বিপন্ন।’ দাবি করেন, ‘হাতি সমস্যার সমাধানে গঠিত সংগ্রামী গণমঞ্চের লাগাতার আন্দোলনে আজ ক্ষতিপূরণের অঙ্ক বেড়েছে। হাতির হানায় প্রাণহানিতে এক লাখ থেকে বেড়ে ক্ষতিপূরণের টাকা এখন ৫ লাখ হয়েছে।’ নরেন্দ্রনাথের প্রশ্ন, ‘এভাবে ক্ষতিপূরণ দিয়ে সব সমস্যার সমাধান হয় কি? রক্ত জল করে যে ফসল ফলানো হয়, তার ক্ষতি টাকায় মেটানো যায় না। আর যে হারে দ্রব্যমূল্য বেড়েছে তাতে ক্ষতিপূরণের টাকায় সংসার চলে না।’
বলছেন, ‘আমাদের মূল দাবি, হাতি আর সেচ সমস্যা। বড় রাজনৈতিক দলগুলোর বৈভব, খরচ, গ্ল্যামারের কাছে আমরা তুচ্ছ কিন্তু, তাঁরা কেউ এই কথাগুলো বলছেন না। তাই আমাদের কথা প্রান্তিক গ্রামের মানুষ শুনছেন। আমরাই তাঁদের মনের কথা বলছি।’ চেয়েচিন্তে প্রচারের খরচ তুলছেন। একটা ম্যাটাডোর ভাড়া করে সঙ্গীদের নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন নরেন্দ্রনাথ। পথেই রান্না করে খাওয়া। বলছেন, ‘একটা বড় গাছ দেখলে গাড়ি থামিয়ে রান্নার আয়োজন করি। পিকনিক বলতে পারেন। যেদিন যেমন জোটে রান্না করি। এতে আমাদের কোনও কষ্ট নেই।’
তাহলে কষ্ট কোথায়? নরেন্দ্রনাথ জানাচ্ছেন, মূলত জঙ্গলের উপর ভরসা করেই বেঁচে রয়েছেন এই কেন্দ্রের প্রচুর গ্রামের মানুষ। ফাল্গুনের ১৫ তারিখ থেকে চৈত্রের ১৫, এই একমাস মহুয়া সংগ্রহ করে দিন কাটে। মোটামুটি গড়ে হাজার আটেক টাকা রোজগার হয়। কিন্তু তাতে আবার হাতির ভয়ও আছে। এছাড়া শালপাতা আর কেন্দুপাতা কুড়িয়ে বিক্রি। বিড়ির জন্য জোগার করা কেন্দুপাতার দাম প্রতি কেজি ১৫০ টাকা। তবে কাঁচা পাতা নয়, শুকনো পাতা।
ফলে অন্তত ৫ কেজি কাঁচাপাতা শুকিয়ে তবেই পাওয়া যাবে বিক্রয়যোগ্য এক কেজি পাতা। তার জন্য সময়ও লাগে অনেক। নরেন্দ্রনাথ বলেন, ‘এত পরিশ্রমে নামমাত্র রোজগার হয়। তাতে কি ভালো স্বাস্থ্য, ভালো শিক্ষা কিছু হয়? আমরা এই কথাগুলোই তুলে ধরছি। জানি লড়াই অসম। কোনও তুলনাই হয় না। কিন্তু, আমাদের কথা, দাবিগুলো তো বলতে পারছি। যা আর কেউ বলছেন না।’