রাজ্যের মুখ্যসচিব বিপি গোপালিকার সই করা ওই নোটিফিকেশনে বলা হয়েছে, রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে ওই কাজ করবে। তিন বছরের জন্য নির্বাচিত করা হবে ওই কমিটিকে। কমিটির কাছে কোনও অভিযোগ জমা পড়লে তার গুরুত্ব অনুযায়ী কোনও পদক্ষেপ করার প্রয়োজন হলে কমিটি তা রাজ্যের কাছে সুপারিশ করবে। সেই সুপারিশ কার্যকর করবে রাজ্য।
যদি সেটা না হয়, তা হলে কেন সুপারিশ মানা হচ্ছে না তার লিখিত কারণ অথরিটিকে জানাবে রাজ্য। ১৯৯৬ সালে প্রকাশ সিং মামলায় সুপ্রিম কোর্ট পুলিশি ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের জন্য একগুচ্ছ নির্দেশ দেয়। তার মধ্যে প্রতিটি রাজ্য ও তার জেলাগুলিতে পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ শুনে পদক্ষেপ করার জন্য কমিটি গড়ার সুপারিশ করা হয়।
২৮ বছর পরে এ দিন রাজ্যস্তরের কমিটির কথা ঘোষণা করা হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে থানাগুলিতে পুলিশের বিরুদ্ধে ভূরি ভূরি অভিযোগ ওঠে। মূলত অভিযোগ না নেওয়া, প্রভাবশালীর পক্ষ নিয়ে অপরপক্ষকে হেনস্থা করা, মিথ্যে মামলা দেওয়া, তোলাবাজি করা, জমি দখল করা, এমনকী শ্লীলতাহানির মতো অভিযোগও উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
আর এইসব ক্ষেত্রে পুলিশের বিরুদ্ধে কখনও নিষ্ক্রীয়তা আবার কখনও অতি সক্রিয়তার মামলা হয়েছে হাইকোর্টে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমস্যার সমাধানে নিম্ন আদালতেও মামলা হয়। বর্তমানে কলকাতা হাইকোর্টে পুলিশ সংক্রান্ত এই মামলার সংখ্যা সাড়ে তিন হাজারের বেশি। যা নিয়ে এই মামলার সদ্য বিচারের দায়িত্ব পাওয়া বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ প্রায় প্রতিদিনই তাঁর দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।
এই সংক্রান্ত মামলা দায়ের হওয়ার পরে যে দিন শুনানির আবেদন করা হবে, সে দিনই তার শুনানি হবে বলে এজলাসেই আইনজীবীদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছেন বিচারপতি ভরদ্বাজ। তাই সবপক্ষকে প্রস্তুত হয়ে আসার অনুরোধ করছেন। জেলা আদালতগুলিতেও পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। বহু ক্ষেত্রে তার জন্য বিড়ম্বনায় পড়তে হয় সরকারকে। এই আবহে রাজ্যের এই কমিটি গঠন নিয়ে নানা মত তৈরি হয়েছে আইনজ্ঞদের মধ্যে।
আইনজীবীদের একাংশের মতে, এর ফলে সরাসরি কোর্টের উপরে মামলার চাপ কমার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, এই কমিটি যদি অভিযোগের মীমাংসা করে দেয়, তা হলে আর আদালতে যাওয়ার প্রয়োজন থাকবে না। যদিও আইনজীবীদের অপর অংশের ব্যাখ্যা, হাইকোর্টে আইনের যে ধারায় পুলিশ সংক্রান্ত মামলার বিচার হয়, সেখানে নাগরিকের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হলেই বিচার চাইতে আদালতের দরজায় কড়া নাড়ার সুযোগ রয়েছে।
এই নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের একাধিক রায় রয়েছে। ওই আইনজীবীদের মতে, মনে রাখতে হবে, মানবাধিকার কমিশন বা মহিলা কমিশনের মতো বিচার দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠান দেশে চালু থাকা সত্ত্বেও আদালতে মামলার সংখ্যা কমছে না।