Hilsa Fish,মানসাইয়ের মিঠে জলে ইলিশ! নোনতা স্বাদেই মাত মাথাভাঙা – hilsa fish caught fisherman nets in mansai river at cooch behar mathabhanga


এই সময়: পদ্মা বা গঙ্গা নয়। এমনকী কোলাঘাট বা রূপনারায়ণও নয়। কোচবিহারের মাথাভাঙার মানসাই নদীতে জেলেদের জালে উঠেছে ইলিশ। সোম ও মঙ্গলবার উঠেছিল প্রায় ৪০ কেজি, বুধবার মিলল আরও ১০ কেজি। চাগড় গ্রাম পঞ্চায়েতের ছাটঘাটে মানসাই নদীর উপরে থাকা একটি রেলসেতুর কাছে তিন জন মৎস্যজীবির জালে ধরা পড়েছে এই রুপোলি শস্য। ওজন ৪০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি। বাজারে বিক্রি হয়েছে ৬০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি দরে। চার বছর আগে এক বার ইলিশের দেখা মিলেছিল মানসাইয়ে। তবে দু-তিনটি। এ বার অনেক বেশি ইলিশ মেলায় জোর আলোচনা এখন উত্তরবঙ্গে।এ মাসের গোড়ায় পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে দামোদর নদেও একটি ইলিশ উঠেছিল। কিন্তু ঝাঁকে ঝাঁকে নোনা জলের ‘বাসিন্দা’ কেন মানসাইয়ের মিষ্টি জলে, কোচবিহার জেলা মৎস্য দপ্তরও বিষয়টি নিয়ে খোঁজ খবর শুরু করেছে। জেলা মৎস্য আধিকারিক প্রণব বিশ্বাস বলেন, ‘এত পরিমাণ ইলিশ পাওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা ইচ্ছে। জেলার জন্য খুশির বিষয় অবশ্যই। এর আগেও মানসাই নদীতে ইলিশের দেখা মিলেছিল। দু-তিনটির বেশি নয়। তবে সেটা তিন থেকে চার বছর আগে। ফের ইলিশ মেলায় এই নদীর সঙ্গে যুক্ত জেলেরা বাড়তি দুটো পয়সার মুখ দেখেছেন।’

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সোমবার, প্রথম দিন মাথাভাঙা বাজারে নিয়ে যাওয়ার আগেই ইলিশ বিক্রি হয়ে গিয়েছিল নদীর চরে। সেখান থেকেই একটা ছ’শো গ্রাম ইলিশ কিনে এনে তার স্বাদ চেখে দেখেছেন মাথাভাঙার কমলেশ সরকার। তাঁর কথায়, ‘সাতশো টাকা কেজিতে একটি মাছ কিনেছিলাম। কোলাঘাট, বাংলাদেশের ইলিশের মতো স্বাদ নয়। কিছুটা খেতে নোনতা। তবে এই অঞ্চলের নদীতে ইলিশ মিলেছে সেটাই বড় কথা।’

পদ্মার ইলিশ বাংলাদেশ এ বার ভারতে পাঠাবে কিনা তা নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছিল। পুজোর মুখে সেই রুপোলি শস্য ভারতে এসেছিল। তবে উত্তরবঙ্গের মানুষ ‘ঠান্ডা’ ইলিশ থেকে মানসাই-এর ইলিশ নিয়ে বেশি খুশি। একটা সময় কোচবিহারের কালজানি, রায়ডাক নদীতেও ইলিশ মিলত। সেটা দেড় দশক আগে। হঠাৎ করে তারা উধাও হয়ে গিয়েছে। আর আসছে না। তবে মাথাভা উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা দেবপ্রিয়া সরকার (মৎস্য বিজ্ঞান) বলছেন, ‘বর্ষার সময়ে ইলিশ মাছ ডিম পাড়তে সাগর থেকে মিষ্টি জলের সন্ধানে নদীতে আসে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এখন তো বর্ষা নয়? তাহলে কেন তারা এখন নদীতে আসলো? ওই মাছগুলোর পেটে ডিম রয়েছে কিনা দেখতে হবে। যদি ডিম না থাকে তাহলে অন্য কোনও কারণ থাকতে পারে।’

কোচবিহারে নদী ও পরিবেশ নিয়ে কুড়ি বছর কাজ করছেন অরূপ গুহ। তিনি বলেন, ‘মানসাই নদী মাথাভাঙার নয়ারহাট হয়ে বাংলাদেশের লালমণিরহাটে ধরলা নদীর সঙ্গে মিশেছে। ধরলা নদী আবার গিয়ে মিশেছে ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গে। ব্রহ্মপুত্র যা বাংলাদেশে যমুনা নামে পরিচিত তার সঙ্গে যোগ রয়েছে পদ্মার। এ ভাবেই পদ্মার ইলিশ চলে এসেছে মানসাই নদীতে।’ মাথাভাঙা মৎস্য সমবায় সমিতির সম্পাদক অনিল দাসও বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্র নদীর সঙ্গে মানসাই নদীর সংযোগ রয়েছে।’

পুরুলিয়ার সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যার অধ্যাপক, তথা ইলিশ গবেষক অসীমকুমার নাথ বলেন, ‘মানসাই নদীতে ইলিশ নতুন কিছু নয়। ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ইলিশ শিকার নিষিদ্ধ। কারণ এই সময় ইলিশ ডিম ছাড়তে মিঠে জলের খোঁজে স্রোতের উল্টোদিকে উপরের দিকে উঠতে শুরু করে। এই ইলিশগুলি মেঘনা থেকে পদ্মা হয়ে ফরাক্কার দিকে চলে আসে। এই সময় কিছু ইলিশ ঝাঁক থেকে ছিটকে বিভিন্ন স্রোতে ঢুকে পড়ে। যেহেতু পদ্মার সঙ্গে মানসাইয়ের যোগ রয়েছে, তাই বছরের এই সময়ে ইলিশ উত্তরবঙ্গের নদীতে পাড়ি দেয়।’

তাই বলে জলের সীমারেখা ভুলে বাংলাদেশের পদ্মা থেকে চারশো কিলোমিটার দূরে মানসাই নদীতে। ইলিশ-প্রেমেই বুঁদ এখন মাথাভাঙা।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *