সঞ্জয় রাজবংশী: পূর্ব বর্ধমানের গর্ব সাঁতারু সায়নী আন্তর্জাতিক সাফল্যের প্রতি পদে প্রতিবন্ধকতা। ‘জয় করে তবু ভয় কেন তোর যায় না?’এই দোলাচলের মধ্যে তেনজিং নোরগে অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন সায়নী দাস। সামনে সপ্তসিন্ধু জয়ের হাতছানি। তবু আশা আর আশঙ্কার দোলাচল সায়নীর মনে। সায়নী দাস, আদ্যন্ত মফস্বলি বাংলার পুকুর, ছোট পুল আর ভাগীরথী, খাল-বিলে সাঁতার কেটে যিনি হয়ে উঠেছেন আন্তর্জাতিক সাঁতারু। অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের এক জীবন্ত উদাহরণ। সাধারণ ছাপোষা মধ্যবিত্ত পরিবারের সায়নী ইংলিশ চ্যানেল থেকে শুরু করে জিতে এনেছেন পাঁচ চ্যানেল জয়ের রেকর্ড। কিন্তু এই  কঠিন যাত্রায় বাবা,মা আর সাধারণ মানুষের সাহায্য তাকে পথ চিনিয়েছে৷ 

আরও পড়ুন: IPL: ‘আইপিএলের এর চেয়ে অনেক কঠিন ঢাকা প্রিমিয়র লিগ’! বক্তা ভারতের স্টার অলরাউন্ডার…

জেলার কালনার প্রতিভাবান সাঁতারু সায়নী, যিনি ইতিমধ্যেই সপ্তসিন্ধুর ষষ্ঠ সিন্ধু জয়ের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রতিযোগিতার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর অভাব  একটি বড় সমস্যা। এর জন্য তিনি সরকারের সক্রিয় ভূমিকার আহ্বান জানান। তিনি জানান,’কালনার কোনো পুকুর বাকি রাখিনি৷ এখন ভাগীরথীতে প্র‍্যাকটিশ করি।’ সায়নী জানান, সরকার নিজেই বা কর্পোরেটকে দিয়ে সাঁতারের মত খেলার পাশে দাঁড়াতে পারেন। সুইমিংয়ে অর্থের যোগান কম।

সায়নীর মতে, অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস প্রকৃতির সঙ্গে একাত্মতা বাড়ায়। মানসিক শক্তি যোগায়। তার মতে, নতুন প্রজন্মের শিশুদের মোবাইলে আসক্তি বাড়ছে। তাদের সাঁতার বা অন্যান্য খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ বাড়ানো উচিত। এর ফলে তারা শুধু শারীরিকভাবেই নয়, মানসিকভাবেও সুস্থ থাকতে পারবে। এই বিষয়টিকে সামনে রেখে তিনি তরুণ প্রজন্মকে খেলার জগতে আসার কথা বলেন। তিনি বলেন, অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস একলা চলার ব্রত। এতে প্রাণের ঝুঁকি আছে। টাফ গেম। সেই টার্গেট নিয়েই নামতে হবে। তবে দেশের নামকে তুলে ধরার গৌরব এক  আলাদা অনুভব। 

তবে, সামনের দুটি বড় চ্যানেল জয়ের প্রস্তুতি ঘিরে তিনি কিছু প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন এই ভুবনজয়ী মেয়ে। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম আর্থিক। আর এরই মধ্যে সায়নীর বাড়িতে এসেছে খুশীর খবর। আগামী ১৭ জানুয়ারি  রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সায়নীর হাতে তেনজিং নোরগে অ্যাওয়ার্ড তুলে দেবেন। স্বাভাবিক খুশী সায়নীর পাশাপাশি তার বাবা মাও। সায়নীর বাবা রাধাশ্যাম দাস বলেন, এটা আমাদের কাছপ বড় গর্বের বিষয়। সায়নী জানান, ২০২৪ সালে একসঙ্গে দুটো চ্যানেল পার হতে গিয়ে ২৬ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। নানা সাহায্য পেয়েছেন। কিন্তু সামনে পরবর্তী চ্যানেলের জন্য প্রায় ১০ থেকে ১৪ লক্ষ টাকার এস্টিমেট  আছে। তার বাবা ইতোমধ্যে ৫ লক্ষ টাকা ঋণ করেছেন,যা শোধ হয়নি। 

আরও পড়ুন: Smriti Mandhana: রাজকোটে ইতিহাস লিখলেন স্মৃতি মন্ধানা! ভারতের দ্রুততম মহিলা হিসেবে করলেন…

এই পরিস্থিতিতে তিনি জানান,  সাধারণ মানুষকে নিয়ে  ক্রাউড ফান্ডিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।  ইতিমধ্যেই কানাডা এবং ইংল্যান্ড এবং ভারত থেকেও সাহায্য আসছে। বাকি আছে অনেকটাই। কিন্তু মানুষের উপর বিশ্বাস আছে এই জলকন্যার। তার আশা এবার কেন্দ্র সরকার নিশ্চয় তার পাশে দাঁড়াবে। ভাগীরথীর ঘোলা জল, পাড়ার পুকুর, লোকাল সুইমিং পুল থেকে সাত বছর বয়সে যে মেয়ের যাত্রা শুরু বরফ ঠাণ্ডা জল,অচেনা পরিবেশ জেলিফিস, হাঙর আর আর্থিক প্রতিবন্ধকতার হার্ডলস ডিঙিয়ে সাঁতার দিয়ে চলেছে সেই বাঙালী কন্যা সায়নী। তার চোখ সামনের দিকে। বিশ্বাস রয়েছে নিজের উপর। বিশ্বাস রয়েছে মানুষের উপর।

(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)





Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version