পার্থ চৌধুরী: পুজোয় মায়ের জন্য শাড়ি, গয়না, মিষ্টি অনেক ভক্ত অনেক কিছুই নিয়ে আসেন। তবে এবার পুজোয় স্মার্টফোন লাভ হল মা কালীর। সোমবার সন্ধ্যায় বর্ধমানের বীরহাটা বড় কালী মন্দিরে এক ভক্ত মায়ের জন্য নিয়ে এলেন অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন। সেই ফোন তিনি তুলে দিলেন প্রধান পুরোহিতের হাতে। তিনি জানালেন, আধুনিক যুগে মায়ের একটা ফোন হলে ভাল হয়। তাই তার দোকানের মালিক এটি পাঠিয়েছেন।
এদিকে বিকেল থেকেই বিরাট ভিড় বীরহাটা বড় কালীমায়ের মন্দিরে। জি টি রোডের পাশে হওয়ায় এই মন্দিরের আকর্ষণ বিরাট। ভক্তরা সবাই মায়ের কাছে তাদের পুজো পৌঁছে দিচ্ছেন। ব্যস্ত পুরোহিত ও নিরাপত্তারক্ষীরা৷ প্রধান পুরোহিত দেবাশিস মুখোপাধ্যায় জানান, এই মন্দির কয়েক শতকের পুরনো। ২০০৪ সালে এখানে অষ্টধাতুর মূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুন- Diwali 2025: কালীপুজোয় সেজে উঠেছেন নৈহাটির বড়মা! গানে গানে বন্দনা সুজয়-নবনীতার…
পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান শহরে অবস্থিত বীরহাটার কালীমন্দিরের মাতৃমূর্তি তার অভিনবত্বের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। এই মন্দিরের দেবী যেন ঐতিহ্য ও আধুনিকতার এক ব্যতিক্রমী সংমিশ্রণ। বীরহাটার এই কালী মন্দিরের মাতৃমূর্তি চিরাচরিত রূপের বাইরে গিয়ে যেন এক ‘আধুনিকা’ রূপে ভক্তদের কাছে ধরা দেন। দেবীর চার হাতে যেমন রয়েছে খড়্গ ও নরমুণ্ড, তেমনই রয়েছে আধুনিকতার প্রতীক কিছু সামগ্রী, যেমন স্মার্ট ওয়াচ। দেবীর যে হাতে অসুরের ছিন্ন মস্তক ধরা আছে, সেই হাতের কব্জিতেই বাঁধা থাকে একটি স্মার্ট ওয়াচ। এছাড়াও আছে ভ্যানিটি ব্যাগ ও অ্যান্ড্রয়েড ফোন। মায়ের অন্য একটি হাতে ঝোলানো থাকে একটি ভ্যানিটি ব্যাগ, যার ভেতরে থাকে একটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন। এগুলি ভক্তদের দেওয়া উপহার।
ভক্তরা দেবীকে নিজেদের মা মনে করেন, তাই মায়ের সুবিধা ও আধুনিক সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য এই সামগ্রীগুলি তাঁরা দেবীর হাতে অর্পণ করেছেন। এই মন্দিরের ভক্তদের মধ্যে এক গভীর বিশ্বাস প্রচলিত আছে। অনেকেই মায়ের দেওয়া নম্বরে ফোন করেন। যদিও মন্দিরের নিয়মানুযায়ী, পুজোর সময় যাতে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে, তাই ফোনটি সাইলেন্ট করে রাখা হয় এবং কেউ তা ধরেন না। তবে ভক্তদের দৃঢ় বিশ্বাস, ফোন করলে মা তাঁদের উত্তর দেন।
আরও পড়ুন- Kali Puja 2025: মা কালীর সঙ্গেই পুজো পান সত্য পীর! চেটেপুটে প্রসাদ খান হিন্দু-মুসলিম সবাই…
মায়ের ফোনের চার্জ যাতে শেষ না হয়ে যায়, তার জন্য নিয়মিত চার্জ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। ভক্তরা মনে করেন, অন্তত ফোন তো করা গেল!এছাড়াও, অনেক ভক্ত দেবীকে প্রসাধনী সামগ্রী উপহার দেন। শীতকালে ক্রিম, তেল ইত্যাদি দেওয়া হয় এবং রীতি মেনে মায়ের গায়ে সেই ক্রিম মাখিয়ে দেওয়া হয়। ভক্তরা যা বিশ্বাস করে দেন, তা মায়ের কাছে রেখে দেওয়া হয়—এটিই বীরহাটা বড় মা কালী মন্দিরের অলিখিত নিয়ম।
বর্ধমানের অন্যতম পরিচিত স্থান কার্জন গেটের কাছেই এই বীরহাটা কালীবাড়ির অবস্থান। বীরহাটা ব্রিজের ক্লক টাওয়ার পার করে কালীবাজার মোড়ের ডানদিকে গেলেই এই মন্দিরে পৌঁছানো যায়।মন্দিরে প্রতিদিন দু’বেলা মায়ের নিত্যপূজা হয়। প্রতি অমাবস্যা বা বিশেষ তিথিতে এখানে প্রচুর ভক্তের সমাগম হয়। বিশেষ করে কালীপূজার দিন বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজন মায়ের পুজো দেখতে ভিড় করেন। সারারাত ধরে চলে পূজা-অর্চনা।একসময় এখানে পশুবলির প্রথা চালু ছিল, যা বর্তমানে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখন চালকুমড়ো বলি দেওয়া হয়। কালীপূজার আগে বড় মা কালীর ঘট উত্তোলনের শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে শোভাযাত্রার মাধ্যমে ঘটিতে জল ভরে মন্দিরে নিয়ে আসা হয়।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)