প্রবীর চক্রবর্তী: বাংলায় এসআইআর ( SIR, West Bengal) হলেও ছাব্বিশের বিধানসভা (West Bengal Assembly Election 2026) ভোটে বাংলায় তৃণমূলের আসন সংখ্যা একটা হলেও বাড়বে। আর বিজেপির (BJP) আসন সংখ্যা ৫০ নীচে নামবে। মঙ্গলবার বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক থেকে এই দাবি করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)।
তিনি বলেন, বিজেপির সহকারী সংস্থা ইসি (Election Commission), বাংলায় S.I.R ঘোষণা করেছে। উৎসবের মরসুমে ঘোষণা করেছে। আমাদের কথায় এটা রিভিশন নয়, এটা মানুষকে মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা। নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা। আগে ভোটাররা সরকার নির্বাচিত করত। এখন সরকার ভোটার বাছাই করছে পছন্দমতো। আসল লক্ষ্য ত্রুটিমুক্ত ভোটার লিস্ট নয়। দেড় বছর আগেই লোকসভা ভোট হয়েছে। এই ভোটার লিস্ট ত্রুটিযুক্ত হলে, অন্যকে জ্ঞান না দিয়ে আপনি আচরি ধর্ম করুন। ইস্তফা দিয়ে S.I.R করুন।
বিজেপি ও নির্বাচন কমিশনকে (BJP, Election Commission) এক বন্ধনীতে রেখে অভিষেক বলেন, ‘২০০২ এর S.I.R সময় লেগেছিল দুই বছর। এখন বলছে দুই মাসে শেষ করবে। আগামী বছর যে সব রাজ্যে ভোট আছে, সেখানে কৌশলে আসামকে বাদ দিয়েছে। বিজেপি ক্ষমতায় আছে সেখানে। তাই সেখানে S.I.R নয়। যদিও বাংলায় হবে। তাহলে এক দেশ এক নির্বাচন গল্প দেন কেন? কমিশনের কোন নিয়মে লেখা আছে এক রাজ্যে S.I.R হবে না। অন্য রাজ্যে হবে। এর উত্তর কমিশন দিতে পারেনি’।
এর কিছুক্ষন পর মানচিত্র দেখিয়ে অভিষেক বলেন, ‘বাংলায় রোহিঙ্গা, অবৈধ বাংলাদেশী আছে বলছে বারবার। পাঁচ রাাজ্য বাংলাদেশের সীমান্ত আছে। কিন্তু S.I.R খালি হচ্ছে বাংলায়। ত্রিপুরায় বাংলাদেশী ধরা পড়ছে।মায়ানমারের সীমান্ত দেখুন (মানচিত্র দেখিয়ে), ওরা দেশাত্মবোধের কথা বলে তাই দেশের ম্যাপ দেখাচ্ছি। চার রাজ্যের সাথে সীমান্ত আছে মায়ানমারের। যদিও সেখানে হচ্ছে না S.I.R. রোহিঙ্গা যেখান দিয়ে ঢুকছেন, সেখানটাতো আটকাবেন। বাংলায় রোহিঙ্গা আসতে হলে যে সব রাজ্য দিয়ে আসবে সেটায় S.I.R বাদ কেন? এদের আসল উদ্দেশ্যে হল বাংলাকে অপমান, বাংলা ভাষাকে অপমান, মৌলিক অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া’।
বিহারের (Bihar) কায়দায় মঙ্গলবার থেকে বাংলা (West Bengal, politics)-সহ ১২ রাজ্যে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধনের (SIR) কাজ শুরু করেছে কমিশন। এদিন বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক থেকে কমিশনের এই এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়েই বড় প্রশ্ন তুললেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
‘একটা বৈধ ভোটারের নাম বাদ গেলে এক লক্ষ লোক নিয়ে দিল্লিতে গিয়ে ধরণা দেব। অমিত শাহের পুলিস কী করে দেখব’- বলেন অভিষেক।
কটাক্ষের সুরে অভিষেক বলেন,- হাইকোর্ট এক গালে, সুপ্রিম কোর্ট এক গালে থাপ্পড় মেরেছে। বাংলার ক্ষমতা কত বোঝাব আগেই বলেছিলাম। রাজ্য সরকার টাকা দিয়েছে যাদের বকেয়া ছিল। কেন্দ্রের সরকার ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকে রেখেছে। সব খাতে টাকা বন্ধ করে ভাতে মারার পরিকল্পনা নিয়েছিল। বাংলাকে অত্যাচার করতে চায়।
আরও বলেন তিনি, বিজেপি বলছে S.I.R হলে তৃণমূল কংগ্রেস হেরে যাবে। চ্যালেঞ্জ করছি একটা নাম বাদ গেলে কি হবে? আগে দিল্লিতে ট্রেলার দেখিয়েছি। এবার পুরো সিনেমা দেখাব।
‘বাংলা, মহারাষ্ট্র-উত্তরপ্রদেশ-গুজরাত নয়। বিজেপির সব ছোট-মেজো-বড় নেতা বলছে তৃণমূল হেরে যাবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন কন্যাশ্রী বা বাড়ির টাকা দেন তখন ধর্ম দেখে দেয় না। চ্যালেঞ্জ করছি গতবারের চেয়ে এক আসন বেশি পাব। বিজেপিকে ৫০ নামাব। আদালতের গাইডলাইন না মানলে আদালতে যাব আর রাজনৈতিক লড়াই করব। বিজেপি আন্ডারটেকিং দিয়ে বলুক, হেরে গেলে বকেয়া ২ লক্ষ কোটি টাকা দিয়ে দেব’- ক্ষোভ উগড়ে দেন তিনি।
‘খড়দহে আজ একজন মারা গেছে। দেখুন তো খোঁজ নিয়ে কটা বিজেপি নেতা গেছে। তাদের বাড়িতে প্রথম তৃণমূল গেছে। আমি তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেছি। সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়েছে। সেখানে S.I.R ও N.R.C কে দায়ী করেছেন। আর কত রক্ত চান জ্ঞানেশ কুমার?’ SIR নিয়ে রাজ্যবাসীর মনে হাজার প্রশ্নের ভিড়। এরই মাঝে এসআইআর নিয়ে কড়া হুঁশিয়ারি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্যায়ের।
‘যাদের কাউন্সিলর ভোটে জেতার ক্ষমতা নেই, তারা জ্ঞান দেবে? বাংলার মানুষের ভোটে যারা নির্বাচিত। তারা দিল্লির ক্রীতদাসত্ব করছে’।
অভিষেক বলেন, ‘S.I.R ঘোষণা করল কৌশলগত ভাবে, প্রশাসনকে হাতে নিতে। সরকার কাজ করবে কখন? যখন খুশি ডিভিসি জল ছাড়ছে। যখন খুশি মুখ্যসচিবকে ডেকে পাঠানো। সন্দেশখালিতে মিথ্যা অভিযোগ করা। একের পর এক ঘটনা ঘটিয়েছে। কোর্টে হেরে, ভোটে হেরে, মানুষের ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছে। আমরা মার খেয়েছি। এই জয় ২ কোটি ৫৮ লক্ষ জব কার্ড হোল্ডারের জয়’।
উত্তরবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাত দিনে দু’বার উত্তরবঙ্গে গেছে। আর যারা জিতেছে তারা কোথায়? আমাদের ভোট ব্যাংক লক্ষ্মীর ভান্ডার, কন্যাশ্রী, শ্রমিকরা।
আমাদের কাছে বহু তথ্য আছে। সেটা নিয়ে আসব। যারা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আছেন, তাদের বাবার নাম ছিল, ২০০২ সালে প্রদীপ করের মারা যাওয়ার জন্য দায়ী অমিত শাহ, জ্ঞানেশ কুমার। এফ আই আর হওয়া উচিত। প্রদীপ বাবু, সুইসাইড নোটে কী লিখেছেন দেখুন।
পুরনো পরিসংখ্যান তুলে ধরে অভিষেক বলেন, তৃণমূল কংগ্রেস নির্বাচন থেকে পালায় না। আপনারা পালান। না পালালে আপনারা বাকি থাকা দুই উপনির্বাচন বিহারের সাথে করতেন। আসলে আপনাদের হেরে যাওয়া ভয়। আগে জল, রাস্তা বন্ধ করতেন। এখন আপনারা ভোটাধিকার বন্ধ করতে চাইছেন।
রীতিমতো চ্যালেঞ্জ নিয়ে অভিষেক বলেন, ‘ব্যাকডোর দিয়ে NRC করার চেষ্টা। আমরা করতে দেব না। জ্ঞানেশ কুমার আসুন। বাংলা কিন্তু গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ নয়। আপনাদের কাছে বশ্যতা স্বীকার করব না। একজন সাংসদ হিসাবে জ্ঞানেশ কুমারকে বলব, আজ না হলেও কাল সরকার বদলাবে। তখন দেশ ছেড়ে পালাবেন না। যেখানে যাবেন খুঁড়ে নিয়ে আসব। সরকার বদলাবে সংবিধান থাকবে।
আগের মতো আবারও তিনি বলেন, S.I.R হল সাইলেন্ট ইনভেনসিভ রিগিং- বিজেপির নেতারা বলছে নাম বাদ গেলে আমরা করব। আসলে এটা বিজেপির কৌশল। আসামে কি হয়েছিল দেখুন। এদের প্রতারণায় পা দেবেন না’।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)
