এই সময়: সর্বভারতীয় নেট পরীক্ষায় বাংলায় সম্ভাব্য প্রথম হিসেবে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী আফরুজা খাতুনের নাম। তিনি বাংলা ভাষাসাহিত্যে চলতি বছর নেটে বসেছিলেন। শনিবার রাতে সেই পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর জানা যায়, ১০০ পার্সেন্টাইল মার্কস সর্বোচ্চ উঠেছে। সেই একই পার্সেন্টাইল পেয়েছেন আদতে কোচবিহারের শীতলখুচির বাসিন্দা আফরুজা। এছাড়া একই নম্বর অন্য কেউ পেয়েছন কি না রবিবার রাত পর্যন্ত তা জানা যায়নি।আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রাক্তনীর এই সাফল্যে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক এবং ছাত্রছাত্রীরা উচ্ছ্বসিত। আফরুজা নিজেও তাঁর সাফল্যে খানিকটা স্তম্ভিত। তিন-চার বারের চেষ্টার পর এই সাফল্য তিনি পেলেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ছাড়াও দেশের নানা প্রান্তের পড়ুয়ারা বসতে পারেন।

NEET Topper 2022: NEET-এ চোখ ধাঁধানো সাফল্য, দিল্লি AIIMS-এ ভর্তি হলেন মেদিনীপুরের মেয়ে দেবাংকিতা
নেটে সম্ভাব্য প্রথম হওয়া আফরুজার জীবন তাঁর পরীক্ষার সাফল্যের লড়াইয়ের সঙ্গেই সমতুল। কৃষক পরিবারের চার ভাইবোনেদের মধ্যে আফরুজা দ্বিতীয় সন্তান। এক দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ভাই সদ্য স্নাতক হয়েছে। বোন পড়াশোনা করছেন নার্সিং নিয়ে। নিম্নবিত্ত কৃষক পরিবারের সন্তান হিসেবে প্রাচুর্য তো ছিলই না বরং আজও তাঁকে যুদ্ধ করতে হয় অভাবের বিরুদ্ধে। তবে আফরুজা মনে করেন, চার ভাইবোনকে পড়াশোনা করাতে গিয়ে তাঁদের তুলনায় তাঁর বাবা-মাকেই সবচেয়ে বেশি লড়াই ও আত্মত্যাগ করতে হয়েছে।

NEET 2022 : জেদের কাছে হার মানল মারণব্যাধি, থ্যালাসেমিয়ার সঙ্গে লড়াই করে ডাক্তারিতে সুযোগ পেলেন মেদিনীপুরের ইন্দ্রাণী
এমনও দিন গিয়েছে যেখানে চার সন্তানকে পড়ানোর জন্য বন্ধক রাখতে হয়েছে চাষের জমি, বেচে দিতে হয়েছে দুধ দেওয়া গোরুকে। আফরুজার কথায়, ‘কত উৎসবে, সমারোহে দেখেছি মা একটা নতুন শাড়ি পর্যন্ত কেনেননি, বাবা সখ আহ্লাদ ফেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেবল মাঠে চাষ করে গিয়েছেন। ওঁদের লড়াইটা আমার থেকেও অনেক বড়ো।’ বাবা নিজে দশম শ্রেণির পর পড়তে পারেননি সংসারের চাপে। মা-ও ক্লাস এইট পাশ। কিন্তু বাবা-মা চেয়েছিলেন তাঁর সন্তানরা মন ভরে পড়ুক।

Visva Bharati University : বিশ্বভারতীর ভূমিকা শিক্ষামন্ত্রকের নজরে
২০১৮ সালে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৭১ শতাংশের বেশি নম্বর নিয়ে স্নাতকোত্তর পাশ করেন আফরুজা। তার আগে শীতলখুচি কলেজ থেকে পাশ করেন স্নাতক। আগাগোড়া মেধাবী এই ছাত্রী এরপর বিএড করেছেন। কিন্তু সাফল্য একবারে আসেনি। ‘গত তিনবার পরীক্ষা দিয়ে সাফল্য না আসায় মনে হয়েছিল, আর পারব না। একেবারে ভেঙে পড়েছিলাম। তারপর সেটাকেই পাথেয় করে গত এক বছর খুব মন দিয়ে পড়েছি। তারই সাফল্য বলতে পারেন’ – বলছিলেন আফরুজা। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কেই তিনি গবেষণার জন্য বেছে নিতে চান। নারীবাদী বাংলা সাহিত্য নিয়ে কাজ করতে চান তিনি।

IIT Kharagpur Student : আইআইটিতে সুযোগ পেয়েও ‘ফেরিওয়ালা’ ছোটনের পথের কাঁটা অভাব, পাশে দাঁড়ালেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী
আফরুজার সংযোজন, ‘আলিয়ার নাম নানা বিতর্কের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে। কিন্তু আমি চাই, আমাদের সাফল্যের কারণে এই বিশ্ববিদ্যালয় আলোচনায় আসুক।’ আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক সইফুল্লাহ বলেন, ‘আর্থিক অসঙ্গতির কারণে বড় মন খারাপ করে মেয়েটাকে কলকাতা ছেড়ে যেতে হয়েছিল। আমরা বার বার ওঁকে উৎসাহ দিয়েছি যেন নেট-সেটটা মন দিয়ে দেয়। ফলে ওঁর সাফল্যের আলোকে আমরাও আলোকিত।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version