নেটে সম্ভাব্য প্রথম হওয়া আফরুজার জীবন তাঁর পরীক্ষার সাফল্যের লড়াইয়ের সঙ্গেই সমতুল। কৃষক পরিবারের চার ভাইবোনেদের মধ্যে আফরুজা দ্বিতীয় সন্তান। এক দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ভাই সদ্য স্নাতক হয়েছে। বোন পড়াশোনা করছেন নার্সিং নিয়ে। নিম্নবিত্ত কৃষক পরিবারের সন্তান হিসেবে প্রাচুর্য তো ছিলই না বরং আজও তাঁকে যুদ্ধ করতে হয় অভাবের বিরুদ্ধে। তবে আফরুজা মনে করেন, চার ভাইবোনকে পড়াশোনা করাতে গিয়ে তাঁদের তুলনায় তাঁর বাবা-মাকেই সবচেয়ে বেশি লড়াই ও আত্মত্যাগ করতে হয়েছে।
এমনও দিন গিয়েছে যেখানে চার সন্তানকে পড়ানোর জন্য বন্ধক রাখতে হয়েছে চাষের জমি, বেচে দিতে হয়েছে দুধ দেওয়া গোরুকে। আফরুজার কথায়, ‘কত উৎসবে, সমারোহে দেখেছি মা একটা নতুন শাড়ি পর্যন্ত কেনেননি, বাবা সখ আহ্লাদ ফেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেবল মাঠে চাষ করে গিয়েছেন। ওঁদের লড়াইটা আমার থেকেও অনেক বড়ো।’ বাবা নিজে দশম শ্রেণির পর পড়তে পারেননি সংসারের চাপে। মা-ও ক্লাস এইট পাশ। কিন্তু বাবা-মা চেয়েছিলেন তাঁর সন্তানরা মন ভরে পড়ুক।
২০১৮ সালে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৭১ শতাংশের বেশি নম্বর নিয়ে স্নাতকোত্তর পাশ করেন আফরুজা। তার আগে শীতলখুচি কলেজ থেকে পাশ করেন স্নাতক। আগাগোড়া মেধাবী এই ছাত্রী এরপর বিএড করেছেন। কিন্তু সাফল্য একবারে আসেনি। ‘গত তিনবার পরীক্ষা দিয়ে সাফল্য না আসায় মনে হয়েছিল, আর পারব না। একেবারে ভেঙে পড়েছিলাম। তারপর সেটাকেই পাথেয় করে গত এক বছর খুব মন দিয়ে পড়েছি। তারই সাফল্য বলতে পারেন’ – বলছিলেন আফরুজা। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কেই তিনি গবেষণার জন্য বেছে নিতে চান। নারীবাদী বাংলা সাহিত্য নিয়ে কাজ করতে চান তিনি।
আফরুজার সংযোজন, ‘আলিয়ার নাম নানা বিতর্কের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে। কিন্তু আমি চাই, আমাদের সাফল্যের কারণে এই বিশ্ববিদ্যালয় আলোচনায় আসুক।’ আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক সইফুল্লাহ বলেন, ‘আর্থিক অসঙ্গতির কারণে বড় মন খারাপ করে মেয়েটাকে কলকাতা ছেড়ে যেতে হয়েছিল। আমরা বার বার ওঁকে উৎসাহ দিয়েছি যেন নেট-সেটটা মন দিয়ে দেয়। ফলে ওঁর সাফল্যের আলোকে আমরাও আলোকিত।’