পিয়ালি মিত্র: আনন্দপুর শিশু খুনের তদন্ত উঠে এল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। শুধু তাই নয়, ছেলেকে খুনের কথা স্বীকার করল বাবা। নিজের ছেলেকে মেরে ফেলার পর পাঁচশো টাকা দিয়ে ডেথ সার্টিফিকেট নিয়েছিল। জেরায় ছেলেকে খুনের ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে বিজয় নামে ওই যুবক জানিয়েছে, ঘরে তখন মদ্যপান করছিল সে। সেইসময় তার ছেলে বাথরুম যাবে বলে। মদ খাওয়ায় ব্যাঘাত ঘটায় মেজাজ ধরে রাখতে পারেনি বিজয়। সজোরে থাপ্পড় মেরে দেয় ছেলেকে। এতেই শিশুটির মাথা দেওয়ালে ঠুকে যায়। তাতেই মৃত্যু হয় তার।
আরও পড়ুন- শোয়েবকে তাঁর ভুলের পরিণাম ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝিয়ে দিলেন শামি
পুলিসের জেরায় শিশুটির বাবা যেটা জানিয়েছে তাতে চমকে যেতে হয়। চড় মারার পর শিশুটির মাথা দেওয়ালে ঠুকে য়ায়। তাতেই নেতিয়ে পড়ে সে। কিন্তু তাকে কোনও চিকিত্সকের কাছে নিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে সে চুপচাপ বসেছিল। এরপর বেশ কিছুক্ষণ পরে সে স্ত্রীকে ফোন করে। স্ত্রী এসে ঘরে ছেলের নিথর দেহ দেখতে পান। পরে স্থানীয় এক চিকিত্সককে ৫০০ টাকা দিয়ে ডেথ সার্টিফিকেট তুলে নেয় বিজয়। ওই ডেথ সার্টিফিকেটে শিশুটির ব্রঙ্কাইটিস হয়েছে লিখিয়ে নেওয়া হয়। শিশুটির মৃতদেহ ঘরেই কম্বল জড়িয়ে রেখে দেওয়া হয়। পরদিন তাকে তোপসিয়ার হিন্দু গোরস্তানে সমাধিস্থ করা হয়।
এদিকে ঘটনার পর সে ও তার স্ত্রী তার শাশুড়িকে বলে বাথরুমে বালতির মধ্যে পড়ে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। শুধু তাই নয় পুলিস ও প্রতিবেশীদের কাছে তা প্রমাণ করার জন্য বাধরুমে ট্য়াপের নীচে বালতি সাজিয়ে রাখে। সেই বক্তব্যেই তার অটল থাকে। এমনকি পুলিসের প্রাথমিক জেরায় সে তার পুরনো বক্তব্যেই অনড় থাকে। পরে টারা ১১ ঘণ্টার জেরায় ধীরে ধীরে ঘটনা জট খুলতে থাকে।
কীভাবে শিশুটির মৃত্যুতে খুনের মামলা বলে তদন্ত শুরু হল? গত ৬ নভেম্বর শিশুটির মৃত্যু হলেও শিশুটির দিদা থানায় ফোন করে তাঁর সন্দেহের কথা জানান। তাঁর দাবি ছিল নিছক বালতির জলে পড়ে শিশুটির মৃত্যু হয়নি। এর পেছনে রয়েছে অন্য রহস্য।তার পরই একটি খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিস। শিশুটির বাবা ঘটনার সময় বাড়িতে ছিল। কাজ যাওয়ার সুবাদে শিশুটির মা ছিল বাইরে। ফলে ঠিক কীভাবে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয় শিশুর দিদার মনে। ওই দিনই শিশুটির শেষকৃত্য করার চেষ্টা করে তার বাবা-মা। কিন্তু কোনও ডেথ সার্টিফিকেট না থাকায় সেদিন তা করা সম্ভব হয়নি। পরদিন ডেথ সার্টিফিকেট জোগাড় করে তোপিয়ার হিন্দু বেরিয়াল গ্রাউন্ডে শিশুটিকে সমাধিস্থ করা হয়।