একই মামলায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে এসএসসি জানিয়েছিল, তাদের হিসেবে র্যাঙ্ক জাম্প করে নবম-দশমে ১৮৩ জনকে বেআইনি ভাবে শিক্ষক পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছিল। আদালত এঁদের সরিয়ে সেখানে নতুন করে নিয়োগের নির্দেশ দেয়। এ প্রসঙ্গে এ দিন বিচারপতি বসু জানতে চান, ‘নতুন লোক কোথা থেকে নিয়োগ হচ্ছে?’ কমিশনের কৌঁসুলি জানান, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে, নিয়োগ হচ্ছে ওয়েটিং লিস্ট থেকে। আদালতের পাল্টা প্রশ্ন – এ ক্ষেত্রে এসএসসি-র নিজস্ব অবস্থান কী? জবাবে এসএসসি জানায়, এত বড় দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসার পর আদালতের নির্দেশ মেনেই সব কিছু করা হচ্ছে। নিজস্ব কোনও সিদ্ধান্ত এ ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হচ্ছে না। আদালত তখন সিবিআই আধিকারিকের কাছে তাঁদের তদন্ত প্রসঙ্গে জানতে চান।
শেনভি আদালতে বলেন, ‘নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোথাও ন্যূনতম আইন মানা হয়নি। মূল প্যানেল থেকে ওয়েটিং লিস্ট – সর্বত্র দুর্নীতি হয়েছে। ফলে যাঁরা ওয়েটিং লিস্টে রয়েছেন, তাঁরাও যে দুর্নীতি করে সেখানে জায়গা পাননি, তা বলা যাবে না।’ আদালতও মনে করে, পুরোনো প্যানেল থেকে নিয়োগ হলে, আবার দুর্নীতির আশঙ্কা থাকছে। যদিও আদালত এ দিন এ নিয়ে কোনও নির্দেশ দেয়নি। গ্রুপ ডি-তে কারা বেআইনি ভাবে চাকরি পেয়েছেন, সেই তালিকা ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকাশের জন্য এসএসসি-কে জরুরি ভিত্তিতে চেষ্টার নির্দেশ দেওয়া হয়। সিবিআইয়ের বক্তব্য শোনার পর এ দিন তদন্তকারী সংস্থাকে আশ্বস্ত করে কোর্ট বলে, ‘যা সাহায্য লাগবে, আদালতে এসে জানাবেন। আদালত সব রকম সাহায্য করবে। এই দুর্নীতির শেষ দেখা দরকার। যারা এই দুর্নীতিতে যুক্ত, তাদের কাউকে ছাড়া যাবে না।’ সিবিআই জানায়, এ পর্যন্ত প্রায় ২১ হাজার পদে দুর্নীতির হদিশ মিলেছে। এর মধ্যে ন’হাজার ওএমআর শিট বিকৃত করা হয়েছে। নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশে শিক্ষকদের বড় অংশের বেআইনি নিয়োগ হয়েছে বলেও সিবিআই জানায়।
সিবিআইয়ের বক্তব্যের মাঝেই বিচারপতি বলেন, ‘যে যোগ্য প্রার্থীরা বঞ্চিত হয়েছেন, তাঁরা শুধু ফলাফলের আশায় বসে আছেন। সিবিআই কী করল, স্কুল সার্ভিস কমিশন কী করল, তা তাঁরা জানতে চান না। তাঁরা চান নিয়োগপত্র। এই দুর্নীতির তদন্ত ও বিচার অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছে।’ এ বার তদন্ত, বিচার লক্ষ্যের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন বিচারপতি। প্যানেলের পিছন দিকে থাকা কয়েকজন প্রার্থীকে র্যাঙ্ক জাম্প করে নিয়োগের অভিযোগে গত বছর নভেম্বরে শুরু হয় তদন্ত। কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই গাজিয়াবাদ থেকে প্যানেলের তথ্য সংবলিত মূল হার্ড ডিস্ক উদ্ধারের পর ওএমআর শিটে জালিয়াতির বিষয়টি সামনে আসে। সিবিআই জানায়, ওই নথিগুলি তারা এসএসসি-কে দিয়েছে। কী ভাবে এই ত্রুটি সংশোধন করবে, সেটা তাদেরই ঠিক করতে হবে। এ বার কমিশনের উদ্দেশে বিচারপতির মন্তব্য, ‘জল থেকে কাদা সরিয়ে জলটাকে স্বচ্ছ করুন।’