বয়স বর্তমানে ৭৬ বছর। ইন্দ্রজালের দুনিয়ায় অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র পি সি সরকার জুনিয়র। দেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বের একাধিক দেশে তাঁর ম্যাজিক আজও মুগ্ধ করে মানুষকে। অথচ সত্তরোর্ধ্ব এই ম্যাজিশিয়ান নাকি ৫১ বছর আগেই তাঁর ‘দেহত্যাগ’ করেছেন। এও কি সম্ভব? একজন জীবীত মানুষ নিজের দেহত্যাগের কথা নিজেই বলছেন! তাও সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করে? তাজ্জব লাগলেও এমনটাই জানাচ্ছেন জাুসম্রাট পি সি সরকার জুনিয়র। ৫১ বছর আগের কোন উপলব্ধি উঠে এল তাঁর লেখায়?

Pice Hotel In Kolkata : ব্যস্ত অফিসপাড়ায় হাসি মুখে খাবার পরিবেশন, নেটপাড়ায় ভাইরাল মমতার পাইস হোটেল
৫১ বছর আগে কী ভাবে দেহত্যাগ করেন পি সি সরকার জুনিয়র?

ঘটনার সূত্রপাত ১৯৭১ সালে। দিনটা ছিল ৫ জানুয়ারি। পি সি সরকার জুনিয়র জানাচ্ছেন, ওই দিনই তাঁর বাবা অর্থাৎ সিনিয়র পি সি সরকার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন। সে সময় তিনি ছিলেন জাপানে। ম্যাজিক শো দেখাতেই জাপান পাড়ি দিয়েছিলেন। আচমকাই ছন্দপতন। কলকাতার বাড়িতে একটি ট্রাঙ্ককল আসে। জুনিয়র পি সি সরকার জানতে পারেন, বাবার মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুসংবাদ পাওয়া মাত্রই তাঁর দাদা আমেরিকা থেকে জাপান ছুটে যান। কিন্তু, আচমকাই সিনিয়র পি সি সরকারের মৃত্যু জাপানে ম্যাজিক শো ঘিরে এক ঘোর অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। এ প্রসঙ্গে, নিজের ফেসবুক পোস্টে বিস্তারিত লিখেছেন জুনিয়র। তিনি বলেন, “আমাদের মহাগুরু প্রয়াত হওয়ায় পুরো জাপান এই ইন্দ্রপতনে শোকস্তব্ধ, হতভম্ব হয়ে পড়ে। দলের প্রায় দু’ডজন সহকারীবৃন্দ, ৪৮ টন জাদুর সরঞ্জাম সহ, জাপানি প্রযোজকবৃন্দ অগ্রিম টিকিট বিক্রি হওয়া ৬০ খানা অনুষ্ঠানের ভবিষ্যৎ নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন।”

Rina Chowdhury : ‘ও একদম যত্ন পায়নি, আমরা কিছুই জানতাম না’, গলা বুজে এল ভাতৃহারা অঞ্জনকন্যা রিনার
কী আদেশ ছিল সিনিয়র পি সি সরকারের?

জুনিয়ার পি সি সরকার তাঁর ফেসবুক পোস্টে লেখেন, “বাবার শেষ আদেশ ছিল, দেশের গর্বের এই শো যেন বন্ধ না হয়। আমায় দাদা বললেন, বাবা তো তোমাকেই উত্তরসূরী হিসেবে ঘোষণা করে গিয়েছেন। আট-নয় বছর হল তুমি ইন্দ্রজালে বাবার সঙ্গে সহকারী হিসেবে ছিলে। বাক্স বন্দি করে সাগরে ঝাঁপ দিয়ে সফলভাবে মুক্তি পাবার ম্যাজিক দেখে বাবা খুব সন্তুষ্ট হয়েছিলেন। তুমি তোমার জাদুশিক্ষার রেজাল্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করো। আমি জ্যেষ্ঠ পুত্র এবং ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যা করার করবো।” ভাইয়ের কাঁধে দায়িত্ব দিয়ে বাবার কফিনবন্দি দেহ নিয়ে কলকাতায় ফিরে যান জুনিয়র পি সি সরকারের দাদা। সেখানেই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন তিনি। এদিকে, দলের কান্ডারী হিসেবে বাবার অসম্পূর্ণ চুক্তিপূরণে জুনিয়র থেকে গেলেন জাপানেই।

Dipankar Dey : অসুস্থ দীপঙ্কর দে? ক্ষোভ উগরে দিলেন স্ত্রী দোলন রায়
কী ভাবে ‘দেহত্যাগ’ করেছিলেন জুনিয়র পি সি সরকার?

বাবার মৃত্যুর পরই এক গভীর অনুভূতি ঘিরে ধরে পুত্রকে। তিনি জাপানে বাবার জায়গায় শো করতে গিয়ে অদ্ভুদ এক বিষয় উপলব্ধি করেন। ফেসবুক ৫ জানুয়ারি ১৯৭১ সালের সেই দিনটির কথা উল্লেখ করে জুনিয়ার পি সি সরকার বলেন, “আজকের দিনে উনি নাকি মারা গিয়েছিলেন। ভুল কথা। আজকের দিনে ‘আমি’ আমার দেহত্যাগ করেছি। তার সঙ্গে এই দেহটা আমি বাবার অমর আত্মার কাছে উৎসর্গ করেছি। বাবা গ্রহণ করেছেন। সেজন্যই এই ‘নির্বোধ’ আমি ট্রেন ভ্যানিশ, তাজমহল গায়েব করতে পেরেছিলাম। সবই আমার অন্তস্থ সেই চিরদিনের পি সি সরকার। আমার ‘আদরের’ বাবাটার কীর্তি। আমাকে আমি প্রণাম করি। শো করি। চালিয়ে যাই। যাচ্ছি। যতদিন বেঁচে থাকব, আমি আমাদের দেশের শ্রেষ্ঠত্বের ঐতিহ্য পতাকা, পৃথিবীর সবকটা দেশের থেকে অনেক উঁচুতে তুলে রাখবো। আমার মাথার উপর আমার বাবা-মায়ের এবং আপনাদের আশীর্বাদ রয়েছে। আমি ম্যাজিকের জন্যই জন্মেছি। আমার শরীরে বাবার অমর আত্মাই বসবাস করেন।”

বাবার আদর্শ এবং আশীর্বাদ মাথায় করেই ধীরে ধীরে তাঁর দেখানো পথে ইন্দ্রজালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কারিগরে পরিণত হয়েছেন। এমনটাই মনে করেন জুনিয়র পি সি সরকার। তাঁর এই ‘জাদুবল’ আদতে পিতার দান হিসেবেই দেখেন তিনি।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version