কেউ সন্দেহের ঊর্ধ্বে নন। কাউকে চোখ বন্ধ করে ভরসা করা যায় না। তাই ‘ভূত’ খুঁজতে বুথে বুথে পাঠানো ‘ওঝা’দের উপরেও এ বার নজরদারি চালাবে বঙ্গ-বিজেপি (BJP)! যাতে সর্ষের মধ্যে থাকা ভূতেরাও নিস্তার না পান। হাতিয়ার একটি অ্যাপ (App)। তা দিয়েই ‘ভূত-মুক্ত’ বুথ কমিটি গড়তে চাইছে বিজেপি। কারা এই ‘ভূত’? ‘ওঝা’ই বা কারা? গত বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্যের অধিকাংশ বুথে কমিটি গড়েছিল বিজেপি। কিন্তু দলের তৎকালীন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)-সহ বাকি নেতৃত্ব সে সময়ে টের পান, কমিটিতে বিস্তর জল মেশানো রয়েছে। এমন লোকের নাম রয়েছে, যাঁর কোনও অস্তিত্বই নেই! এ বার পঞ্চায়েত ভোটের আগে সেই সব ‘ভূত’ খুঁজতে বুথে বুথে তল্লাশি অভিযান চালানো শুরু করেছে বিজেপি! দলের নেতারা বুথে গিয়ে দেখছেন, কমিটি সদস্যরা আদপে জ্যান্ত মানুষ, না তাঁদের কোনও অস্তিত্বই নেই। এখন প্রশ্ন হলো, এই ‘ওঝা’রাও কি একশো শতাংশ নির্ভরযোগ্য? আদৌ তাঁরা বুথে বুথে যাচ্ছেন তো? না ঘরে বসেই মনগড়া রিপোর্ট দলের অফিসে পাঠিয়ে দিচ্ছেন? অতএব সংশয়মুক্ত হতে তাঁদের গতিবিধির উপরেও এ বার নজরদারি শুরু করতে চলেছে বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের (Sukanta Majumdar) নেতৃত্বাধীন বঙ্গ বিজেপি।
বিজেপি সূত্রের খবর, যে নেতারা বুথে বুথে যাবেন, তাঁদের স্মার্টফোনে একটি বিশেষ অ্যাপ ডাউনলোড করে দেওয়া হবে। অ্যাপটি জিপিএস-এর মাধ্যমে কাজ করে। অর্থাৎ, ফোনের মালিকের ভৌগোলিক অবস্থান বোঝা সহজতর হবে। বুথ সম্পর্কে কোনও নেতা যখন অ্যাপে তথ্য আপলোড করবেন, তখন তিনি কোথা থেকে সেটি করছেন, তা-ও নথিবদ্ধ হয়ে যাবে। মোট কথা, নির্দিষ্ট বুথে হাজির না-হয়ে কারও পক্ষে সেই বুথ সম্পর্কে তথ্য আপলোড করার উপায় নেই। বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, ‘ওঝা’দের মধ্যে ‘ভূত’ থাকলে, এই অ্যাপেই তা ধরা পড়ে যাবে। তবে এই কৌশল নিয়ে এখনই প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাইছেন না গেরুয়া শিবিরের কেউ। রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য, ‘এখনই কিছু বলতে চাইছি না। বিষয়টি আমরা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করব খুব শিগগিরই।’ তবে দলের এক পদাধিকারীর কথায়, ‘পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য, যুব, মহিলার মতো শাখা সংগঠনের রাজ্য এবং জেলার নেতাদের বুথে বুথে পাঠানো হচ্ছে। তাঁরা সরেজমিন খতিয়ে দেখবেন বুথ কমিটিগুলির সদস্য তালিকায় জল মেশানো রয়েছে কি না। ওই অ্যাপের মাধ্যমে তাঁদের উপরেও আমরা নজর রাখতে পারব। বিষয়টিকে ফুল-প্রুফ করতেই এই সিদ্ধান্ত।’
বিধানসভা ভোটের আগে গঠিত বুথ কমিটিগুলি কাটাছেঁড়া করে বিজেপি নেতৃত্ব দেখেন, কোনও বুথ কমিটিতে হয়তো ১০ জন সদস্যের নাম এবং ফোন নম্বর দেওয়া রয়েছে। কিন্তু খোঁজ করতে দেখা যায়, তাঁদের অনেকের অস্তিত্ব নেই। উপরতলার নির্দেশ পালন করতে কমিটিতে মনগড়া কিছু নাম ও ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে। গেরুয়া শিবিরে এই কমিটিগুলিই ‘ভূত কমিটি’ নামে পরিচিত। বিধানসভা ভোট এবং পরবর্তী সময়ে একেবারে তৃণমূলস্তরে সংগঠন নিয়ে বারেবারে সমস্যায় পড়েছে বিজেপি। তাই পঞ্চায়েত ভোটে আর কোনও ঝুঁকি নিতে চান না দিলীপের উত্তরসূরি সুকান্ত। অ্যাপেই এখন ভরসা তাঁদের।