গোওওওললললল! এই শব্দটা শুনলে এখনও গায়ে শিহরন জাগে তাঁর। কিন্তু, ভাগ্যের পরিহাসে বেহালার পৌলমী এখন জোম্যাটো ডেলিভারি গার্ল। ছেলেবেলায় অধিকাংশ মেয়েরা যখন খেলনাবাটি আর পুতুলে মজেছিল, পৌলমী তখন থেকেই বড় হয়েছে ফুটবল পায়ে। পাড়ার ছেলেদের দলে ছোট থেকেই বল পায়ে দৌড়তে দেখা যেত তাঁকে। তখন অবশ্য অনেকেই তাঁকে ছেলে ভেবে ভুল করতেন। ফুটবলই ছিল তাঁর নেশা। যা পরবর্তী হয়ে ওঠে পেশায় রূপান্তরিত হয়। জাতীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন এই স্টপার ব্যাক। কিন্তু, আর্থিক অনটন স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করেছে তাঁর। বেহালার সেই মেয়েটা এখন বাড়ি বাড়ি খাবার ডেলিভারি করে। পিঠে ফুটবল কিটের ব্যাগ নিয়ে দেশে বিদেশে ঘোরা পৌলমী এখন কাঁধে জোম্যাটো-সুইগির ব্যাগ নিয়ে এ গলি, সে গলি ছুটে বেড়াচ্ছেন। তবে পৌলমী ফিরতে চান তাঁর চেনা ফুটবল মাঠে। সেই ইচ্ছেই ভাগ করে নিলেন এই সময় ডিজিটালের সঙ্গে।

Pice Hotel In Kolkata : ব্যস্ত অফিসপাড়ায় হাসি মুখে খাবার পরিবেশন, নেটপাড়ায় ভাইরাল মমতার পাইস হোটেল
ভাইরাল পৌলমীর কাহিনি

সম্প্রতি সোশাল মিডিয়ায় এক ভিডিয়ো ঘুরে বেড়াচ্ছে। যেখানে জোম্যাটো ডেলিভারি সংস্থার পোশাক পরিহিত এক মহিলাকে দেখা গিয়েছে। জনৈক ব্যক্তির প্রশ্নে তিনি জানিয়েছেন, কী ভাবে একজন জাতীয় দলের ফুটবল খেলোয়াড় হওয়া সত্ত্বেও অর্থনৈতিক সংকট তাঁকে অনলাইন ফুড ডেলিভারির কাজে আসবে বাধ্য করেছে। ভাইরাল সেই মেয়েটির খোঁজ দিল এই সময় ডিজিটাল। জানা গিয়েছে, পৌলমী অধিকারী বেহালা শিবরামপুর এলাকার বাসিন্দা। এক সময় জাতীয় দলে একাধিক ফুটবল ম্যাচ খেলেছেন তিনি। কিন্তু, পরবর্তীতে আর্থিক সমস্যায় জেরবার পৌলমীকে সংসার সামলাতে অনলাইন ডেলিভারি সংস্থার কাজ নিতে হয়।

Kolkata Police : শহরের বাস-ট্যাক্সিতে বিশেষ ট্র্যাকার, প্যানিক-বাটন পুশ করলেই পৌঁছবে পুলিশ
পৌলমীর জার্নি

এই সময় ডিজিটালকে পৌলমী বলেন, “আমার মা অনেক ছোটবেলায় মারা গিয়েছেন। বাবা গাড়িচালক। মাসির কাছে আমি থাকি। পড়াশোনার খরচ চালানোর পাশাপাশি আমায় সংসারেও টাকা দিতে হয়। তাই ফুটবল কিট, জুতো, ডায়েট সহ খেলার জন্য প্রয়োজনীয় খরচ জোগাড় করতে আমি এই কাজ করতে বাধ্য হই। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় আমি প্রথম ফুটবল খেলা শুরু করেছিলাম।” মেয়ে হয়েও ফুটবল খেলতে ইচ্ছুক পৌলমীকে দেখে অনেকেই সে সময় অবশ্য নাক সিঁটকেছিলেন। পৌলমীর কথায়, “সে সময় অনেকেই পছন্দ করতেন না, আমি মেয়ে হয়েও ফুটবল খেলতাম বলে। কিন্তু, বরাবরই আমার এই খেলা পছন্দ। পরবর্তীতে আমি জাতীয় দলে খেলা শুরু করায় সকলে মেনে নেয়। ২০১৩ সালে ভারতীয় দলের হয়ে এশিয়া কাপ খেলেছি। অনূর্ধ ১৬ ও ১৯ দলে খেলেছি। ২০১৬ সালে গ্লাসগোতে খেলতে গিয়েছিলাম। এরপর আমার একটা চোট লাগে। চোট সারিয়ে ফিরতে সময় লেগে যায়। আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল, বাধ্য হয়ে ২০১৭ সাল থেকে জোম্যাটো, সুইগি, ওলা, উবের সমস্ত জায়গায় কাজ নিতে শুরু করি। কখনও ২০০, কখনও ৫০০ টাকা পাই। তাই দিয়ে খেলার সরঞ্জাম, কলেজের ফি জোগাড় করি।”

Kolkata Trending News : মনে রেখে দেব! কোভিডে মৃত স্ত্রীর মূর্তি গড়ে নজির কৈখালির তাপসের
সাহায্যের হাত

সোশাল মিডিয়ার দৌলতে অনেকের কাছে পৌলমী অধিকারী পরিচিত হয়ে উঠেছেন। কিন্তু, বেহালার এই মেয়েটার কাহিনি জানতে আগ্রহী সকলেই। আর্থিক অনটনের সঙ্গে লড়াই করে কী ভাবে সে ফুটবল খেলা এবং পড়াশোনার খরচ জোগাড় করছে, তা জানতে পেরে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে চান অনেকেই। পৌলমী বলেন, “আমায় ক্রিড়া দফতরে সমস্তটা জানিয়ে একটি চিঠি পাঠাতে বলা হয়েছে। দেখা যাক কতটা সুরাহা হয়।”



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version