দীর্ঘ টানাপোড়েনের পরে কেন্দ্রের অনুমোদন এসেছে, কিন্তু বরাদ্দ এখনও আসেনি। সেই কারণে বাংলায় প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পে বৈধ (Pradhan Mantri Awas Yojana) উপভোক্তাদের তালিকা চূড়ান্ত হয়ে গেলেও বাড়ি তৈরির টাকা এখনও বরাদ্দ করতে পারেনি রাজ্য সরকার। এ নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হলো রাজ্য। বৃহস্পতিবার রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকা নিয়ে বাংলার সঙ্গে দ্বিচারিতা করছে কেন্দ্র। ১১ লক্ষ ৩৬ হাজার ৪৮৮টি বাড়ি তৈরির অনুমোদন দিয়েও একপয়সা এখনও পর্যন্ত দেয়নি।’ এই পরিস্থিতিতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির কাজ কী ভাবে শেষ হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তারা। রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তর সূত্রের খবর, আবাস যোজনা প্রকল্পের টাকা দীর্ঘদিন আটকে রাখার পরে গত ২৪ নভেম্বর কেন্দ্র ১১ লক্ষ ৩৬ হাজার ৪৮৮টি বাড়ি তৈরির অনুমোদন দেয়। এই খাতে মোট খরচ হওয়ার কথা প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা। কেন্দ্র-রাজ্য ৬০-৪০ অনুপাতে দিল্লির দেওয়ার কথা প্রায় ৮২০০ কোটি টাকা। বাকি টাকা দিতে হবে রাজ্যকে। গত নভেম্বরেই কেন্দ্রের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তাদের বরাদ্দ বাবদ টাকা ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হবে। রাজ্যের প্রশাসনিক আধিকারিকদেরও দাবি, তাঁরা তৈরি। আবাস যোজনার তালিকাও চূড়ান্ত করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কেন্দ্রীয় পোর্টালে তুলে দেওয়া হয়েছে। এখন কেন্দ্রের বরাদ্দ টাকা না-আসা পর্যন্ত রাজ্যও নিজের অংশের টাকা দিতে পারছে না। অথচ বাড়ি তৈরির কাজ শেষ করতেই হবে ৩১ মার্চের মধ্যে।
এখানেই কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে রাজ্য। পঞ্চায়েতমন্ত্রীর প্রশ্ন, ‘প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালের ৫ জুন বলেছিলেন, ২০২২ সালের মধ্যে সারা দেশের মানুষের মাথার উপরে ছাদ করে দেবেন। কোথায় গেল সেই প্রতিশ্রুতি? কেন্দ্র কোনও কথা রাখেনি।’ তাঁর সংযোজন, ‘এই প্রকল্পে ৬০ শতাংশ টাকা কেন্দ্র দেয়। বাকি টাকা রাজ্যকে দিতে হয়। এ কাজে প্রশাসনিক খরচও কেন্দ্র দেয় না। ফলে কেন্দ্র ও রাজ্যের বরাদ্দের মধ্যে বিশেষ কোনও ফারাক থাকে না। আমরা আমাদের দিক থেকে টাকা ছেড়ে দিতে তৈরি। কিন্তু কেন্দ্র শুধু অনুমোদনটুকুই দিয়েছে, বরাদ্দ এখনও দিচ্ছে না। আবার প্রধানমন্ত্রীর দল এখানে বড় বড় কথা বলছে!’ এ প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, ‘আমি জানি না, কেন্দ্র কেন এখনও টাকা দেয়নি। তবে আমার মনে হয়, তালিকায় অস্বচ্ছতা রয়েছে বলেই এখনও বরাদ্দ আসছে না।’
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় অনুমোদনপ্রাপ্ত প্রতিটি বাড়ি তৈরিতে খরচ ধরা হয়েছে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। এর বাইরে বাড়িগুলিতে শৌচলয় তৈরি করে দিতে হবে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকায়। এই প্রকল্প রূপায়ণে যাতে গড়িমসি না হয়, তার জন্য প্রথম থেকেই রাজ্যকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, উপভোক্তাদের চূড়ান্ত তালিকা ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই কেন্দ্রীয় পোর্টালে তুলতে হবে। না পারলে বাংলার উপভোক্তাদের ‘কোটা’ অন্য রাজ্যে চলে যাবে। তালিকা যাচাই নিয়ে প্রথমে কিছু বিক্ষিপ্ত রাজনৈতিক উত্তেজনা, বিতর্ক হলেও রাজ্যের দাবি, সরকার ত্রিস্তরীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্বচ্ছতার সঙ্গে নির্দিষ্ট সময়ে উপভোক্তাদের চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করে ফেলেছে। তার পরে নতুন বছরের প্রথম বারো দিন কেটে গেলেও টাকার অভাবে প্রকল্প রূপায়ণের কাজই শুরু করতে পারছে না রাজ্য সরকার।