অনেকটা একই সুরে কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার বলেন, ‘এই সময় থেকে সূর্য আমাদের কাছে আসবে। তাই আরও সুন্দর ভাবে সূর্যকে কাছে পাব আমরা।’ তাঁর সংযোজন, বাংলায় বাড়িতে পিঠে-পুলি তৈরি হয়, সংক্রান্তির আগের দিন। পরদিন সে সব খাওয়া হয়। বাড়িতে খেতে পারলে, স্কুল-কলেজে পিঠে খাওয়া যাবে না কেন? রাজ্যের নানা প্রান্তে মেলা হয়। সে সব সম্পর্কেই পড়ুয়াদের অবহিত করতে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে মকর সংক্রান্তি পালনের নির্দেশ। রাজ্যের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে মকর সংক্রান্তি পালনে কেন্দ্রীয় দুই সংস্থার নিদানে ব্রাত্যর কটাক্ষ, ‘আসলে নতুন নতুন সংবিধানের ব্যাখ্যা এখন শোনা হচ্ছে। হয় তো মনু সংহিতায় আছে!’
যাদবপুরের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বলেন, ‘সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়কে এই নির্দেশ পাঠিয়েছে। আলোচনা করব। তবে আগে কোনওদিন এমন নির্দেশিকা দেয়নি।’ পুরাতত্ত্ববিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ির কথায়, ‘একবিংশ শতাব্দীতে এ রকমের নির্দেশিকার পিছনে গভীর রাজনৈতিক তাৎপর্য ও প্ররোচনা আছে।’ সারা বাংলা সেভ এডুকেশন কমিটির সম্পাদক তরুণকান্তি নস্কর জানান, ‘ইউজিসি-এআইসিটিই মকর সংক্রান্তি পালনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের যে নির্দেশ পাঠিয়েছে, তার সঙ্গে উচ্চশিক্ষার কোনও সম্পর্ক নেই। মকর সংক্রান্তি পালন মূলতঃ, হিন্দু ধর্মীয় অনুষ্ঠান। ভারতের মতো একটি বহু ভাষাভাষী ও বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির দেশে মকর সংক্রান্তি পালন কেমন করে সংস্কৃতির বন্ধন তৈরি করবে, তা বোধগম্য নয়।’ লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের অধ্যক্ষা শিউলি সরকার জানান, যে যার বাড়িতে মকর সংক্রান্তি পালন করতেই পারে। প্রতিষ্ঠানে কীভাবে পালন সম্ভব, জানা নেই! তবে তাঁর কথায়, ‘আমি একাদশ-দ্বাদশে লেডি ব্রেবোর্নেরই ছাত্রী ছিলাম। তখন থেকে এখনও কলেজ ক্যান্টিনে কড়াইশুঁটির কচুরি, দুধ পুলি, পাটিসাপটা হতো। এখনও তাই হয়। হস্টেলের আবাসিক ছাত্রীরা এতে বাড়ির স্বাদ পায়।’
আইফুকটোর সভাপতি ও ওয়েবকুটার সাধারণ সম্পাদক কেশব ভট্টাচার্যর আক্ষেপ, ‘যারা রামনবমীতে অযোধ্যায় রামের মাথায় আগে কেন সূর্যালোক পড়বে, তা দেখতে সিএসআইআরের বিজ্ঞানীদের পাঠায়, তাঁদের থেকে এর চেয়ে আর কী ভালো আশা করব?’ একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীকে তাঁর কটাক্ষ, ‘তিনি একজন মেডিকেল সায়েন্সের লোক হয়েও এ সব অবৈজ্ঞানিক বিষয়ে এত আস্থা?’