দেবাশিস দাশগুপ্ত ও সঞ্জয় দে
প্রায় বছর গড়াতে চলল, রাশিয়া-ইউক্রেন (Russia Ukraine War) যুদ্ধ থামার কোনও লক্ষণ নেই। প্রাণহানি, ধ্বংসযজ্ঞের সঙ্গে সেই যুদ্ধে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে কয়েক হাজার পড়ুয়া। যাঁদের অনেকে এই বঙ্গের বাসিন্দা। ডাক্তারি পড়তে যাওয়া সেই পড়ুয়াদের এবার রাশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পড়ার টোপ দেওয়া হচ্ছে। বাংলায় ফিরে আসা ওই পড়ুয়াদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন এজেন্সির কর্মীরা। পরিস্থিতির চাপে কেউ কেউ বাধ্য হয়েছেন সেই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে নাম লেখাতে। কেউ কেউ রয়েছেন দোলাচলে। কেউ এখনও পড়ে রয়েছেন ইউক্রেনের ধ্বংসস্তূপে। তবে একইসঙ্গে ওই পড়ুয়ারা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) প্রসস্তি করতেও ভুলছেন না। যুদ্ধ শুরু হলে ডাক্তারি পড়ুয়াদের (Doctors Students) দেশে ফেরানোর জন্য শুরু হয়েছিল আর এক যুদ্ধ। সেই সময় রুশ সরকার জানিয়েছিল, ইউক্রেন ফেরত পড়ুয়াদের সমখরচে তাদের দেশে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ করে দেওয়া হবে। রুশ সরকারের এই ঘোষণার পর সক্রিয় হয়ে ওঠে কিছু এজেন্সি।

Russia Commander : ইউক্রেন যুদ্ধে বারবার কমান্ডার বদল, ভ্যালেরি গেরাসিমভ-কে নতুন দায়িত্ব পুতিনের
ইতিমধ্যে বেশ কিছু পড়ুয়া এজেন্সির মাধ্যমে রাশিয়ায় পাড়ি দিয়েছেন ডাক্তারি পড়ার জন্য। যুদ্ধ শুরু হলে আলোচনায় উঠে এসেছিলেন ইউক্রেনে পড়তে যাওয়া দুর্গাপুরের (Durgapur) বাসিন্দা দুই যমজ বোন রুমকি ও ঝুমকি মণ্ডল। দু’জনেই ছিলেন প্রথম বর্ষের ছাত্রী। দেশে ফেরার কিছুদিন পর একটি এজেন্সির মাধ্যমে তাঁরা চলে গিয়েছেন রাশিয়ায়। সেখানে বাসখির স্টেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন তাঁরা ডাক্তারি পড়ছেন। দুই বোনের বাবা ধীরেন মণ্ডল বলেন, ‘রাশিয়াতে কোর্স ফি ২৫ লাখ টাকা। সেখানে যাওয়ার জন্য বিমানের ভাড়া জন প্রতি ৫৮ হাজার টাকা। কোর্স ফি ও বিমানের ভাড়া এ সবের মধ্যে দিল্লির ওই এজেন্সির কমিশন যোগ করা আছে।’

Russia Ukraine War Update : ইউক্রেনের হামলার বদলা, রাশিয়ার রকেটে ‘খতম’ জেলেনস্কির ৬০০ সেনা
রুমকি, ঝুমকি শুধু নন, ইউক্রেন ফেরত প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের রাশিয়ায় পড়তে যাওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছে বিভিন্ন এজেন্সি। সেই প্রস্তাব পেয়েছিলেন পাণ্ডবেশ্বরের বাসিন্দা শিবানন্দ গোপ। তবে তাতে সাড়া দেননি তিনি। ইউক্রেন ফেরত চূড়ান্ত বর্ষের এই মেডিক্যাল পড়ুয়ার মুখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা। শিবানন্দ জানান, ইউক্রেন ফেরত রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীদের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাসের সুযোগ উনি করে দেবেন বলেছিলেন। তিনি সেই সুযোগ পেয়েছেন। শিবানন্দ বর্তমানে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস করছেন। বলেন, ‘ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট আমি। রাজ্যের সরকারি মেডিক্যাল কলেজ থেকে ক্লাস করছি। তবে ফাইনাল পরীক্ষার জন্য আমাকে ইউক্রেনে যেতেই হবে।

Vladimir Putin: তৈরি ‘মীরজাফর’ জন্মদিনের আগেই পুতিনকে হত্যা! দাবি ঘিরে চাঞ্চল্য
আগামী ৪ মাসের মধ্যে ইউক্রেনে গিয়ে সেই পরীক্ষা দিতে হবে।’ মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করছেন বাঁকুড়ার সৌমাল্য মুখোপাধ্যায়ও। তিনি ইউক্রেনের ভিএন কারাজিন খারকিভ ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র। তবে এই মুহূর্তে তিনি প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস করছেন বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে। বলেন, ‘ইউক্রেনেই প্রচুর এজেন্ট ছাত্রদের রাশিয়া, রোমানিয়া, জর্জিয়ায় পড়ার প্রস্তাব দিচ্ছে। রাশিয়ার খরচ কম-বেশি প্রায় এক। ওখানকার এক জন এজেন্টকে জানি, যিনি আবার রাশিয়া বিরোধী বলে জর্জিয়ায় পড়ানোর সুযোগ করে দিচ্ছেন।’ নিজের সম্পর্কে সৌমাল্য বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আমি এখন এখানেই প্র্যাক্টিকাল ক্লাস করার সুযোগ পাচ্ছি।’ সৌমাল্য জানাচ্ছেন, বছরখানেক আগেও ইউক্রেনের মেডিক্যাল ইনস্টিটিউটগুলিতে ১৫ জনের ৫০টি গ্রুপে ৭৫০-এর মতো পড়ুয়া ছিল। এখন সেই সংখ্যা নেমে এসেছে ৩০-এ। এক একটি গ্রুপে রয়েছেন ৫-৭ জন ছাত্র। দুর্গাপুরের বাসিন্দা জিনাত আলম ও নেহা খানের কাছেও রাশিয়ায় পড়ার প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু তাঁরা সেই প্রস্তাবে সাড়া দেননি। ঝুঁকি নিয়ে তাঁরা ফের ইউক্রেনে পাড়ি দিয়েছেন। নেহার বোন নিশা বলেন, ‘ইউক্রেনে এখনও যুদ্ধ চলছে। দিদি ইভানো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। যুদ্ধ পরিস্থিতির জন্য কলেজে যেতে পারছে না। হস্টেলে থেকেই অনলাইনে ক্লাস করছে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version