বালক-বালিকার সম্পর্কের টানাপড়েনের জেরে যে সব মামলা হচ্ছে এবং তাতে যে সমস্যা তৈরি হচ্ছে, তা নিয়ে ক’দিন আগেই দেশের আইনসভাকে ভাবার পরামর্শ দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। কলকাতা হাইকোর্টেও (Calcutta High Court) এই রকমের একটি মামলার শুনানিতে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা উদ্বেগের সুরেই জানালেন, ১৫ বছরের বালক-বালিকাদের নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। আধুনিক যুগে তারা অনেক পরিণত। তাদের সঙ্গে ১৯৪৭-এর বালক-বালিকাদের তুলনা করা চলে না।
এক নাবালিকাকে ফুসলিয়ে নিয়ে যাওয়া ও বিয়ের নামে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের মামলার শুনানিতে বৃহস্পতিবার বিচারপতি মান্থার উপলব্ধি, এখন বালক-বালিকারা স্যোশাল মিডিয়ায় পারদর্শী। তারা কী করছে, সব জানে। সাবালিকা হওয়ার আগে বিয়ে আইনত অপরাধ। কিন্তু ১৫ বছরের নাবালিকারা স্বেচ্ছায় যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তাতে বিচারব্যবস্থা অনেক সময়েই অসুবিধায় পড়ছে। ফলে তাদের সিদ্ধান্তকে মান্যতা দিতে গেলে আইন লঙ্ঘনের আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। বিচারপতির সংযোজন, আদালতের পক্ষে আইনের বাইরে গিয়ে কিছু করা সম্ভব নয়। এ দিন এই মামলায় আদালতের নির্দেশ, নাবালিকা বা তার পরিবারের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করতে পারবে না অভিযুক্ত।
সম্প্রতি একটি সেমিনারে সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় ‘রোম্যান্টিক রিলেশনশিপ’-এর প্রসঙ্গ তুলে জানান, আজকের বালক-বালিকারা সচেতন ভাবেই একে অন্যের সঙ্গে মিশছে। এর পরিণতি কী, তা তারা জানে। তাই শুধু অপ্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে আইনের বিধান দিলে বাস্তব পরিস্থিতি অস্বীকার করা হবে। কিন্তু আদালতের কিছু করার নেই। তাই তিনি দেশের আইনসভাকে বিষয়টি নিয়ে ভাবার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) থেকে সদ্য অবসর নেওয়া বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নাবালকদের সম্পর্ক, ঘনিষ্ঠতা এবং পকসো আইনের প্রয়োগ নিয়ে প্রায় একই সুরে মতপ্রকাশ করেছিলেন।
কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) মামলাটির মূল প্রতিপাদ্য হলো, হাওড়ার গ্রামীণের রাজাপুর থানার বাসিন্দা অভিযুক্ত শেখ শাহজাহানের পাশের পাড়ার সাকিলার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সাকিলার বয়স ১৫। গত বছর সেপ্টেম্বরে সাকিলা হঠাৎ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়। হাইকোর্টে মামলায় নাবালিকার পরিবারের আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, সাকিলাকে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে ও ধর্ষণ করা হয়েছে। তারপর তাকে হায়দরাবাদে নিয়ে যাওয়া হয়। রাজাপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করে পরিবার।
অভিযোগ, পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। পঞ্চায়েতের সহযোগিতায় হায়দরাবাদ থেকে উদ্ধার করা হয় সাকিলাকে। অভিযুক্ত শেখ শাহজাহানের আগাম জামিন মঞ্জুর হয়। তারপর থেকে নাবালিকা ও তার পরিবারকে শাহজাহান হুমকি দিতে থাকে। পুলিশকে জানিয়েও কোনও কাজ হয়নি। শাহজাহানের আইনজীবীর দাবি, সাকিলার সঙ্গে তাঁর মক্কেলের ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল। সাকিলা গোপন জবানবন্দিতে স্বেচ্ছায় শেখ শাহজাহানের সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছে-এই বিষয়টি স্বীকার করে। সওয়াল-জবাব শোনার পরেই বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা আজকের নাবালক-নাবালিকাদের পরিণত ভাবনার প্রসঙ্গ টেনে এনে তাদের ব্যাপারে নতুন করে ভাবার কথা জানিয়েছেন।