অগ্নিসুরক্ষায় বিরাট তোড়জোড় শুরু হয়েছে নবান্নে। রাজ্যের প্রশাসনিক সদর দপ্তরে আগুনের সম্ভাব্য বিপদের ঝুঁকি এড়াতে অত্যাধুনিক পরিকাঠামো নির্মাণ ও আরও কিছু নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা সংযোজনের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। মহাকরণের তুলনায় নবান্ন বয়সে অনেক নবীন ভবন হলেও সেখানে অগ্নিসুরক্ষায় কিছুটা ফাঁকফোকর থেকে গিয়েছে বলে সরকারি কর্তাদের একাংশের আশঙ্কা।
অথচ নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী-সহ রাজ্য মন্ত্রিসভার বেশ কেক জন সদস্য ও প্রশাসনিক শীর্ষ অফিসারদের দপ্তর রয়েছে। তা ছাড়া, প্রতিদিন বহু কর্মী এবং বিভিন্ন প্রয়োজনে অসংখ্য মানুষের আনাগোনা রয়েছে নবান্নে। তাই, নিশ্ছিদ্র অগ্নিসুরক্ষা নিশ্চিত করতে চায় সরকার। নবান্নে অগ্নিসুরক্ষার বন্দোবস্ত আঁটসাঁট করতে একটি বিশেষ কমিটিও গঠন করা হবে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। মূলত, পূর্ত দপ্তরের স্থপতিদের উপরেই এই কাজের গুরুদায়িত্ব বর্তেছে।
কী কী ব্যবস্থা রাখা হবে নবান্নে?
প্রশাসন সূত্রের খবর- ১) যে কোনও বহুতলে আগুন লাগলে লিফ্ট ব্যবহার নিরাপদ নয়। সেই সময়ে আগুন ধরে যাওয়া বহুতল থেকে বেরোতে হলে প্রাথমিক ভরসা সিঁড়ি। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়লে, গোটা বাড়িকে ধোঁয়া গ্রাস করলে সিঁড়ি দিয়ে নামাও দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। সে কথা মাথায় রেখে নবান্নে একাধিক সিঁড়িকে ‘অগ্নিনিরোধক’ করার কথা ভাবা হচ্ছে।
সেই জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে ‘প্রেশারাইজ়্ড স্টেয়ারকেস’-এর মডেল। এই ধরনের সিঁড়িতে যান্ত্রিক ভাবে বিশেষ সুরক্ষা পরিকাঠামো থাকে। আগুন লাগলে প্রথমে এই ধরনের সিঁড়ি লাগোয়া দরজা খুলে দেওয়া হয়, যাতে লোকজন বেরোতে পারে। যান্ত্রিক ভাবে সিঁড়িতে এমন ভাবে বাতাসের চাপ বা এয়ার প্রেশার নিয়ন্ত্রণ করা হয়, যাতে বেরোনোর পথ মুক্ত থাকে ধোঁয়া ও আগুনের তাপ থেকে।
২) বহুতলগুলোর উপরের তলায় আগুন লাগলে বেরোনোর অন্যতম উপায় বা পথ হিসেবে ‘শুট’ রাখার কথাও বিবেচনা করছেন স্থপতিরা। এই শুট হলো বৃত্তাকার নির্গমন পথ, যা দিয়ে দ্রুত ও সহজে মানুষের নিরাপদে বেরোনোর সুযোগ রয়েছে। এর ব্যবহার অনেকটা শিশুদের খেলার স্লিপের মতো। অগ্নিরোধক বিশেষ বস্তু দিয়ে এখন ওই শুট তৈরি করা হয়।
মার্কিন মুলুকের আটালান্টার সাবেক জর্জিয়া ব্যাপটিস্ট হাসপাতালে (পরে নাম বদলে হওয়া আটলান্টা মেডিক্যাল সেন্টার) আগুন লাগলে শুট ব্যবহার করে মিনিট কয়েকের মধ্যেই ওই হাসপাতাল খালি করা হয়েছিল।
৩) জরুরি পরিষেবায় অগ্নিপ্রতিরোধক বিশেষ ধরণের লিফ্টের সংস্থানও থাকতে পারে নবান্নে। ‘প্রেশারাইজ়্ড স্টেয়ারকেসের’ মতো ওই লিফ্টগুলোতেও বাতাসের চাপ যান্ত্রিক পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ করে আগুনের তাপ ও ধোঁয়া থেকে মানুষকে রক্ষা করার ব্যবস্থা থাকে।
৪) থাকছে সিলিনড্রিকাল লিফ্টের ব্যবস্থাও। এই ধরনের লিফ্ট নবান্নের বাইরের দিকে বসানো থাকবে। ফলে, ভবনের অন্দরে আগুন লাগলে বাইরের এই পরিকাঠামো অপেক্ষাকৃত নিরাপদ বলে বিবেচিত হয়। এই সব ব্যবস্থার পাশাপাশি, নবান্নে যে ফায়ার অ্যার্লাম বা ওয়াটার স্প্রিঙ্কলার রয়েছে, সেগুলোও আরও উন্নত করার কথা ভাবা হচ্ছে।