মণিপুষ্পক সেনগুপ্ত
শক্তিশালী বুথের সঙ্গে জোরদার বাইক বাহিনীর যোগসূত্রটা ঠিক কোথায়? যোগসূত্র একটা কিছু যে আছে, তার ইঙ্গিত মিলিছে বঙ্গ-BJP-র সাম্প্রতিকতম একটি ‘গোপন’ সার্কুলারে। পঞ্চায়েত ভোটের মুখে BJP ‘বুথ সশক্তিকরণ’, সোজা কথায় প্রতিটি বুথকে শক্তিশালী করে তোলার অভিযান শুরু করেছে। সেখানে জোর দেওয়া হয়েছে বুথে বুথে মোটর বাইক আছে, এমন BJP সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর উপর।

BJP সূত্রের খবর, রাজ্য থেকে জেলায় জেলায় ‘বুথ সশক্তিকরণ অভিযান’ কর্মসূচির যে ফিরিস্তি পাঠানো হয়েছে, তাতে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। স্বভাবতই BJP-র অন্দরে প্রশ্ন উঠেছে, বুথে বুথে দক্ষ সংগঠক এবং কর্মী তৈরির সঙ্গে মোটর বাইক থাকা বা না-থাকার কী সম্পর্ক?

Purba Medinipur : কাঁথি পুরসভা নির্বাচনের বর্ষপূর্তি, ‘ছাপ্পাশ্রী দিবস’ পালন করল BJP
রাজ্য BJP নেতৃত্বের অবশ্য দাবি, মোটর বাইক থাকলে অল্প সময়ের মধ্যে অনেকটা এলাকা জুড়ে জনসংযোগের কাজ করা যায়, ভোটারদের বাড়ি বাড়ি ঘুরতে সুবিধে হয়। তা ছাড়া, অন্য কোনও কারণ নেই বলে বঙ্গ-BJP নেতৃত্বের দাবি।

কিন্তু মজবুত বুথ সংগঠন তৈরি করতে BJP-র এই পরিকল্পনা ও পদক্ষেপের মধ্যে অন্য গন্ধ পাচ্ছে তৃণমূল। রাজ্যের শাসক দলের মতে, পঞ্চায়েত ভোটে অশান্তি পাকানোর জন্যই বিজেপি বুথে বুথে বাইক বাহিনী তৈরি করতে চাইছে। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেনের দাবি, সাধারণ মানুষের সঙ্গে বিজেপির দূরত্ব ক্রমে বাড়ছে।

তাই, পঞ্চায়েত ভোটে নিশ্চিত পরাজয় আঁচ করেই BJP বাইক বাহিনী নামিয়ে ভোটারদের ভয় দেখানোর পরিকল্পনা করছে। শান্তনুর কথায়, “অতীতের CPIM-র কায়দায় বাইক বাহিনী তৈরি করছে BJP। কারণ, BJP বুঝে গিয়েছে, বুথে কর্মী খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই, সংগঠন ছেড়ে বাইক বাহিনী তৈরিতেই বেশি মনোযোগ দিয়েছে গেরুয়া শিবির। এ সবই পঞ্চায়েত ভোটে গন্ডগোল করার ব্লু-প্রিন্ট!”

Sagardighi By Election: বুথে ঢুকে ‘দাদাগিরি’ দুই প্রার্থীর, সাগরদিঘির ভোটে অশান্তির অভিযোগ
পাল্টা BJP-র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলছেন, “আজকের দিনে বাইক ছাড়া সংগঠন হয় নাকি! পায়ে হেঁটে সংগঠন করা যায়? তৃণমূল নেতারা পায়ে হেঁটে এক বুথ থেকে অন্য বুথে যান?” সুর চড়িয়ে দিলীপের আরও বক্তব্য, “বাইক বাহিনী আছে তৃণমূলের। আমরা বাইকওয়ালা খুঁজছি দেখে তৃণমূল নেতারা চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন। ভাবছেন, প্রতিরোধ হবে। তৃণমূলের বাইক বাহিনীর প্রতিরোধ কিন্তু হবেই। সেটা সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বিজেপি কর্মীরা করবেন।”

বামফ্রন্ট জমানার শেষের দিক থেকে ভোট এলেই ‘বাইক বাহিনী’র দৌরাত্ম্যের অভিযোগে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। যুযুধান সব রাজনৈতিক দলই একে অন্যের বিরুদ্ধে বাইক বাহিনী নামিয়ে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলছে। নির্বাচন কমিশন ভোটের প্রচারে এবং প্রচার শেষ হওয়ার পরেও মোটর বাইক নিয়ন্ত্রণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

সেখানে রীতিমতো বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পঞ্চায়েত ভোটের মুখে বাইক আছে, এমন দলীয় কর্মীর সন্ধান বোধহয় প্রথম কোনও রাজনৈতিক দলকে করতে দেখা গেল। BJP নেতৃত্বের তরফে অবশ্য স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বাইক আছে, এমন BJP কর্মীর হদিশ বুথে বুথে করা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তার সঙ্গে বাইক বাহিনীর কোনও সম্পর্ক নেই। গোটাটাই করা হচ্ছে কর্মীদের গতিশীল করে নিচু তলার সংগঠন মজবুত করার স্বার্থে।

Sagardighi By Election : ‘জোট প্রার্থীর সঙ্গে BJP-র কোনও আতাঁত নেই’, সাগরদিঘি উপনির্বাচন চলাকালীন কংগ্রেসের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময়ে দিলীপ সাহা
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে রাজ্যের সর্বত্র ‘বুথ সশক্তিকরণ অভিযান’ শুরু করেছে BJP। চলবে ২ এপ্রিল পর্যন্ত। তিন দফায় এই কর্মসূচি পালিত হবে। এই কর্মসূচি পালনের জন্য প্রতিটি বুথে ১১ জনের কমিটি তৈরি করতেও বলা হয়েছে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version