জরিমানা নিয়ে বেআইনি নির্মাণকে ‘বৈধ’ করার কাজ কলকাতায় শুরু হয়েছিল অনেক বছর আগেই। তার দৌলতে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা রোজগার করে কলকাতা পুরসভা। এ বার সেই আইনি ক্ষমতা পেতে চলেছে রাজ্যের অন্য পুরসভাগুলিও। রাজ্যে যত পুরসভা রয়েছে, সেখানে কোনও বেআইনি নির্মাণ হলে তাকে বৈধতা দিতে পারবে স্থানীয় পুরবোর্ড।
তার জন্য ‘বেঙ্গল মিউনিসিপ্যালিটি অ্যাক্ট’-এ নতুন ধারা যুক্ত হতে চলেছে। প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, ছোটখাটো (মাইনর) কোনও বেআইনি নির্মাণ হলে তাকে আইনসিদ্ধ করতে পারবে সেখানকার পুরবোর্ড। তার জন্য বাড়ির মালিকের কাছ থেকে ‘ফি’ নিতে পারবে তারা। ফি-এর পরিমাণ কত হবে, তা রাজ্য সরকার ঠিক করে দেবে।
এত দিন বাদে হঠাৎ করে কেন পুর এলাকায় বেআইনি নির্মাণকে বৈধ করার দরকার পড়ল?
সরকারি সূত্রের খবর, সাধারণ মানুষকে একটু বাড়তি সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি পুরসভার রোজগার বাড়াতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আইনি ক্ষমতা পেলে পুরসভাও জরিমানা নিয়ে বেআইনি নির্মাণকে আইনসিদ্ধ করতে পারবে। তাতে দু’পক্ষই লাভবান হবে।
অনেকে অবশ্য আশঙ্কা করছেন, প্রস্তাবিত আইনে ‘ছোটখাটো’ বেআইনি নির্মাণকে ছাড়পত্র দেওয়ার কথা বলা হলেও তার কোনও পরিমাপ ঠিক করে দেওয়া হয়নি। সেই ফাঁক গলে অদূর ভবিষ্যতে মফস্সলে বেআইনি নির্মাণের প্রবণতা অনেকটাই বাড়বে। এর উল্টো মতও অবশ্য রয়েছে। পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের এক ইঞ্জিনিয়ারের ব্যাখ্যা, অনেক সময়ে একটা ছোট নির্মাণ রাস্তায় যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটায়।
আবার কোথাও হয়তো একটা বেআইনি নির্মাণ হয়েছে যেটা কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে না। ফলে কোনও বেআইনি নির্মাণকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে কিনা, সেটা সামগ্রিক পরিস্থিতি বিচার করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সেজন্য প্রস্তাবিত আইনে বেশ কিছু শর্ত রাখা হয়েছে। যেগুলো দেখে পুরবোর্ড কোনও বেআইনি নির্মাণকে ছাড়পত্র দিতে পারবে। যেমন, বেআইনি নির্মাণ নিয়ে আশপাশের লোকেদের কোনও অভিযোগ আছে কি না।
রাস্তা অবরুদ্ধ হলে কিংবা নিকাশি ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হলে অবৈধ নির্মাণকে বৈধ করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে। যেখানে দমকলের অনুমতি লাগবে, সেটা থাকতে হবে। বাড়ির কাঠামোগত নিরাপত্তা বা ‘স্ট্রাকচারাল সেফটি’ ঠিক রয়েছে কি না এবং পরিবেশগত কোনও সমস্যা তৈরি হতে পারে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে। কেন বেআইনি ভাবে নির্মাণ করা হয়েছে, সেটিও বিবেচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।
নির্মাণশিল্পকে উৎসাহ দিতে বাড়ানো হচ্ছে বাড়ির ‘গ্রাউন্ড কভারেজ’ (ছাড় দিয়ে যতটা জায়গার উপর বাড়িটা তৈরি হয়েছে)। জমির আয়তন ৩-৫ হাজার বর্গফুট হলে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ গ্রাউন্ড কভারেজ বাড়বে। সেই জায়গায় কার পার্কিং, সিঁড়ি, লিফট, এসি প্লান্ট, জেনারেটর রুম, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা এবং ইলেকট্রিকের যন্ত্রপাতি বসানো যাবে। ৫ হাজার বর্গফুটের বেশি জমি থাকলে ১৫ শতাংশ গ্রাউন্ড কভারেজ বাড়ানো হবে।
তবে পুরো বিষয়টিতে একটি সমস্যাও রয়েছে। কোনও প্রতিবেশী যদি মনোমালিন্যের জেরে কারও নামে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ করেন, সে ক্ষেত্রে পুরসভাকে সেই অভিযোগের সত্যতা খতিয়ে দেখতেও আসতে হবে। সেই অভিযোগের নিরসন করা পরিশ্রমসাধ্য তো বটেই, সময়সাপেক্ষও।