বিধানসভায় সোমবার ফিন্যান্স বিলের উপরে আলোচনায় সারদা কেলেঙ্কারি প্রসঙ্গে সিপিএম নেতৃত্বকে নিশানা করেন মমতা- ‘সারদা কার আমলে হয়েছিল? সিপিএমের আমলে হয়েছিল। কার শ্বশুরের কাছে জায়গা নিতে গিয়েছিল? কার শ্বশুরের কাছে গিয়ে বিষ্ণুপুরে জমি নেওয়া হয়েছিল? বারুইপুরে জমি নেওয়া হয়েছিল? কই তাঁদের বাড়িতে তো সিবিআই গেল না? ইডি গেল না তাঁদের বাড়িতে?’
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০১৪ সালে সারদা তদন্ত শুরু করে সিবিআই। রাজ্যের তৎকালীন পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্রকে সিবিআই গ্রেপ্তার করে। কিন্তু সিপিএমের কোনও নেতাকে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা গ্রেপ্তার করেনি। সিপিএম নেতা রবীন দেবকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আর রাজ্য সরকার গঠিত সিট তাদের তদন্তে সুজন চক্রবর্তীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল।
কিন্তু কোনও বাম নেতার বাড়িতে সিবিআই বা ইডি তল্লাশি করেনি। এই প্রেক্ষাপটেই মমতা এ দিন বলেন, ‘আমাদের এক আইনজীবী, যিনি রাজ্য সরকারের আইনজীবী হিসেবে নথিভুক্ত, তাঁর বাড়িতে ইডি চলে গেল। টানা ৩৬ ঘণ্টা ওই আইনজীবীর বাড়িতে তল্লাশি চালাল। যদি আমরা মেঘালয়ে ভালো ফল করি, তা হলে চাপ তৈরি করবে বলেই গিয়েছিল। মেঘালয়ের ফল প্রকাশিত হওয়ার পরে বাবুরা তাঁর বাড়ি থেকে চলে গেল। আজকে শুনছি রাবড়ি দেবীর বাড়িতেও গিয়েছে। কাকে বাদ রেখেছে?’
মমতা সরাসরি আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের দিকে নিশানা করায় সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘২০০৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বামেদের বিপর্যয় হওয়ার পরে তৃণমূলের সৌজন্যে সারদা-সহ সমস্ত চিটফান্ডের বাড়বাড়ন্ত শুরু হয়। ২০১৪ সালে সিবিআই তদন্ত শুরু হওয়ার আগে রাজ্য সরকারের সিট এক বছর ধরে তদন্ত করেছিল।
কেন সিপিএমের একজন নেতাকেও সিট গ্রেপ্তার করতে পারেনি? সিট তো অনেক তল্লাশি করেছিল। কিন্তু কিছুই পেল না কেন?’ সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে শুভেন্দু অধিকারী এ দিনই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চার পাতার চিঠি দিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, এই আর্থিক কেলেঙ্কারির সবথেকে বড় ‘সুবিধাভোগী’কে কেন সিবিআই ধরছে না? সিবিআই সারদার ‘সবথেকে বড় সুবিধাভোগী’কে ধরতে অনিচ্ছুক বলে টুইটে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা।
প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে ডেলো পাহাড়ে সারদা কর্তার সঙ্গে তৃণমূলনেত্রী বৈঠক করেছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এ দিন বিধানসভার প্রেস কর্নারে শুভেন্দু বলেন, ‘সারদার সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্কের যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। কেন সিবিআই দ্রুত তদন্ত করছে না? সারদা কেলেঙ্কারিতে তৃণমূল নেত্রীকে ধরতে হবে।’
শুভেন্দুর এই অভিযোগের কড়া জবাব দিয়েছে তৃণমূল। দলের রাজ্যসভা সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, ‘কার্গিল থেকে সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রেপ্তার করে এনেছিলেন। প্রতারিতদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য পাঁচশো কোটি টাকার তহবিল তৈরি করেছিলেন। সেখানে সুদীপ্ত সেনের চিঠিতে রয়েছে শুভেন্দু অধিকারী টাকা নিয়েছেন।
নারদা কেলেঙ্কারির টাকা নিতে দেখা গিয়েছে যে ব্যক্তিকে, সেই নেতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেপ্তার করার দাবি করছেন! এর থেকে হাস্যকর কী রয়েছে? সিবিআই-এর উচিত আগে শুভেন্দু অধিকারীকে গ্রেপ্তার করা।’