হেমাভ সেনগুপ্ত, বোলপুর:
কেষ্টর সঙ্গে তাঁর মাখামাখি কোনওকালেই ছিল না। বরং ‘কালি’ লাগার ভয়ে কাজল থেকে দূরত্ব রাখতেন তিনি। অনুব্রতহীন বীরভূমের ফাঁকা মাঠে আচমকাই দলনেত্রী নানুরের কাজল শেখকে কোর কমিটিতে জায়গা দেওয়ায় লালমাটির দেশে এখন অন্যচিত্র। দলের অন্দরে কাজল বিরোধীদের মুখ বন্ধ। নেই টু-শব্দ।

শুক্রবার কলকাতায় গিয়ে পুরমন্ত্রী তথা বীরভূমের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে কাজল বৈঠক করায় জেলায় এখন তাঁর হাই-পাওয়ার। তবে কি এবার নতুন সমীকরণ? অনুব্রত মণ্ডল গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই বীরভূম জেলা তৃণমূলের অন্দরে অস্বস্তিকর পরিবেশ।

Kajal Sekh : ‘এক সেকেন্ডও টিকতে পারবেন না…’, বিশ্বভারতীর উপাচার্যকে হুঁশিয়ারি তৃণমূল নেতা কাজল শেখের
পরিস্থিতি সামাল দিতে গত ৩০ জানুয়ারি বীরভূমে এসে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৭ জনের কোর কমিটি গঠন করে দেন। সেই কমিটিতে রয়েছেন চার বিধায়ক (চন্দ্রনাথ সিনহা, বিকাশ রায় চৌধুরী, আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিজিৎ সিংহ), দুই সাংসদ (শতাব্দী রায় ও অসিত মাল) ও নানুরের তৃণমূল নেতা কাজল শেখ। প্রত্যেক সপ্তাহে কোর কমিটির সদস্যদের বৈঠক করে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের নির্দেশ দেন মমতা।

কিন্তু, এই নির্দেশের পরে দেড় মাস কেটে গেলেও কোনও বৈঠক হয়নি। ইতিমধ্যে এই নিয়ে একাধিকবার ফোঁস করেছেন কাজল। হেভিওয়েটদের বিরুদ্ধে তিনি মুখ খোলায় আড়ালে আবডালে তাঁকে সমর্থনও করেছেন দলের অনেকে, যা তাঁকে বাড়তি মাইলেজ দিয়েছে।

Birbhum BJP : কেষ্ট-হীন বীরভূমে আরও এক কদম, বগটুইয়ে শহীদ দিবস পালন করতে চলেছে BJP
যদিও কোর কমিটির সদস্য বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, “সব নেতানেত্রী দিদির দূত কর্মসূচিতে টানা ব্যস্ত। তাই কোর কমিটির মিটিং হয়নি। খুব শীঘ্রই বৈঠকে বসা হবে।” মিটিং-কবে হবে, চাতকের মতো বসে না-থেকে কাজল অবশ্য নিজেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন গ্রামে গ্রামে।

বসে যাওয়া পুরোনো কর্মীদের সম্মান দিয়ে দলে ফেরাতে শুরু করায় নীচুতলায় ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন তিনি। পঞ্চায়েত ভোটের আগে এটাকেই ‘তুরুপের তাস’ করে দলের অন্দরে জনপ্রিয়তা বাড়ানোর কৌশল নিয়েছেন তিনি। ‘হরিহর আত্মা’ থেকে ‘শত্রু’ হয়ে ওঠা নানুরের প্রাক্তন বিধায়ক গদাধর হাজরার সঙ্গেও সম্পর্ক মেরামত করে নিয়েছেন।

Shatabdi Roy : ‘অনুব্রতর স্বাস্থ্যের অবনতি হলে দায়ী থাকবে ED-CBI’, হুংকার শতাব্দীর
কলকাতায় গিয়ে ফিরহাদকে নিজের কাজের রিপোর্ট জমা দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন কাজল। পঞ্চায়েত ভোটে ‘অনুব্রত দাওয়াই’-এর পরিবর্তে কী ফোঁড়ন দেবেন, সেকথাও নাকি লেখা রয়েছে ওই রিপোর্টে। অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার দিন থেকে কার্যত শুনশান বোলপুরে দলের জেলা কার্যালয়।

যে ক’জন পার্টি অফিসে আনাগোনা করছেন, তাঁদের মুখেও রা নেই। পঞ্চায়েতে তবে কী হবে? কে হাল ধরবে? ভাবনা ছেড়ে কাজল কিন্তু ঘর গোছাতে শুরু করেছেন। ইতিমধ্যেই নানুর বিধানসভার এলাকার প্রতিটি ব্লকে ঘুরে ঘুরে কর্মী সন্মেলন করেছেন।

অঞ্চল কমিটি, বুথ কমিটি গঠনের কাজও শুরু করেছেন। বুথ কমিটি থেকে পঞ্চায়েত ভোটের প্রার্থীর নাম দেওয়ার কথা বলে নীচুতলার কর্মীদের বাড়তি ক্ষমতাও দিতে শুরু করেছেন কাজল। অনেকে তাই বিরোধীতা ছেড়ে তাঁর সঙ্গী হয়েছেন।

Trinamool Congress : ‘অনুব্রতকে কষ্ট দিলে BJP কর্মীরাও তা অনুভব করবে…’, হুঁশিয়ারি তৃণমূল নেতার
শনিবার ‘এই সময়’কে তিনি বলেন, “সাধারণ কর্মী থেকে আমাকে দলের কোর কমিটির সদস্য করেছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর একটাই কারণ, আমি কোনওদিন ধান্দা করার জন্য দল করিনি। দেড় মাস হয়ে গেল। আজও কোর কমিটির বৈঠক হল না। এবার আমিই খোদ দলনেত্রীকে বিষয়টি জানাব।” তবে কি তাঁর হাতেই এবার বীরভূমের ‘রিমোট কন্ট্রোল’? উত্তর এখনও অজানা।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version