এত দিন জেরার মুখে কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন শান্তনু। তবে ইডির দাবি, সম্প্রতি তাঁর নীরবতা ভাঙানো গিয়েছে। তাঁকে জেরা করে বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গিয়েছে, যাঁদের কাছে টাকা পাঠাতে হতো শান্তনুকে। ইডির ওই সূত্রের দাবি, এঁদের মধ্যে এমন একজন রয়েছেন, যাঁর নাম চমকে দেওয়ার মতো। রাজ্যে তিনি পরিচিত ‘বড় নেতা’ হিসেবে। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ২১-২২ মার্চের পর সেই ‘বড় নেতা’-সহ বাকিদের একে একে তলব করতে চাইছে ইডি।
এ দিন আদালত থেকে জেলে যাওয়ার পথে কুন্তলকে প্রশ্ন করা হয়, এই দুর্নীতিতে আর কারা কারা যুক্ত? তিনি বলেন, ‘ইডির কাছে আছে। সময় এলে আপনারা সব জানতে পারবেন।’ শুক্রবার ব্যাঙ্কশাল আদালতের বিশেষ এজলাসে হাজির করা হয় হুগলির ধৃত তৃণমূল যুবনেতা কুন্তলকে। প্রিজন ভ্যান থেকে জেল লক-আপে যাওয়ার মাঝে তাঁকে শান্তনুর মন্তব্য প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে, কুন্তল বলেন, ‘এই সব অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্নের উত্তর দেব না।’ দলের বহিষ্কার প্রসঙ্গে কুন্তলের মন্তব্য, ‘দলের সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নেব’।
এ দিন আদালতে কুন্তলের বিরুদ্ধে ইডির দাবি ছিল, দু’টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রায় সাড়ে ছ’কোটি টাকার লেনদেনের হিসেব পাওয়া গিয়েছে। সেই টাকা নগদে জোগাড় করে ব্যাঙ্কে রাখেন বলে জেরায় স্বীকার করলেও টাকার উৎস নিয়ে অবশ্য কুন্তল মুখ খুলতে চাননি বলেই কেন্দ্রীয় সংস্থার দাবি। আদালতের সামনে না বললেও ইডি সূত্রে আরও দাবি, কুন্তলের মোট ১০টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। সেখানে সব মিলিয়ে লেনদেন কোটি ছাড়িয়েছে।
এমনকী শান্তনুরও নামে-বেনামে প্রায় ৩০টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের খোঁজ মিলেছে। যেখানে দেড় কোটি টাকার লেনদেনের খোঁজ মিলেছে। এই টাকা কোথা থেকে, কী ভাবে এলো তার খোঁজ চালাচ্ছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। তবে ইডি সূত্রের দাবি, শান্তনুর ২৫টি এবং কুন্তলের মোট ১০টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট মিলিয়ে প্রায় ৩৫টি অ্যাকাউন্ট ইতিমধ্যেই ফ্রিজ় করা হয়েছে। শান্তনু যাঁদের নাম জেরায় জানিয়েছেন, তাঁদের তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। ইডির এক আধিকারিকের কথায়, ‘এঁদের নির্দেশেই শান্তনু কোথায় কোথায় টাকা পাঠাবেন, তা ঠিক করা হতো।
এমনকী যে বড় নেতার নাম আমরা পাচ্ছি তিনি মূলত নগদেই টাকা নিয়েছেন শান্তনুর থেকে।’ ফলে সেই নগদ টাকার ‘মানি ট্রেল’ কী ভাবে প্রমাণিত হবে, কোথা থেকে কোথায় টাকা গিয়েছে এ ব্যাপারে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। এ দিন কুন্তল দাবি করেন, ধৃত তাপস মণ্ডলের অফিসে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা এই দুর্নীতিতে যুক্ত। তাই সংবাদমাধ্যমকে তাপসের অফিসের ব্যাপারে খোঁজ নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।