আমের জন্য আর মালদা, মুর্শিবাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় না বাঁকুড়ার মানুষকে। আম উৎপাদনে এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ রুখা-শুখা লাল মাটির এই জেলা। বরং স্বাদে-গন্ধে মালদা, মুর্শিদাবাদের আমকে পিছনে ফেলে এখন সামনের সারিতে এই জেলার আম। কলকাতা-দিল্লির আম মেলায় পরপর কয়েক বছর শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা পেয়েছে বাঁকুড়ার ‘আম্রপালি’।
গত কয়েক বছর ধরে দেশের বিভিন্ন অংশে পৌঁছে যাচ্ছে এখানকার উৎপাদিত আম। বর্তমানে বাঁকুড়া-১, রানিবাঁধ, রাইপুর, সিমলাপাল, হীড়বাঁধ, ছাতনা, বিষ্ণুপুর ও শালতোড়ার পতিত জমি আর কংসাবতী সেচ খালের দু’পাশে লাগানো গাছ থেকে উৎপাদিত আম্রপালি ‘সুপারহিট’ বাজারে। আম্রপালি ছাড়াও হিমসাগর, চৌসা, মল্লিকা, ল্যাংড়া এখন বঙ্গের আম বাজারে যথেষ্ট সমাদৃত।
জেলা উদ্যান পালন দফতর সূত্রে খবর, বিকল্প কৃষি ব্যবস্থার কথা ভাবতে গিয়ে ২০০৯-১০ সালে শুস্ক লাল মাটির এই জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে ‘আম্রপালি’ আমের চাষ শুরু হয়। তারপর ধীরে ধীরে সেই সংখ্যা বাড়তে থাকে। বর্তমানে এই জেলায় সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে আমের বাগান রয়েছে।
চলতি বছরে ২২০০ হেক্টর জমিতে আম্রপালি ও ২০০ হেক্টর জমিতে হিমসাগর, মল্লিকা, ল্যাংড়া জাতের আম চাষ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে বেশি চাষ হয়েছে। চলতি বছরে বাগানগুলিতে প্রচুর পরিমাণে গাছে মুকুল এসেছে। সব ঠিকঠাক থাকলে দেড় লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হতে চলেছে এ বছর।
মাচাতোড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের জামকানালী গ্রামের গোরাচাঁদ সিংহ মহাপাত্রের। তিনি বলেন, “আম চাষের সেরকম খরচ নেই, প্রকৃতি সহায় থাকলে যথেষ্ট লাভজনক এই চাষ। চলতি বছরে অতিরিক্ত কুয়াশার কারণে কিছু সমস্যা হচ্ছে।” তবে ফলন ভালো হবেই বলে জানান তিনি।
উদ্যান পালন দফতরের ফিল্ড অফিসার সঞ্জয় সেনগুপ্ত বলেন, “আম উৎপাদনে বাঁকুড়া জেলা দেশের মধ্যে প্রথম হবে, এই ভাবনা আমাদের কল্পনার মধ্যেও ছিলনা। কিন্তু বর্তমানে সেই অসম্ভব সম্ভব হয়েছে।”
একাধিকবার দিল্লির আম মেলায় বাঁকুড়ার আম প্রথম স্থান অধিকার করেছে। এবারও দিল্লি, কলকাতার পাশাপাশি উত্তরবঙ্গ আম মেলাতেও যোগদানের আমন্ত্রণ এসেছে। একই সঙ্গে জেলা, রাজ্য, প্রতিবেশী রাজ্য গুলির চাহিদা মিটিয়ে জাপানেও আম রপ্তানির বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে বলে তিনি জানান।