গত সাত দিনে রাজ্যে করোনা আক্রান্তদের ৬৫ শতাংশেরই বয়স ২৫ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে। ২২ শতাংশের বয়স ৪৫ থেকে ৬০-এর মধ্যে। বাকিরা ষাটোর্ধ্ব বলে স্বাস্থ্যভবন সূত্রে খবর। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার প্রকোপ কমতেই মাস্ক ছাড়া বাড়ি থেকে বেরোতে শুরু করেছেন সিংহভাগ মানুষ, ভুলেছেন দুরত্ববিধিও।
সে কারণেই ২৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সীদের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। এই বয়সীরাই মূলত কর্মসূত্রে নিত্যদিন ট্রেন, মেট্রো বা ভিড় বাসে যাতায়াত করেন। এ দিকে ওমিক্রনের সাব ভ্যারিয়েন্টের সুবাদে আক্রান্তদের সিংহভাগই উপসর্গহীন বা মৃদু উপসর্গযুক্ত। তাই পথে বেরিয়ে অজান্তেই আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে।
এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে শনিবার নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হার হয়েছে ২.০৪ শতাংশ। আক্রান্তদের মধ্যে ৩ জন পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩ জন বর্ধমান, উত্তর ২৪ পরগনার ২ জন। গত সপ্তাহে কলকাতা এবং উত্তর ২৪ পরগনায় করোনা-রোগীর হদিশ মিললেও এখন রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকেই আক্রান্তদের খবর আসছে।
স্বাস্থ্য-অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগীর বক্তব্য, ‘নতুন করে সংক্রমণ একটু মাথাচাড়া দিতেই অনেকে টেস্ট করাচ্ছেন। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই। আমরা পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছি। যাবতীয় পরিকাঠামো তৈরি। দৈনিক টেস্টের সংখ্যাও বাড়ানো হচ্ছে।’
প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ঢেউয়ের ক্ষেত্রেও ২৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সীদের মধ্যেই করোনার প্রকোপ ছিল বেশি। এ বারও তার পুনরাবৃত্তি দেখা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সতকর্তা অবলম্বনের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, ‘কর্মসূত্রে যাঁরা বাইরে যান, তাঁরা আক্রান্ত হলে বাড়ির অন্য সদস্যরাও তাঁদের মাধ্যমে আক্রান্ত হতে পারেন।
ফলে মাস্ক অবশ্যই পরা উচিত। কারণ, বাড়ির সদস্যদের মধ্যে কারও শারীরিক সমস্যা থাকতে পারে। তাঁর পক্ষে ধাক্কা সামলানো মুশকিল হতে পারে।’ চিকিৎসকদের বক্তব্য, অনেকের ধারণা, টিকা নেওয়া আছে তাই ক্ষতি হবে না। এটাও একেবারেই ভুল। মনে রাখতে হবে, কোনও টিকাই রোগের বিরুদ্ধে একশো শতাংশ সুরক্ষা দেয় না। তা ছাড়া মানুষজনের বড় অংশই বুস্টার ডোজ় নেননি। প্রশাসনের এ বিষয়ে জোর দেওয়া উচিত বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অরুণাভ মজুমদার।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-এর তরফেও করোনার নয়া ইনিংসের মোকাবিলায় বুস্টার ডোজ়েই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ষাটোর্ধ্বদের মধ্যে যাঁরা এখনও বুস্টার ডোজ় নেননি, তাঁদের চিহ্নিত করে টিকা দেওয়ার সুপারিশ করেছে হু। কেননা, ষাটোর্ধ্বরাই বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এর পিছনে অন্যান্য শারীরিক সমস্যাকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য দপ্তরের এক কর্তার আশা, ‘নতুন করে করোনার প্রকোপ বাড়ায় বুস্টার ডোজ় নেওয়ার প্রবণতা বাড়বে। দপ্তরের তরফেও প্রচার চালানো হবে।’