তাঁকেই মৃত দেখিয়ে, এক মহিলা নিজেকে তাঁর একমাত্র কন্যা বলে দাবি করে, ওয়ারিশ সার্টিফিকেট জোগাড় করেন গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে। এর পর তা ভূমি দপ্তরে জমা দিয়ে ওই তৃণমূল নেতার জমি নিজেদের নামে রেকর্ড করিয়ে নেন বলে অভিযোগ। ঘটনায় যে মহিলার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, সেই তামান্না খাতুন আবার তাজ মহম্মদের প্রতিবেশী।
তামান্নার স্বামী আসাদুল হক তৃণমূল কর্মী। অভিযোগ, তাজ মহম্মদের জমির উপর বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেন তামান্নারা। বিষয়টি জানতে পেরে তাজ মহম্মদ প্রশাসনের দ্বারস্থ হন। ঘটনায় পঞ্চায়েত প্রধান ও প্রতারক ওই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন কেশপুরের বিএলআরও নীহাররঞ্জন মণ্ডল।
৬৫ বছরের তাজ মহম্মদ বক্স কেশপুর ব্লকের কেশপুর ১০ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের সরই গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। পেশায় প্রাক্তন বাস শ্রমিক তাজ মহম্মদ আজীবন দক্ষিণপন্থী। প্রথমে কংগ্রেস থাকলেও তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে দলের সক্রিয় কর্মী। বর্তমানে দলের শ্রমিক সংগঠনের ব্লক সভাপতি তিনি। তাজ মহম্মদ বক্সের দুই স্ত্রী ও ৮ সন্তান। তারপরও প্রতিবেশী তামান্নারা কীভাবে এই কাণ্ড ঘটাতে পারলেন, তা ভেবে সকলেই অবাক।
তাজ মহম্মদ বলেন, ‘ঘটনা জানার পর আমি নিজেই অবাক। তামান্না খাতুন ও তাঁর স্বামী শেখ আসাদুর হক আমার প্রতিবেশী। রক্তের সম্পর্কে এরা আমার কেউ নয়। অথচ আমার ওই প্রতিবেশী দম্পতি আমাকে মৃত দেখিয়ে, নিজেদের একমাত্র মেয়ে-জামাই পরিচয় দিয়ে, ভুয়ো সার্টিফিকেট দাখিল করে আমার ১১ ডেসিমেল জমি হাতিয়ে নিয়েছে। বিষয়টি জানার পর বিএলআরও-র কাছে অভিযোগ জানিয়েছি। দলের নেতাদেরও বিষয়টি জানিয়েছি।’
২০২২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পঞ্চায়েত প্রধানের স্বাক্ষরিত এই সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়। কেশপুর ১০ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান চন্দনা ভুঁইয়া বলেন, ‘আমার অজান্তে কীভাবে এমন হলো জানি না। এমন সার্টিফিকেট আমি দিইনি। মনে হচ্ছে, আমার স্বাক্ষর নকল করা হয়েছে। গোটা ঘটনা প্রশাসনকে জানিয়েছি।’
কেশপুরের বিডিও দীপক ঘোষ বলেন, ‘এমন একটি অভিযোগ বিএলআরও-র কাছে জমা পড়েছে। এর পর বিএলআরও পুলিশের কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
কেশপুরের ব্লক ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিক নীহাররঞ্জন মণ্ডল বলেন, ‘এমন একটি অভিযোগ আমার কাছে আসে। তাজ মহম্মদ বক্স জীবিত আছেন। তারপরেও কীভাবে তাঁর নামে এমন শংসাপত্র ইস্যু করা হলো এবং একজন কীভাবে নিজেকে তাঁর মেয়ে পরিচয় দিয়ে ওয়ারিশন সার্টিফিকেট জমা দিয়ে সম্পত্তি নিজের নামে রেকর্ড করার আবেদন করল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রশাসনিক নিয়ম অনুযায়ী, আমি পুলিশের কাছে একটি অভিযোগ জানিয়েছি।’
কেশপুর ব্লক তৃণমূলের সভাপতি প্রদ্যুত পাঁজা বলেন, ‘এমন একটি ঘটনার কথা শুনেই আমরা প্রশাসনের কাছে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করার আবেদন করেছি। পঞ্চায়েত প্রধানের এত খোঁজ রাখা সম্ভব নয়। পঞ্চায়েতের প্যাড অফিসের কর্মীদের কাছেও থাকে। কারা কীভাবে এটা করল, তা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’ অভিযুক্ত তামান্না খাতুন ও শেখ আসাদুল হকের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।