এদিকে, নদিয়ার মাজদিয়ার টুঙ্গী গাজনতলায় ৩০০ বছরের প্রাচীন বুড়ো শিব রয়েছে। আর এই বুড়ো শিবকে ঘিরেই শুরু হয় এই গাজন উৎসব। সে এক অদ্ভুত কাহিনী। পরিবার সূত্রে জানা যায়, আনুমানিক প্রায় ২৬৩ বছর আগে বর্তমান সিতাংশু বিশ্বাসদের সপ্তম পুরুষ ছিল। তাঁদেরই বংশের একজন কাশি বিশ্বনাথের গঙ্গায় স্নান করতে গিয়ে এই শিবলিঙ্গটি পান। সেখান থেকে শিবলিঙ্গটি নিয়ে এসে বাড়িতে একটি বাক্সের মধ্যে রেখে দেন। এক সময় মাজদিয়া টুঙ্গীতে গাজনে পুজো হত পাটবনে।
সেই সময়ে যখন সন্ন্যাসীরা ঢাক বাজাতে বাজাতে তার বাড়ির সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন সেই সময় বাক্সের মধ্যে থাকা ওই শিবলিঙ্গটি নৃত্য করতে শুরু করে। ওই বাক্সে রাখা বিভিন্ন বাসনপত্র শিবলিঙ্গের নৃত্যের ফলে ভেঙে তছনছ হয়ে যায়। তখন সেই বাড়ির পুরুষেরা বাক্স খুলে দেখেন কিছুই নেই।
ঠিক ওই দিন রাতেই স্বপ্নাদেশ পান একজন। স্বপ্নে শিব ঠাকুর বলেন, তিনি কাশি থেকে এই স্থানে এসেছেন। এবার থেকে গাজনে যাতে তার পুজো হয় সেই ব্যবস্থা করতে বলেন। এবং পাশাপাশি তার নিত্য সেবার ব্যবস্থাও করতে বলেন। সেই সময় ওই এলাকায় রাজত্ব ছিল রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের।
সেই থেকেই টুঙ্গী গাজনের শিবের নিত্যপুজো হয়। এই চৈত্র মাসের ২৭ তারিখ তিনি গাজনের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে রওনা হন। ২৯ তারিখে হয় নীলের পুজো ৷ এদিন বিশেষ সন্ন্যাসীদের কাটা খেলা, খাড়া খেলা, এবং আগুনে ফুল খেলা হয়। ওই পরিবারের সদস্য সিতাংশু বিশ্বাস বলেন, “আনুমানিক সেই ২৬৩ বছর আগে থেকেই এই গাজন উৎসব চলছে এই এলাকায়।
বর্তমানে এই গাজনের কথা দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়েছে। নদিয়া জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই লোকজন আসেন এই গাজন দেখতে”। হিন্দু সমাজের ঐতিহ্য অনুযায়ী চৈত্র মাস হল শিব ও পার্বতীর বিয়ের মাস। এই মাসেই তাই গাজনের ধুম। গাজনের শেষ দিনের অনুষ্ঠান হল চড়ক। আর এই চড়ক এক শ্রেণির হিন্দুদের অন্যতম প্রধান উৎসব।