তাপমাত্রার পারদ ৪০ টপকেছে। এপ্রিলের মাঝামাঝিতেও কালবৈশাখীর দেখা নেই। মাঠ পুরো তেতে রয়েছে। দশটার পর মাঠে কাজ করতে পারছেন না চাষিরা। সকাল সকাল কাজ সেরে বিকেলে রোদ পড়ার পর মাঠে যাচ্ছেন। আর দিনভর চড়া রোদ পেয়ে ফসল নষ্ট হতে শুরু করেছে। যা দেখে মাথায় হাত ভাঙড়ের চাষিদের। রোদের তাপে মাঠেই শুকিয়ে মরছে উচ্ছে, ঝিঙে, পটল, লাউ, কুমড়ো, পুঁইশাক।
ভাঙড়ের ভগবানপুর, শানপুকুর, পোলেরহাট, ভোগালি, নারায়ণপুর, শাঁকশহরের উর্বর জমিতে ফি বছর ব্যাপক সব্জিচাষ হয়। ভাঙড়ের এই সব্জি-ই যায় কলকাতা, সল্টলেকের বিভিন্ন বাজারে। এখন ভাঙড়ের সব্জি রোদে শুকিয়ে গেলে বাজারেও তার প্রভাব পড়বে। পড়তে শুরুও করেছে। অগ্নিমূল্য হয়ে উঠতে পারে সব্জির বাজার। চাষিরা জানাচ্ছেন, অতিরিক্ত গরমে লঙ্কা, পটল, লাউ, ঝিঙে, উচ্ছে সব গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। জল সেচ করেও পার পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ কৃত্রিম জল সেচে গাছ বাঁচলেও ফলন ঠিকঠাক হচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন কৃষকরা।
ভাঙড় ২ ব্লকের সাতুলিয়া গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা গেল প্রখর রোদে ফসল বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছেন আলম মোল্লা, মালেক মোল্লারা। মালেক মোল্লা বললেন, ‘ছ’কাঠা জমিতে পটল চাষ করেছিলাম। যেখানে কাঠা প্রতি এক কুইন্টাল পটল ওঠার কথা সেখানে উঠছে মাত্র ৪০ কেজি। প্রকৃতির রোষানালে ফুল শুকিয়ে যাচ্ছে, ফলের বৃদ্ধি হচ্ছে না।’ আলম মোল্লার বক্তব্য, ‘রমজান মাস চলছে। এই সময় বাজারে শশার খুব চাহিদা থাকে। কিন্তু খেতে মাল নেই। গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে, ফল লাল হয়ে যাচ্ছে। নিজে রোজা রেখেও দু’বেলা মাঠে খাটছি। কিন্তু পয়সার মুখ দেখছি কই?’
ভাঙড় ছাড়াও রাজারহাট, ক্যানিংয়ের অনেক চাষি এই সময় ফুলকপি, বাঁধাকপি, ধনেপাতা, ক্যাপসিক্যামের চাষ করেন। তাঁদের অবস্থাও তথৈবচ। সব্জি বাঁচাবেন কী করে তা ভেবেই ঘুম উড়েছে।
এই সময় আম, জাম, লিচু, লেবু, কাঁঠাল বেঁচে দু’পয়সা রোজগার করেন ফলচাষিরা। এ বার আমের ফলন খুবই ভালো। কিন্তু বৃষ্টির দেখা নেই বলে চিন্তায় আমচাষিরা। ভাঙড়ের এক আমচাষি সুশান্ত পাল বললেন, ‘আমের ফলন দুর্দান্ত হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় আমের বোঁটা শুকিয়ে মাটিতে ঝরে পড়ছে। জলের অভাবে লিচু, কাঁঠাল, জাম, সবেদা কিছুই ঠিক মতো বাড়ছে না।’
সুরজিত মণ্ডল নামে ভাঙড়ের এক চাষির কথায়, ‘এই সময় ফি বছর কালবৈশাখীর দেখা মেলে। এই বছর সে সবের বালাই নেই। বাজার থেকে গাঁদা ফুলের চারা কিনে মাটিতে রোপণ করেছিলাম। গরমে সেই গাঁদা মরে গিয়েছে।’ বৃষ্টি না হওয়ায় রাজারহাট ব্লকেও সমস্যায় পড়েছেন নার্সারি মালিকরা। রাজারহাটের চাঁদপুর অঞ্চলে শতাধিক নার্সারিতে গোলাপ-সহ অন্যান্য ফুলের গাছ, মেক্সিকান ঘাস শুকিয়ে যাচ্ছে।