রূপক মজুমদার, বর্ধমান :
রৌদ্র প্রখরতর, পথ সুদীর্ঘ, আমায় জল দাও। অস্ফুট এই আর্তি যেন কানে বেজেছে বর্ধমানের ট্র্যাফিক ওসি চিন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কাঠফাটা রোদ্দুর মাথায় নিয়ে কায়িক পরিশ্রম করা মানুষগুলির পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। গত ১২ দিন ধরে ঘর্মাক্ত রিকশাচালক, টোটোচালকদের হাতে তিনি তুলে দিচ্ছেন জলের বোতল আর তরমুজ।

ধারাবাহিক তাপপ্রবাহে পুড়ছে দক্ষিণবঙ্গ। তবু ঘরে বসে থাকলে চলে না। রোজগারের আশায় পথে নামতেই হচ্ছে মানুষকে। বৃহস্পতিবারও বর্ধমান শহরের পারদ ছুঁয়েছে ৪২.৫ ডিগ্রির ঘর। মাথা, মুখ কাপড়ে মুড়ে বাইরে বেরোলেও ছাওয়া দেখে বিশ্রাম নিচ্ছেন পথচলতি মানুষ।

Traffic Police : তীব্র গরমেই চলছে ডিউটি, ট্রাফিক পুলিশদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে গ্লুকোজ-জলের বোতল
এই দহন-জ্বালায় সবচেয়ে কষ্টে রয়েছেন শহরের রিকশাচালকরা। যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে খানিক জিরিয়ে নিচ্ছেন তাঁরা। ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই মানুষগুলিরই পাশে দাঁড়িয়েছেন বীরহাটা সাব-পোস্টের ট্র্যাফিকের ওসি।

চিন্ময় বলেন, “দিন ১২ আগে বড়নীলপুর মোড়ের কাছে এক রিকশাচালককে দুপুরে আচমকা পড়ে যেতে দেখেছিলাম। স্থানীয়দের সাহায্য নিয়ে তাঁকে তুলে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাই। উনি স্যালাইন দিতে বলেন। ওই ডাক্তারবাবু বলেছিলেন, শরীরে জলের ঘাটতি থেকেই এটা হয়েছে। পরে তিনি সুস্থ হয়েছেন বলে খবর পেয়েছি।”

West Bengal Trending News: সাদা চুল পরলেই মাথা-শরীর ‘ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল’? আজবকাণ্ড ঝাড়গ্রামে
জেলা পুলিশ থেকে জলসত্র করার জন্য বলা হয়েছে জানিয়ে চিন্ময় বলেন, “এসপি স্যারকে জানিয়েই এটা করছি। একেবারে নিজের খরচে। দু’দিন হলো একটা করে ওআরএস-এর প্যাকেটও দিচ্ছি। আর আমি তরমুজ কেটে নিয়ে যাই না। যেখানে দাঁড়াই, সেখানেই কেটে সবাইকে ভাগ করে দিই।”

প্রতিদিন সকালে ডিউটিতে আসার আগে পাইকারি ফলের বাজার থেকে তরমুজ কেনেন ট্র্যাফিকের এই ওসি। বেলা বাড়লে সিভিক ভলান্টিয়ারদের সঙ্গে নিয়ে তিনি বেরিয়ে পড়েন। প্রতিদিন উল্লাস মোড় থেকে বীরহাটা মোড় অবধি রিকশা, টোটোচালকদের হাতে তুলে দেন ফল আর জলের বোতল।

শহরে সেন্ট জেভিয়ার্স রোডের বাসিন্দা রিকশাচালক স্বপন বিশ্বাস বলেন, “আমি ওঁর দেওয়া তরমুজ আর জলের বোতল পেয়েছি। বয়স্কদের বেশি করে দিতে দেখেছি। কাটা তরমুজ তখনই খেয়ে নেওয়ার জন্য বলেন স্যার। কেউ তো আমাদের জন্য ভাবছে।”

Traffic Police : ORS থেকে সানগ্লাস, তীব্র দাবদাহ থেকে বাঁচতে ট্রাফিক পুলিশকে বিশেষ কিট উপহার
এদিনও বীরহাটা এলাকায় রিকশা, টোটোচালকদের হাতে চিন্ময় তুলে দেন তরমুজের ফালি,জলের বোতল আর ওআরএস-এর প্যাকেট। জল, তরমুজ পেয়ে মানিক সাহা নামে এক রিকশাচালক বলেন, “আমাদের কষ্টের কথা কেউ ভাবে দেখে ভালো লাগল। ঈশ্বর ওঁর মঙ্গল করুন। উনি যেন সুস্থ থাকেন।”



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version