পাশাপাশি, জেলবন্দি প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও শুনানি শেষে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে দায় চাপালেন স্বশাসিত সংস্থা স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি-র উপরে। কোর্টে এ দিন অভিযুক্তদের আইনজীবীদের প্রশ্ন, ‘আদালতের সামনে কোনও তথ্যপ্রমাণ হাজির না করে আর কতদিন জেলে আটকে রাখা হবে এঁদের?’
মামলার শুরুতেই এ দিন সিবিআই তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন পার্থর আইনজীবী বিপ্লব গোস্বামী। তিনি বলেন, ‘প্রভাবশালী হিসেবে পার্থবাবু তদন্তের প্রমাণ নষ্ট করতে পারেন, এমন আশঙ্কা গত আট মাস ধরে করে আসছে সিবিআই। এই ধারণার বশে শুধু পার্থবাবু কেন, পৃথিবীর কোনও বন্দিরই কোনও দিন জামিন হবে না!’
বিপ্লবের প্রশ্ন, ‘গত আট মাসে দু’টি চার্জশিট দিয়েছে সিবিআই। তাতে মোট ২৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত কতজনকে অ্যারেস্ট করা হয়েছে? ৫-৬ জনের বেশি নয়। তা হলে সিবিআইয়ের আশঙ্কার কারণে আমার মক্কেলকে কেন মাসের পর মাস জেলে থাকতে হবে?’
বিচারকও একটা সময়ে সিবিআইকে বলেন, ‘যাঁরা বাইরে আছেন, আর যাঁরা ভিতরে আছেন, তাঁদের প্রত্যেকের ভূমিকা আপনারা খতিয়ে দেখুন। আরও যাঁরা আছেন, তাঁদের এ বার নিয়ে আসুন আদালতে।’ এ দিন শুনানি শেষে পার্থ দাবি করেন, ‘এসএসসি একটি স্বশাসিত সংস্থা। সেখানে মন্ত্রী হিসেবে আমার কোনও ভূমিকা ছিল না।
বোর্ড (শিক্ষা পর্ষদ) নিজের মতো কাজ করে। তাতে মন্ত্রী হস্তক্ষেপ করে না।’ যদিও পার্থ সম্পর্কেই তাঁর আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন বিচারক। বলেন, ‘যদি আপনার মক্কেলের মন্ত্রিত্বের সময়ে এই প্রশ্নগুলো ওঠে, তা হলে তো তাঁর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাটা স্বাভাবিক।’ পার্থর বিরুদ্ধে বলতে উঠে সিবিআইয়ের আইনজীবী ডিএন পাণ্ডে বলেন, ‘স্যর, এই দুর্নীতির শিকড় অনেক গভীরে রয়েছে।
প্রত্যেকের নানা রকম ভূমিকা ছিল। কেউ টাকা তুলেছেন, কেউ সেই টাকা পৌঁছে দিয়েছেন। কেউ সুপারিশ করেছেন। কেউ আবার অযোগ্যদের চাকরির অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিয়েছেন।’ এরপর সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, ‘কেস ডায়েরিতে দু’জন সাক্ষীর বয়ান পড়ে দেখুন হুজুর। তা হলেই বুঝতে পারবেন দুর্নীতির জাল কতটা গভীর ছিল।’
যদিও অভিযুক্তদের আইনজীবীরা এতে থামেননি। কল্যাণময়, সুবীরেশ, চন্দন মণ্ডল-সহ অনেকের আইনজীবীই এ দিন সিবিআইকে চেপে ধরেন। চন্দনের (সৎ রঞ্জন) আইনজীবী দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য বলেন, ‘স্যর, আমাদের মক্কেলের বিরুদ্ধে সিবিআই কোন তথ্যপ্রমাণ সামনে আনছে, ট্রায়াল শুরু না হওয়ায় আমরা তা জানতেই পারছি না।
প্রতিদিন ওরা আপনাকে কেবল কেস ডায়েরি দেখাচ্ছে। আমাদের দেখাচ্ছে না। তার সত্য-মিথ্যে আমরা যাচাই করতে পারছি না। এমনকী, চার্জশিটের কপিও আমরা পাচ্ছি না। তা হলে আমরা লড়াইটা করব কী ভাবে?’ বিচারক বলেন, ‘আইন অনুযায়ী এর বাইরে আমি যেতে পারব না। প্রয়োজন মনে করলে আপনারা উচ্চ আদালতে যেতে পারেন।’ সব পক্ষের বক্তব্য শুনে পার্থ-সহ সাতজনকে আগামী ৮ মে পর্যন্ত জেল হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত।